somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুম দ্বীপের নির্ঘণ্ট ছয়ঃ নিঝুম দ্বীপের নিঃসঙ্গ গাছ ও আমি...

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিঝুম দ্বীপ পৌঁছে একতলার, দোতালায় ব্যাগ রেখে বের হলাম বীচ দেখতে... সত্যিকারের গ্রামের, সত্যিকারের মেঠো পথ ধরে, বীচের কাছাকাছি, কিন্তু তখন ভাটা থাকায় সত্যিকারের সমুদ্র বেশ দূরে। অতটা পথ এখন যেতে পারবোনা, তাই কিছু ঝোপঝাড়ের আড়ালে আর নারিকেল গাছের ছায়ার আশ্রয় নিলাম, একটু বিশ্রামের জন্য। ছায়া আর ঝিরঝিরে শীতল বাতাসে শরীর মন সব জুড়িয়ে গেল। হঠাৎ চোখ পড়লো দূরে ধু-ধু বালুচরে, যেন তপ্ত মরুভুমির মাঝে দাড়িয়ে আছে এক, একা বড়ই নিঃসঙ্গ, কোনো পাতা বা সবুজহীন বৃক্ষ। দেখেই মনের ভিতর একটা হাহাকার বয়ে গেল, ওর একাকীত্ত দেখে, যেন শুনতে পেলাম ওর আকুতি ও সঙ্গীর জন্য আর্তনাদ! কোনো কথা না বাড়িয়ে কারো দিকে না তাকিয়ে ছুটলাম ওর কাছে, ওকে একটু সঙ্গ দিতে, ক্ষণিকের জন্য হলেও ওর একাকীত্তের সঙ্গী হতে।

এতো বেশী বালু ছিল যে, পুরো পা দেবে যায়, ওর কাছে পৌছাতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগলো। হাঁয় ও বড়ই একা, ওর চারপাশে বালু আর উপরে তপ্ত রোদ ছাড়া নেই আর কিছুই, কোথাও! সমুদ্রের পানি? সেও বহুদূর। আমাকে দেখে যেন খুশিতে একটু নেচে উঠলো, না যেন বাতাস ওকে নাচিয়ে দিল!

তুমি একা এলে যে? তোমার বন্ধুরা? নাহ, ওরা ছায়া চায়, তোমার তো ছায়া নেই!

আর, তুমি দেখেছো নাকি, আমার বন্ধুদেরও?

হ্যাঁ, আমি সব দেখতে পাই! সব শুনি, সবই বুঝি! শুধুই, আমাকেই কেউ জানেনা, শোনেনা বা বোঝেনা। জানো আমার না অনেক দুঃখ! আমার কোনো সঙ্গী নেই, বন্ধু নেই, কথা বলার কেউ নেই! আমি বড়ই একা!

তুমি এখানে কেন এলে?
তোমাকে দেখে আমার খুব, ছেলেবেলার কথা মনে পরে গেল, তো তাই?

তোমার এতো দুঃখ কেন? তুমি তো সমুদ্রের কাছে থাক, সারাদিন সমুদ্রের সাথে কথা বলবে।

কোথায় সমুদ্র? সেই তো অনেক দূরে, বর্ষা ছাড়া এখানে পানিও আসেনা! কখনো-সখোনো জোয়ার একটু বেশী এলে পানি আসে, তাও সামান্ন সময়ের জন্য, আমার ভালো লাগেনা! আমি চাই একটু বেশী সময় থাকুক।

হুম... সেতো সবাই-ই চায়। বন্ধুকে বা ভালোলাগার ক্ষণকে বেশী করে ধরে রাখতে বা কাছে পেতে। কিন্তু তোমার কি কখনো-ই ভালো বা সুখের সময় আসেনা? হ্যাঁ আসে, যখন গাছে কচি পাতা ধরে, জানোতো তখন আমি সবচেয়ে সুন্দর! এরপর যখন পাতা ধীরে-ধীরে গাড় সবুজ হয়, পাখি বাসা বাঁধে, তখন আমি ভীষণ খুশী থাকি, মনে হয়... এই দিন গুলো যদি অনন্তকালের জন্য স্থির হয়ে যেত! কি সুন্দর-ই না হতো। পাখিদের কিচিরমিচির, গুনগুন, কলকাকলি, বাতাসে পাতার নাচন, কখনও গাংচিল এর উড়ে এসে বসা এসব আমার সবচেয়ে প্রিয় ও ভালোলাগার সময়, সময় গুলো কাটে দারুণ হাসি-আনন্দে-উচ্ছলতায়...

আর ভরা বর্ষায় মাঝিদের নৌকা বেঁধে রাখা, আমার তলে বসে ওদের কথাবলা, ক্লান্তি দূর করতে ঠেস দিয়ে বসা, কখনো-কখনো গাছের ডালে বসে নিচে জাল ফেলে মাছ ধরা আমার সবচেয়ে অপেক্ষার আর আনন্দের মুহূর্ত! কেন? ওরা যে মানুষ, মানুষের সঙ্গ, কথাবলা, হেটেচলা, গান গাওয়া এসব আমার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত জান! তুমি শুধু একাই এলে, ওরা এলনা? জান, এমনই হয়, অনেককেই দেখি ওই দূরে গাছের ছায়ায় এসে বসে থাকে, কথা বলে, ছবি তোলে, গান গায়, আবার চলে যায়, আমাকে দূরে কেউ দেখেনা, কেউ আসেনা, কেউ বলেনা কথা! আমার যে কি দুঃখ হয়! আমি তো কাউকে বলতে পারিনা, তাই কেউ জানেনা, কেউ বোঝেনা, কেউ আসেনা কাছে, কেউ বলেনা কথা, আমার সাথে!

ঠিক আছে আমি এলাম, কথা বললাম, এবার আমি তোমার ছবি তুলবো, আর তোমার কথা আমার অনেক, অনেক বন্ধুদের জানাবো, দেখবে... এরপর থেকে অনেকেই আসবে তোমার কাছে, কথা বলবে, সময় কাটাবে, ছবি তুলবে, দেখ... এবার তোমার অনেক বন্ধু হবে, তুমি বেশী দিন আর একা থাকবেনা...!

চল এবার তোমার ছবি তুলি। আর তোমার সাথে আমার সেলফি!

সেকি এই আমি একেবারে সাঁজহীন, সবুজহীন, পাতাহীন, এতো সাধারন ছবি তোমার বন্ধুরা দেখবে বল?

হ্যাঁ দেখবে, তবে ভালোলাগবে কিনা জানিনা! আমার কিন্তু তোমাকে এমনই ভালোলাগে, সাধারণ, সাঁজহীন একেবারেই সাদাসিদে...

আমার বিশ্বাস আমার বন্ধুরাও আসবে তোমার নিঃসঙ্গতা দূর করতে, এখন থেকে...!

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×