somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিমলা-মানালির স্বপ্নিল পথে, অসীম মুগ্ধতায়.........(ভ্রমণ গল্প)

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিল্লী থেকে অনেক দেরি হয়েছিল জীপ ছাড়তে, রুট পারমিট সংক্রান্ত কালক্ষেপণে, চণ্ডীগড় ছাড়িয়ে হিমালয়ান হাইওয়েতে পৌছাতে, পৌছাতে সন্ধার আঁধার চারিদিকে...... চারিদিকে সুন্দরী পাহাড়দের মন ব্যকুলতার অপেক্ষা! মন একটু খারাপই হল, প্রেয়সীদের সঠিক সঙ্গটা পাবনা বলে... কিন্তু আমরা কি জানতাম, যে আমাদের জন্য অপার বিস্ময় নিয়ে অপেক্ষা করছে পাহাড়ি চাঁদ, কোটি-কোটি আলোকবর্তিকা! পাহাড়ের গায়ে-গায়ে! এ এক অপার আনন্দ, বিষম বিস্ময়, মোহাচ্ছন্ন মন, ব্যাকুল হৃদয়ের সকল সুখের পসরা সাজানো সাঁজ!

হ্যাঁ তাই, কারো যদি রাতে বাই রোডে সিমলা যাবার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে সে বা তারা মাত্রই জানেন, সে মহিমা, কেমন মহাচ্ছন্নতায় মাখা! সবাই বেজায় খুশি, আনন্দে ডগমগ, এই পার্থিবতায়, অপার্থিব সৌন্দর্য পেয়ে...। এক-একটা পাহাড়ের বাঁকে, এক-এক রকম আলোকছটা, এক-এক উচ্চতায়, এক-এক রঙের বর্ণিলতা! কাছের পাহাড়ে, ঝলমলে আলো আর দূর পাহাড়ে রাতের রংধনু!! এই গল্পটা শুধুই মুগ্ধতার, নেই এক বালুকণা খেদ।

মুগ্ধতায়, মুগ্ধতায় মোহাচ্ছন্ন অবস্থায় আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের তিন বছরের লালিত স্বপ্নের সিমলায়! সবাই ভীষণ উত্তেজিত আনন্দের বেদনায়! দারুণ উচ্ছ্বসিত সবার স্বপ্নের নীলিমায়, যে কারনে -৫ ঠাণ্ডায়ও কারো কোন কষ্ট বা কাতরতা নেই! রাতে দারুণ একটা ডিনার শেষে ঘুম......

ভোঁর-ভোঁর ভেঙে গেল ঘুম, এবার বিস্ময় আরও সীমাহীন...... যা রাতে বুঝতেই পারিনি কুয়াশায়-মেঘে আর বর্ণিল আলোকছটায়! আমরা একটি মাঝারি পাহাড়ের ঠিক চুড়ায়, যার নিচে এক অসাধারণ মেঘময়, ধোঁয়াওঠা লেক! আর চারপাশটা পাহাড় দিয়ে ঘেরা! বড়-বড় পাহাড়, ওপারে কি আছে বা নেই কিছুই দেখা বা বোঝা যায়না! শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলেই দেখা মেলে মাথার সিঁথির মত আঁকাবাঁকা মসৃণ পীচ ঢালা পথের! যা প্রতিটি পাহাড়ের গায়ে-গায়ে লেপটে আছে, পাহাড়কে জড়িয়ে ধরেছে পরম আদর ও মমতায়! যেন একজন ছাড়া অন্যজন অবলম্বনহীন, অসাড় ও অবোধ!

সেসব মুগ্ধতাকে ছাড়িয়েও যে মুগ্ধতা আমাদেরকে-ই অসাড় করেছিল তা ছিল সিমলা থেকে মানালি যাবার রাস্তা, শুধু রাস্তাটাই!

