৪/২ তে জাফর ইকবাল স্যারের সাথে আমাদের শেষ কোর্স ছিল ফাইবার অপটিক্স। উনি ক্লাসের প্রথম দিন লম্বা কিছু খয়েরি রঙের তাঁর এনে প্রত্যেকের হাতে দিয়ে বললেন এই হচ্ছে ফাইবার অপটিক্সের ফাইবার। এর মধ্যে দিয়েই আলো পাঠানো হয়। আমার হাতে কোন কিছু আসলে প্রথমেই যেই জিনিসটা মাথায় আসে এইটা কি খায় না মাথায় দেয়? আমি একটু খেয়ে দেখলাম কেমন যেন তিতা তিতা স্বাদ। মানে ফাইবার তিতা স্বাদ বিশিষ্ট একতা জিনিস। কয়েকদিন ক্লাস হওয়ার পর স্যার একতা গল্প বললেন। অনেকেই জানেন স্যার যখন আমেরিকাতে ছিলেন তখন বেল কম এ জব করতেন। আমি একটু বলে নেই বেল কম এ কারা কারা কাজ করেছেন। কাচের মধ্য দিয়ে আলো পাঠান সম্ভব প্রথম এই ধারণা দেন কাও। এই ধারণার জন্য উনি নোবেল পান। এই নোবেল লরিএট গত বছর মারা গেছেন। উনি বেল কম এ ছিলেন। আর আলো পাঠানোর জন্য বিশেষ ধরনের কাচ দরকার ছিল। বেল কম এ এই কাচ সাপ্লাই দিত করনিং নামে একটি কোম্পানি। তো কোন একদিন এই কাচ ল্যাব এ বেচে যায়। স্যার মনে করেছিলেন দামি জিনিস কোম্পানিকে ফেরত দেই। উনি ফেরত দেয়ার জন্য প্লাস্টিকে মুড়ে কুরিয়ারে পাঠানোর ব্যবস্থা করে এসে গোঁফে তেল দিয়ে ঘুমাতে গেলেন। পরের দিন ল্যাব এ যেয়ে শুনেন সব কাচ নাকি গলে গেছে। উনি করনিংকে সরি বলার জন্য গেলেন কোম্পানির মালিক বলল নো প্রবলেম আমরা আরো কয়েকশ কিলোমিটারের ফাইবার কাচ পাঠায়ে দিচ্ছি। এইগুলো খুব সস্তা। তো চিন্তা করেন কাও যদি কাচ দিয়ে আলো না পাঠানোর চিন্তা করতেন আর করনিং যদি এত সস্তায় এই ফাইবার বানাতে না পারত তাহলে সজীব ওয়াজেদ জয় সারা দুনিয়ায় ৫জি আসার আগেই বাংলাদেশে ৫জি আনাতেন না। সারা দুনিয়ায় ৫জি নেটওয়ার্কের আর্কিটেকচার এখন ডেভেলপিং স্টেজে।
একতা খুবই সাধারণ প্রশ্ন মাথায় আসা উচিত? আলোটা যায় কেন? এর একটাই উত্তর ফিল্ডের কারণে। কিসের ফিল্ড? আসলে আলো হচ্ছে ইলেক্ট্রিক্যাল আর ম্যাগনেটিক ফিল্ড। এইবার প্রশ্ন ফিল্ড কি?
ধরি পাশাপাশি দুইটা চুম্বক আছে। উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরুকে আকর্ষণ করে। এই আকর্ষণ করার কারণ কি? কারণ একটা ক্ষেত্র তৈরি হয় মানে ফিল্ড তৈরি হয়। আপনি মেরু দুইটাকে দূরে নেয়ার চেষ্টা করেন। একটা বল অনুভব করবেন। এইবার প্রশ্ন এই বল, ফিল্ড কোথা থেকে তৈরি হয়?
