somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুম দ্বীপের নির্ঘণ্ট পাঁচঃ নিঝুম দ্বীপের, নিঝুম অরণ্যে...... (সুখের সমাহার)

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলের জলে হাত-পা ধুয়ে কাঁদা মুক্ত হলাম সবাই। এইবার নিঝুম পথের, নিঝুম অরন্যের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা এক ঢালাই করা সর্পিল নদ যেন! নিঝুম দ্বীপের মোহময় রাস্তার কথা বলছি! দুই পাশে প্রায় পাতা ঝরে যাওয়া হালকা সবুজের আচ্ছাদন, ম্যানগ্রাফের জেগে থাকা শ্বাসমূল, আর চিরন্তন জেগে থাকা অরন্যের অভিনন্দন।

মাঝে-মাঝে এঁকে-বেঁকে চলা সর্পিল খাল, পাখির কিচিরমিচির, ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনি, ধেয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস, যেন জলরঙ দিয়ে আঁকা প্রকৃতির ব্যঞ্জনা...! সব কিছু পিছনে ফেলে, আমরা ছুটছি বাইকের কোলে করে, গাঙচিলের মত উড়ে-উড়ে! ১০ মিনিটেই বারো কিলো! সাথে ছিল উড়ন্ত সেলফি! স্বপ্ন পুরণের উন্মাদনা...। বাইক একদম অবকাশের আঙিনায়...! আমরা সবাই দোতালার সিঁড়ি বেঁয়ে, একতলায়...! ঝড় জলোচ্ছ্বাস প্রবণ এলাকাতে দোতালাই, প্রাকৃতিক ভাবে একতালা হয়ে যায়! এটাই নিয়ম! স্বাভাবিক। আপনি আছেন দোতালায়... কিন্তু একতালায়...!! বুঝতে হলে পরখ করতে হবে, গিয়ে-দেখে-থেকে- উপভোগ করে, সেও এক মজা, এক বিনোদন...।

ব্যাগ রেখে বের হলাম বীচে যাব বলে, হাঁটছি গ্রামের চিরাচরিত মেঠো পথ ধরে একপাশে সারি-সারি খেজুর গাছ, একপাশে ছোট্ট একটি খাল শুকনো, ওর বড় পানির তেষ্টা, জোয়ারের হাহাকার! নাম না জানা বুনো ফুল, কাঁটা জড়ানো লতা, মাঝে-মাঝে নারকেল গাছের ছায়া, কাঁচা মাটির ধুলো ওড়া পথ, স্যান্ডেল খুলে গলায় ঝুলালাম...! গামছায় বেঁধে! দু-পায়ে ধুলো মাখাবো বলে...!

ইস কতদিন... কতদিন পর যে পায়ে সত্যি কারের বিশুদ্ধ ধুলো লাগালাম, দারুণ শিহরণ! সত্যি-ই শিহরণ! ইচ্ছে করে ওড়াই ধুলা! সবাই মিলে ধুলো মাখামাখির নির্মল কৈশোরে যেন ফিরে গেলাম! আরও কিছুদূর হেটে গিয়ে, এক ঝোপের আড়ালে, গাছের ছায়ায়, মিহি বাতাসে, শরীর জুড়ানো! শুয়ে-বসে-গড়িয়ে প্রকৃতির বিশুদ্ধ আবেশে।

বেশ দূরে ধু-ধু বালু চরে, মরুভুমির মাঝখানে! চোখে পড়লো, একা নিঃসঙ্গ পাতা বা কোনো সবুজহীন এক বৃক্ষর আহ্বান! ওর কাছে গিয়ে ওকে সঙ্গ দেবার আকুতি আর আর্তনাদ! সে এক বেদনার গল্প! অন্য গল্পে, অন্য দিনে... এখানে শুধুই কোমলতা!

ফিরে এলাম আবার। আমাদের ডেরায়। এবার ছায়া ঘেরা পথে, এখন ভাটার টান, বীচের প্রান নেই! বীচ এখন বীজে পরিণত, ওতে বৃক্ষ মানে বীচ হতে জোয়ারের প্রয়োজন। তাই ফিরে যাওয়া, আসবো রাতে আবার। বীচ দেখতে...। এখন পেট পুজা আর বিশ্রাম। শেষ দুপুরে শব্দহীন নৌকা নিয়ে, নির্জলা নদী পথে, নেশাতুর হব। নিঝুম অরণ্যে, হরিণীর খোঁজে, গোধূলির নিয়ন আলোতে, নিমজ্জিত হব নির্মোহে......!

