somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আশা-নিরাশার বরফ চুড়া...(স্বপ্নের সান্দাকুফু-১০)

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দুপুর গড়িছেয়ে বেশ অনেক আগেই। বিকেল ও হেলে পড়ছে প্রায় সন্ধার কোলে। সেই সাথে বেড়ে চলেছে মন খারাপের পরিধিও। তারপরও নিরাশায় ভর করেই, তাকিয়ে রইলাম ওই আকাশের দিকে, শেষ আশা নিয়ে। কিছুটা জেদ আর আত্নবিশ্বাস নিয়ে চুড়ার উপরের একটি বেদীতে বসে রইলাম ঠায়। সেখানে আর কেউ নেই।

দূর থেকে একটি ছেলে হেটে এলো বেশ আগ্রহ নিয়ে। যাদের সাথে দুপুরে পরিচয় হয়েছে। ওরা পুরো পরিবারের প্রায় ১০ জন এসেছে একই রকম প্রত্যশা নিয়ে। কিছুটা দূর থেকেই জিজ্ঞাসা করলো, তাকে দেখা যাচ্ছে কিনা?

বললাম, ১০ মিনিটের জন্য হলেও দেখা যাবে, এখনো সন্ধা হতে প্রায় ৪০ মিনিট বাকি আছে। এই কথা বলা মাত্রই ছুটে গেল পরিবারের অন্যান্যদের ডাকতে। একটু পরে দেখি ছেলেটির পরিবারের সবাই পড়িমরি করে চুড়ার দিকে আসছে। আর ছেলেটা সবাইকে বলছে, ১০ মিনিট ধরে দেখা যাচ্ছে! এই রে, এই কথা শুনে আমি ভীষণ বিব্রত হয়ে পড়লাম, আমি বললাম কি আর ছেলেটি শুনলো কি? আর ওর পরিবারের সবাই যখন এসে দেখবে যে এখনো মেঘ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছেনা, তখন কি ভাববে?



ওর পরিবারের সবাই একটু কাছে আসতেই, আমি নিজ থেকেই জানালাম, যে আমি বলেছি ১০ মিনিটের জন্য হলেও দেখা যাবে বলে আমার বিশ্বাস, কিন্তু ও বুঝেছে যে ১০ মিনিট ধরে দেখা যাচ্ছে! আপনাদেরকে ভুল মেসেজ দিয়েছে, প্লিজ আমাকে ভভুল বুঝবেন না। বেশ কিছুটা অপরাধবোধ কাজ করছে তখন নিজের মধ্যে। অবশ্য সেই পরিবারের সবাই আমাকে ভুল বোঝেনি বলে আশ্বস্ত করলো, যেটা আমাকে বেশ স্বস্তি দিয়েছিলো।

এরপর শুরু হল, দারুণ এক মনস্তাত্ত্বিক খেলা, আবেগ-অনুভুতি, আশা-নিরশা, আনন্দ-উচ্ছ্বাসের প্রতি মুহূর্তের অসম্ভব ওঠানাম। আমি দেখছি, হাসছি আর মনে মনে ভাবছি...
ইস মানুষ প্রকৃতির কাছে কতই না অসহায়। একেবারের শিশুমন হয়ে গেছে সবারই। ছেলে-বুড়ো বা একেবারে টগবগে তরুন পর্যন্ত। সবাই কত নিষ্পাপ ভাবে, কতটা আকুতি আর বুক ভরা আবেগ নিয়ে তাকিয়ে আছে ওই মেঘে ঢাকা আকাশ আর কুয়াশায় ঘিরে থাকা বরফ চুড়াগুলোর দিকে। শুধু একবার দেখবে বলে সবার অনেক অরাধ্য, ভীষণ আকাঙ্ক্ষিত আর অসম্ভব প্রত্যাশার কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।



যেই একটু কালো মেঘ সরে গিয়ে, কিছুটা সাদা থমকে থাকা মেঘ দেখা যায়, অমনি দুই একজন উচ্ছ্বাসে চিৎকার দিয়ে ওঠে,

‘ঐযে ঐযে দেখা যাচ্ছে বলে!”

কেউ বলে ওঠে, নারে ওঠা মেঘ!

পাশ থেকে আর একজন, নারে ওটাই চুড়া, দ্যাখ-দ্যাখ ভালো করে তাকিয়ে দ্যাখ!

আরে ধুর চুড়া অমন সাদা হবে নাকি, চিকচিক করবে তো!

কেউ কেউ ছবি তোলে, অপার আশা নিয়ে, যে ওটাই সেই কাঙ্ক্ষিত চুড়া।

পরোক্ষনেই আর একজন চিৎকার করে ওঠে, ওই দ্যাখ একটু বামে আর একটা চুড়া, একটুখানি দেখা যাচ্ছে।

তোল তবে ছবি তোল তাড়াতাড়ি, আবার মেঘে ঢেকে যাবে কখন, তখন হায়হায় করবি।

আরে নাহ, ওটা তো মেঘ!