মাইকেল ফ্যারাডে যখন প্রথম তড়িৎক্ষেত্রের ধারণা দেন তখন বলেন একটা অবিচ্ছিন বল রেখা কাজ করে। এর কারণে আকর্ষণ হয় বিকর্ষণ হয়। ম্যাক্সওয়েল বলেন আলো তড়িৎক্ষেত্র আর চৌম্বকক্ষেত্র দিয়ে তৈরি। দুইটা কথা যদি কম্বাইন করি তাহলে যেটা আসে আলো অবিচ্ছিন্ন। খুব ভাল ভাবে ফিল করা যায় ব্যাপারটা যদি একটা ঢেউ চিন্তা করি। আসলে ক্লাসিকালি আলো ঢেউ মানে তরঙ্গ। তার মানে আমরা যা দেখি সব কিছু ঢেউ। এইবার প্রশ্ন মানে কি আমরাও ঢেউ মানে তরঙ্গ? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে প্লাঙ্কের থিওরিটা বলি। উনি বলেছেন এনার্জি গুচ্ছাকারে থাকে। আচ্ছা আমরা সবাই এইটা তো জানি যে তরঙ্গ একধরনের শক্তি। ধরে নিতে পারেন ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে নদীর ঢেউয়ের একটা অন্তর্নিহিত শক্তি আছে যা চলমান। এই শক্তি গুচ্ছাকারে থাকবে। থিওরি দুইটা যদি একসাথে করি তাহলে যা আসে তরঙ্গ চলমান কিন্তু এর শক্তি গুচ্ছাকারে থাকে।
এবং এই গুচ্ছাকার শক্তির জন্যই পারটিকেল তৈরি হয়। মানে ইলেকট্রন ঢেউয়ের মত অবিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকবে কিন্তু পারটিকেল ইলেকট্রন তৈরি হবে এর গুচ্ছাকার শক্তির জন্য। যা ডি ব্রগলি গাণিতিকভাবে দেখাইসেন। কতটুক ঢেউ আর কতটুক এনার্জি।
এইবার একটা প্রশ্ন আমরা কি ইলেকট্রন প্রোটন দিয়ে তৈরি? অবশ্যই। আমাদের শরীরের যে পরিমাণ ইলেকট্রন প্রোটন আছে টা যদি আলাদা করা যেত এবং ১ মিটার দূরত্বে রাখা যেত তাহলে তাদের মধ্যকার আকর্ষণ বল মহাকর্ষ বলের চেয়েও বেশি হত। তাহলে আমাদের শরীরের এই ইলেকট্রন কিভাবে তৈরি হল? অবিচ্ছিন্ন ঢেউয়ের গুচ্ছাকার এনার্জির জন্য। মানে আমরা তরঙ্গ এবং কণা। আসলে ডি ব্রগলি এই কথা টাই বলতে চেয়েছেন।
আমি এই যে ফিল্ড বা ঢেউ এর কথা বললাম এই ফিল্ড বল তৈরির জন্য দায়ী। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে ইলেকট্রিক আর ম্যাগনেটিক ফোরস। আর মহাকর্ষ বল তৈরির জন্য দায়ী স্থানকাল এর ফিল্ড। সব বুঝলাম কিন্তু মহাকর্ষ বলেরটা বুঝলাম না। আসলে আইনস্টাইন বলেছেন ভারি বস্তুর আশেপাশে আলো বেঁকে যাবে। কেন? কারণ ভারি বস্তু এর আশেপাশের স্থান বাঁকায়ে ফেলে। ভালভাবে বুঝা সম্ভব যদি এভাবে চিন্তা করেন। মনে করেন নদীর ঢেউ এর মাঝে একটা নৌকা ছেড়ে দেয়া হল। এখন ঢেউ কি আগের মত থাকবে নাকি চেঞ্জ হবে। চেঞ্জ হবে।
মানে আমরা যে জগতে বাস করি এইটা ফিল্ড মানে ঢেউ। আপনি ঢেউ আমি ঢেউ সবাই ঢেউ।
ঢেউ দিয়েছে জলে।
ঢেউ দিল, ঢেউ দিল, ঢেউ দিল আমার মর্মতলে।
এ কী ব্যাকুলতা আজি আকাশে,এই বাতাসে,
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বলেছিলাম কোয়ান্টাম নিয়ে কিছু লিখব। প্রায় ৩ মাস পর লিখলাম। পরের লেখা ছয় মাস পর আস্তে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৪৯