বিকেল তিনটে, সবাই নৌকায় উঠে বসলাম। নৌকা চলতে শুরু করলো এঁকেবেঁকে, নির্জন অরন্যের ভিতর দিয়ে আরও অমোঘ নির্জনতার গভীরে! শব্দহীন পথ চলা একেই বলে...! কোনোই শব্দ নেই, নেই এমন কি পানিতে বৈঠার ওঠা-নামার শব্দও! শুধুই পাখিদের কলতান! বাতাসের শো-শো, শেষ চৈত্রের ঝরে পড়া পাতার ক্ষীণ টুপটাপ, গাঙচিলের উড়ে যাওয়া, রাজহাঁসের ডানা ঝাপটানো, আর দূর দিগন্ত জোড়া খোলা মাঠে মহিস পালের ফিরে যাবার মৃদু হাঁকডাক ছাড়া, যার পুরোটাই প্রাকৃতিক! প্রকৃতির সাথে প্রকৃতির যোগাযোগ, এতে কোনই ক্ষতি নেই, কারোই, কখনওই!

বাতাসে জলের খেলা, আকাশে পাখির মেলা, মাঠে-মাঠে সবুজের, দিগন্তে মেঘ-সূর্যের, নদী-খালের মোহনার, জেলেদের জালের, মাঝিদের মাছের আর দূর অরণ্যে সদ্য গজানো পাতার সাথে হরিণের খেলা দেখতে-দেখতে চৌধুরী খালের মোহনায়। এবার নেমে হেটে চলা, পায়ের আওয়াজকে নিঃশব্দ করে! মুখের ভাষাকে বোবা করে, চোখের ইশারায়! স্তব্ধ করে দিয়ে এই নিস্তব্ধতাকে!

কিন্তু ওই যে একটা কথা আছেনা...

“কিসের লেজ যেন... সোজা হয়না কক্ষণও...!” আমাদেরও সেই...!

কথা বলা যাবেনা একটিও... কিন্তু কথায় বলেনা “চোরে না শোনে... ধর্মের কাহিনী...”আমাদেরও তাই...!

ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বন্ধ রাখতে হবে... “গণ্ডার যেন কতদিনে শুনতে বা বুঝতে পারে...? একদম সেই রকম...!

হরিণ দেখতে চাইলে, বসে থাকতে হবে চুপচাপ! “বাঁদরের সামনে কলা ঝুলিয়ে বলছে, বাঁদর তুই শুয়ে থাক...!
এই হল আমাদের অবস্থা!

তারপরও হেটে চলা... সত্যি কারের নিঝুম দ্বীপের, আরও সত্যি কারের নিঝুম অরণ্যের মাথার সিঁথির মত ক্ষীণ পথ ধরে। খুবই ধীরে-ধীরে, হরিণ দেখার বাসনায় হরিণীর সতর্কতা! সবাই হাঁটছে আর খুঁজে ফিরছে কাঙ্ক্ষিত জনকে! হিমেল বাতাস গায়ে মেখে আর ঝরে পড়া শুকনো পাতা মাড়িয়ে এগিয়ে চলা...!

কয়েক মুহূর্ত মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্য দূরে, বেশ দূরে দেখা মিলল, এক ঝাঁক হরিণের! কিসের ক্যামেরা? কিসের ছবি! দেখতেই ব্যাকুল, মনের মাঝে ছবি আঁকার তৃপ্তিতেই আকুল! এক ছুঁটে পালিয়ে গেল, নিমিষেই! অনেক অপেক্ষায়ও আর দেখা মিললনা।
আবার এগিয়ে যাওয়া... সামনে একটি পুকুর আছে, ওইখানে নাকি আসে পানি খেতে! ঝাঁকে-ঝাঁকে, দল বেঁধে! ঠিক আছে তাহলে আর দেরী না করে ওখানেই যাই, চুপচাপ কিন্তু দ্রুত! আবারও এগিয়ে যাওয়া! হরিণের তৃষ্ণার মেটানোর তীর্থে! একটু যেতেই আবারো কয়েকটির মুখ ফিরিয়ে, মুখ লুকানো! যেন লজ্জা পেয়ে পালিয়ে গেল! একটু থেমেই পিছু ফিরে চায়! গাছের আড়াল আর পাতার ফাঁক দিয়ে, যেন সেই আমলের কণে দেখা!

চোখের বালির সেই কথার মতঃ দেখতে দিবনা আমি, আমাকে তোমায়... কিন্তু আমি দেখবো, নিরবে-নিশ্চুপে-একান্তে-দুরথেকে, তোমাকে...! হ্যাঁ তোমাকেই! অসম্ভব সুন্দর এক সীমাহীন আনন্দের আর প্রাপ্তির এক লুকোচুরি খেলা যেন......!

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×