মানালি যাওয়ার সকাল...... আমাদের কেউ একজন ভেবেছিল সিমলা থেকে মানালি ৮০ কিমি বা এর আশেপাশে, আমরা সেটাই ধরে নিয়েছিলাম! যদিও রুট প্ল্যান করাই ছিল, তবুও অতি আনন্দে মনে ছিলনা! যাই হোক, সবাই গাড়িতে উঠে বসলাম, ভাবলাম, ৮০ কিমি? কতক্ষণই বা লাগবে, এই ২ বা ২:৩০ ঘণ্টা! তারপর সারাদিন মানালির বরফে শুয়ে-বসে কাটাব! ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলাম, কত সময় লাগবে? উনি বললেন ৬-৭ ঘণ্টা! কেন? প্রায় ২৫০ কিমি পথ!!!

সবাই বেশ অবাক এবং খুশি, কিছুটা বিস্মিতও আমাদের চিন্তা ও বাস্তবতার বিস্তর ব্যাবধান দেখে।

শুরু হল এক স্বপ্ন রাস্তায়, এক স্বপ্নিল যাত্রা, যেখানে আনন্দ, অভিভূত হওয়া, প্রকৃতির বিস্ময় পাহাড়, তাদের এক-এক সময় এক-এক রূপের ঝলক আর রাস্তার মসৃণতায় আমাদের মোহাচ্ছন্নতা! আকাশ এতো নীল! এমন, এর আগে কখনও দেখিনি, নীলের মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে যে কারর......পাহাড়ের এত-এত বিচিত্রতা আগে কখন চোখে পড়েনি, পাহাড়ি ঢলের এমন বীভৎস সুন্দর! রূপ? কল্পনাতেও আসেনি কখনও!

সবুজ যে, এতোটাই সবুজ, না দেখলে বোঝানো মুশকিল, এমন আঁকাবাঁকা, সর্পিল কিন্তু এতটুকু খাঁদ বা উচু-নিচু নেই মখমলের মত মসৃণ রাস্তা! যেখানে সারাদিনেও একবারের জন্যও এতটুকু ঝাকি লাগেনি! হাইওয়ে... পাহাড়ের মাঝে? কল্পনাতীত! এমন একটা মিনিট পর্যন্ত পাইনি যে কোন বাঁক বা উত্থান-পতন নেই! একবার ডানে তো একবার বায়ে, এই উঁচুতে উঠছে তো এই নিচে নামছে!

আর বিলাসপুর... সুন্দরনগরে যেখানে খাওয়া-দাওয়া করেছি... সেতো পার্থিবতা পেরিয়ে! উঁচু পাহাড়ের খাঁদে অবস্থিত ধাবা, নিচে বিশাল বিয়াস-প্রমত্ত-পরাক্রমশালী-প্রখর-প্রাচুর্যতায় ও পূর্ণতায়! অন্য পাশে আবার পাহাড়, এবার বরফে মোড়া! পাইনে সুশোভিত, আপেলের পত্রহীন বৃক্ষের ব্যাঞ্জন! ছোট-ছোট এক-একটা কটেজ যেন জোড়া চড়ুইয়ের, অবসরের সীমাহীন আবেগের আবাস! যা শুধু দেখে-থেকে- ছুঁয়েই উপভোগ করার জন্য। লিখে বা বলে বর্ণনা করার সাধ্য-সীমার অনেক-অনেক বাইরের! আর আমার মত পাগুলে ভ্রমণ বিলাসীর! সল্প বোধের বর্ণনার অসাধ্য......

এভাবে...... আবেগে-আনন্দে-আশ্চর্যের বিহ্বলতায় ভেসে-ভেসে স্বপ্ন পথের শেষে আরও একটা স্বপ্নের স্বপ্নিল শহর, মানালির কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম।

জীবনে এই প্রথম সবাই সমস্বরে, সত্যি কারে ভাবেই, মনের আকুল আবেগ দিয়ে গেয়ে উঠেছিলাম...............

এই পথ কেন যে শেষ হয়.........

হে... সিমলা-মানালি তোমরা বলনা............

যদি বাংলাদেশও, সিমলা-মানালির মত হয়!

তবে কেমন হত কেউ বলনা..................

বসে, বসে দিনগোনা, মিথ্যের জালবোনা............

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×