somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের টুমলিং...... (স্বপ্নের সান্দাকুফু-৬)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টুমলিং, কি সুন্দর মিষ্টি-আদুরে আর আহ্লাদি একটা নাম! অন্তত আমার কাছে তো তাই-ই। প্রথম যখন এই নামটার কথা শুনি, ভেবেছিলাম কোন পাখির বা পাহাড়ি ফুলের নাম। আর এই নামটা প্রথম শুনি মাহমুদ ভাইয়ের সান্দাকুফু অভিযানে। পরে পড়তে গিয়ে জানলাম এটা একটা পাহাড়ি পাড়া বা গ্রামের নাম।

কিন্তু প্রথম কাউকে দেখে যেভাবে ভালোলাগা, ভালোবাসা বা প্রেমে পড়া যায়, ঠিক তেমনি এই প্রথমবার এই নামটি শুনেই ভালোলেগেছিল খুব খুব। আর একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল একদিন এই পাহাড়ি পাড়া বা গ্রামে যাবো, হাটবো-বসবো কিছুটা সময় কাটাবো একান্তে। অনেকটা না দেখে, নাম শুনেই প্রেমে পড়ার মত!

লেখা পড়ে প্রথম ভেবেছিলাম একদম পাহাড়ের আড়ালে, গাছে-গাছে, সবুজ অরণ্যে আচ্ছাদিত একটি যায়গা হবে। মানসপটে তেমনই একটি ছবি আঁকা হয়েছিল টুমলিং এর। আর তাই যখন টংলু থেকে টুমলিং এর পথে পাহাড়ের রিজ লাইনের উপরে বিছানো পাথরের পথ ধরে যাচ্ছিলাম, একপাশে খাড়া পাহাড়, এক পাশে গভীর পাহাড়ি খাদের কিনার ধরে, যার ওপাশে আবার রয়েছে বড়-বড় আরও আরও পাহাড়, আরও দূরে হিমালয়ের পাহাড় সারি। মনে মনে খানিকটা রমাঞ্চিত হচ্ছিলাম কল্পনায় আঁকা টুমলিং এর ছবিটার কথা ভেবে। এখান থেকে টুমলিং মাত্র এক থেকে দেড় কিলো।

একটু একটু করে এগোচ্ছি, আর একটু একটু করে শিহরিত হচ্ছিলাম টুমলিংকে দেখতে পাবো বলে। আর সেই রোমাঞ্চ আরও বেড়ে গিয়েছিল যখন আমাদের নেপালি বন্ধু জানালো আজ আমরা টুমলিং এই রাত্রি যাপন করবো। এটা ভাবতেই পারিনি। শুধু যেখানে টুমলিং এ কিছু সময় কাটানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম, দেখানে একটি দুপুর থেকে বিকেল, সন্ধা এমনকি রাতেও থাকা হবে ভাবিনি। তাই পাহাড়ে ৪ ঘণ্টা হাটার ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়েগিয়েছিল সেই আকস্মিক আনন্দে।

একটি পাহাড়ের চুড়ায় উঠতেই দূরে দেখা গেল, সেই কল্পনার জ্বাল বোনা টুমলিং এর পাহাড়ি পাড়া বা গ্রাম। ওই যে চোখের সামনেই। তবে নামতে হবে এই পাহাড় থেকে, যেতে হবে দুই পাহাড়ের একবারে কোলের মধ্যে। হ্যাঁ আসলেই তাই টুমলিংটা ঠিক ঠিক কোন পাহাড়ের চুড়া নয়, নয় কোন পাহাড়ের পিঠ বা পাদদেশ, এটি ঠিক দুই পাহাড়ের মিলন ঘটিয়েছে, ওরা কোলের দোলা দিয়ে যেন! যার নিচে নেমে গেছে বেশ কয়েকটি পাহাড়। আর কাছে-দূরে পাহাড়ের সিঁড়ি সারি সারি সেতো আছেই অপলক চেয়ে ওই টুমলিং এর দিকে। যেন অনেক পাহাড় মিলে দিচ্ছে পাহারা, প্রিয় টুমলিং এর রঙিন ফুল আর বর্ণীল ঘর-বাড়িগুলোকে।

পাথরের পথ ধরে ধীরে-ধীরে, ছবি তুলতে-তুলতে নেমে পড়লাম পাহাড়ের কোলে, টুমলিং এ। গিয়েই চারিদিকের পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দিলাম। এখানে পাহাড়ের আচরণ এমন যেন, পিছনে ফেলে আসা পাহাড়ের চুড়া আপনাকে বিদায় জানাবে ওর মেঘ আর কুয়াসা দিয়ে, আর সামনের পাহাড় গুলো আপনাকে স্বাগত জানাবে একটুখানি রোদের মিষ্টি হাসি দিয়ে। আর সাথে দেবে খানিক দমকা হাওয়া, আপনাকে মেঘে মেঘে ভাসিয়ে নিতে। ফুলেরা দেবে তাদের নানা রঙ ঢেলে আপনার ক্লান্তি দূর করে সতেজ করে দিতে! সত্যি-ই তাই, গিয়েই দেখুন না?

টুমলিং পৌঁছেই, একটি থাকার যায়গা ঠিক করে, সেখানে ব্যাগ রেখে, বেরিয়ে এলাম এক দৌড়ে, রুমে বসে থাকার প্রশ্নই নেই। সে বাতাস আর ঠাণ্ডা যতই হোক। এরপর টুমলিং এর কোলে দুলে-দুলে, দোল খেয়ে, চুমুক দিলাম ধোঁয়া ওঠা কফিতে। আহ, টুমলিং এর মেঘ, ঘিরে ধরা কুয়াসা, ধোঁয়া ওঠা কফি আর চোখ, মন-প্রাণ জড়ানো সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। যেন কোন এক স্বর্গের সীমানায় বসে আছি, তুমি-আমি আর আমি-তুমি।

যেখান থেকে পা নড়েনা,
পা নড়লে, প্রাণ সরেনা,
আর,
প্রাণ সরলেও মন নড়েনা।

এক অদ্ভুত মায়া, আর আবেগের আচ্ছন্নতায় ঘিরে ধরা স্বপ্ন আর কল্পনার বাস্তবে এসে পাশে বসে, কাঁধে হাত রেখে, আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে, শিহরিত করে যাওয়া।

গাইডহীন সান্দাকুফু অভিযান...!! (পরের গল্প)

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×