তোমাকে বলেছে, চোখের চশমার পাওয়ার বাড়াও, তাহলেই না বুঝবে ওটা মেঘ না বরফ চুড়া!

পাশ থেকে আর একজন, হ্যাঁ গো, আমি খালি চোখেই দিব্যি দেখতে পারছি আর তুমি চশমা পরেও দেখতে পারছোনা! তোমার চোখটা না একেবারেই গেছে! ডাক্তার দেখাবে এবার কোলকাতায় গিয়েই!

হুম, তোমাকে বলেছে যে আমার চোখের সমস্যা তাই না! নিজেরা মেঘ দেখে লাফালাফি করছো, আর মিথ্যে আনন্দে বিলীন হচ্ছ, মেঘেদের মাঝে! যাও মেঘ দেখো আর মেঘের ছবি তুলে, পরে ব্যাটারি শেষ করে হাঁয় হাঁয় কর গে, যাও!



এরপর দুই-একজন ছোটারা, তাদের মা-বাবাকে, দেখনা না মা ওইটা না চুড়া?

হ্যাঁরে ওটা তো চুড়াই, ওটা সত্যি সত্যি চুড়া, এদিকে এসো দেখনা। ক্যামেরাটা দাও, ছবি তুলি।

এরপর যখন সত্যি সত্যি একটুখানি দেখা গিয়েছিল একটি বরফের ক্ষীণ চুড়া, যার কিছুটা মেঘে ঢেকে ছিল, তখন কতই না অনুনয়-বিনয়, কতইনা দোয়া-প্রার্থনা, কতই না অবুঝের মত চাওয়া।

মেঘের কাছে এক একজনের এমন আকুতি ঝরছে...

“যা বাবা, একটু সরে যা...”

“একটু দেখি, পরে আবার ঢেকে যাস”

“নাহ আর দেখা যাবেনা, ওই দেখ কিভাবে মেঘ ধেয়ে আসছে এদিকে, আজকে আর আশা নেই গো!”

এই ঐযে আবার দেখা যাচ্ছে... ওই দেখ ওই কালো মেঘের ঠিক উপরে, দেখেছ?

হ্যাঁ হ্যাঁ দেখেছি, ওটা সত্যিই চুড়া, এবার আর কোন ভুল নেই। দেখ মেঘ আর একটু সরে গেলে আরও ভালোভাবে দেখা যাবে।

এবার সত্যি দেখা গিয়েছিল, কিন্তু মেঘ আর আমাদের প্রত্যাশামত সরে যায়নি। বরং আরও গাড় হয়ে ঢেকে গিয়েছিল, যেটুকু দেখা যাচ্ছিল সেটুকুও।

এইভাবে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে কখনো ডানে, কখনো বামে সবাই বরফের চুড়া দেখছে তাদের মত করে। আসলেই কে কি দেখেছে কেউ জানেনা। সত্যি একবারও দেখা গেছে কিনা কেউ-ই তৃপ্তি নিয়ে আত্ন-বিশ্বাসের সাথে বলতে পারবেনা, তবুও সবাই অনেক উচ্ছ্বসিত যে তারা দেখেছে, একবার না, বেশ কয়েকবার দেখেছে, ছবি তুলেছে, আনন্দ করেছে, উচ্ছ্বাস করেছে, কত তৃপ্তি তাদের চোখে-মুখে, কত আনন্দ আর কত হাসি। একেবারেই নিষ্পাপ হাসি, বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাস আর নির্মল আনন্দ করেছে।



তারপর সন্ধা নামলো সেই চুড়ায়, নামলো মেঘেদের ঢল, মুড়ি দিল কুয়াসার চাদর, কাছে দূরের সব পাহাড়ের দল। কেউ মন খারাপ করে, কেউ মন ভালো করে, কেউ কেউ আগামীকালের একটি সুন্দর, ঝকঝকে আর প্রার্থিত সকালের প্রত্যাশা করে চলে গেল যার যার আবাসে।

সেই সন্ধ্যায়, সেই পরিবারের সাথে আলাপ হয়েছিল আরও অনেক, কিছুটা ভালোলাগার, বাংলা কথা বলতে পারার তৃপ্তির উষ্ণ আন্তরিকতাময়। বেশ অনেকক্ষণ গল্প হয়েছিল সবার সাথে, হয়েছিল সবার কিছু কিছু দারুণ ভ্রমণ সৃতির মজার আর আনন্দঘন অভিজ্ঞতার বিনিময়। যে গল্পগুলো সেই সন্ধাটাকে করেছিল আসলেই অন্যরকম ভালোলাগার।

শেষে সবাই সেই গল্পের রেশ টানা হয়েছিল, এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়ে যেন, সকালটা হয়, সবার প্রত্যাশাময়, সেই আশায়, অপেক্ষায় আর আকুলতায়।

জীবনের সেরা চার ঘণ্টা...!! (পরের গল্প)

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×