somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুন আজাদ হত্যার চক্রান্ত হয় জামায়াত জঙ্গী যৌথসভায়!!!

২১ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাঈদীর উপস্থিতিতে ওই সভা থেকেই 'মুরতাদ'কে কতলের নির্দেশ জারি করা হয়।
গাফফার খান চৌধুরী ॥ প্রথাবিরোধী লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ খুনের চক্রানত্ম করা হয় হত্যাকাণ্ডের প্রায় ২ মাস আগে। ২০০৩ সালের ২০ নবেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় হুমায়ুন আজাদের লেখা উপন্যাস 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' প্রকাশিত হয়। উপন্যাসে মৌলবাদীদের আসল চেহারা আরও উন্মোচিত হয়। বইটি রাতারাতি আলোচনায় চলে এলে মারাত্মক বিচলিত হয় জামায়াতে ইসলামী। হুমায়ুন আজাদের এ ধরনের উপন্যাস লেখার পেছনে আসল উদ্দেশ্য ও বিশেষ কোন মহলের ইন্ধন আছে কি-না তা জানতে জামায়াতে ইসলামী একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। দলটির নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রধান করে গঠিত ও অনুসন্ধান কমিটিতে জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র শিবির নেতাকেও রাখা হয়েছিল। কমিটির দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই হত্যা করা হয় হুমায়ুন আজাদকে। পুরো হত্যাকান্ডের মনিটরিংয়ের দায়িত্বও পালন করেন দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী।
মামলার তদনত্মকারী সংস্থা সিআইডির এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' উপন্যাসটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় কপাল পোড়ে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের। সিআইডি টানা এক সপ্তাহ ধরে উপন্যাসটির ব্যাপক পর্যালোচনা করেছে। এছাড়া মৃতু্যর আগে হুমায়ুন আজাদের দেয়া সাৰাতকারের বক্তব্যও নানাভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলার নথিপত্র ব্যাপক পর্যালোচনা শেষে সাঈদীকে এ মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। সাঈদীকে হুমায়ুন আজাদ মারা যাওয়ার পর দেয়া বক্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ব্যাপক জেরার মুখে অবশেষে সাঈদী অনেক কিছুই স্বীকার করেছেন।
সাঈদীর বরাত দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' প্রকাশিত হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী দলীয় বৈঠক করে। বৈঠকে জামায়াত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিতেই বইটি সুপরিকল্পিতভাবে লেখানো এবং প্রকাশ করা হয়েছে বলে শীর্ষ জামায়াত নেতারা একমত হন। এর পেছনে বিশেষ কোন মহলের হাত রয়েছে। তাদের আশঙ্কা, বইটি জামায়াতের রাজনীতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারে। এ ব্যাপারে এখনই পদৰেপ না নিলে জামায়াতের ভবিষ্যত রাজনীতি ৰতিগ্রসত্ম হতে পারে।
সেই পদক্ষেপের অংশ হিসাবে বৈঠকে উপন্যাস লেখার কারণ ও লেখকের ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে। সাঈদীকে কমিটির প্রধান করার পেছনেও ছিল বিশেষ রহস্য। সাঈদী বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে বত্তৃতা করেন। ওয়াজ মাহফিলে মধুর কথার মাধ্যমে মানুষের মনে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' বই সম্পর্কে খারাপ ধারণা জন্ম দিতেই সাঈদীকে কমিটির প্রধান করা হয়েছিল। এরপর থেকেই হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে সাঈদী উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকেন। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থী চার শিৰককে রাখা হয়েছিল। চার শিৰকের মধ্যে কলা অনুষদের এক শিৰককে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছিল। এই শিৰক আত্মস্বীকৃত রাজাকার। এই শিৰকও বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা করেন। তিনি হুমায়ুন আজাদের পাশের বাসায় বসবাস করছিলেন। এই রাজাকার শিৰকের সঙ্গে অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের মানসিক দূরত্ব থাকলেও পাশাপাশি বসবাস করার কারণে সামাজিক সম্পর্ক চলনসই ছিল। জামায়াতের নির্দেশেই তিনি হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে ভাল সম্পর্কও গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কমিটিকে সহযোগিতা করতে ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজনকে রাখা হয়েছিল। কমিটিতে থাকা সদস্যদের জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' উপন্যাসের একটি করে কপি সরবরাহ করা হয়েছিল। উপন্যাসটি কমিটির সবাই কয়েক দফায় পাঠ করেছেন। এরপর কমিটি হুমায়ুন আজাদের ওপর তদনত্ম ও নজরদারি শুরম্ন করে। তদনত্মে এ ধরনের উপন্যাস লেখার পেছনে কোন বিশেষ মহলের ইন্ধন দেয়ার অসত্মিত্ব খুঁজে পায়নি অনুসন্ধান কমিটি। তারপরও হুমায়ুন আজাদকে মানসিকভাবে ঘায়েল করতে অনুসন্ধান কমিটি ছাত্র শিবিরের কতিপয় সদস্যকে হুমায়ুন আজাদের পেছনে লেলিয়ে দেয়। তারা হুমায়ুন আজাদ চলাফেরার সময় কাছাকাছি গিয়ে হুমায়ুন আজাদকে পাগল, মাথা খারাপ, অসভ্য, উন্মাদ টিপ্পনি ইত্যাদি কাটত। এভাবে মাসখানেক ধরে হুমায়ুন আজাদকে মানসিক নির্যাতন করে ছাত্র শিবিরের লেলিয়ে দেয়া কর্মীরা। এমন মানসিক নির্যাতনে প্রায়ই হুমায়ুন আজাদ টিচার্স লাউঞ্জ থেকে আগে আগে রিঙ্াযোগে বাসায় ফিরে যেতেন। বিনা কাজে বাইরে যেতেন না। এরপর শুরম্ন হয় টেলিফোনে হুমকি। তাতেও পিছু হটেননি হুমায়ুন আজাদ।
পরে কমিটিকে জানানো হয়, উপন্যাসটি লেখার পেছনে কারও ইন্ধন নেই। হুমায়ুন আজাদ নিজ ইচ্ছায় এ উপন্যাস লিখেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও উপন্যাস লেখার প্রস্তুতি রয়েছে তাঁর। এমন রিপোর্টের পর এ ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজে জামায়াতে ইসলামী। পরে জামায়াত ও শীর্ষ জঙ্গী নেতাদের এক বৈঠকে হুমায়ুন আজাদকে মুরতাদ হিসাবে ঘোষণা করে তাঁকে কতল করার নির্দেশ জারি করা হয়। এরপর জঙ্গীদের এক গোপন আসত্মানায় সাঈদী ওয়াজ মাহফিলে বলেন, যে বান্দা কাফের হত্যা করে, তার জন্য বেহেসত্মের দুয়ার খোলা। আর যে মুরতাদ হত্যা করে তার জন্য তো কথাই নেই।
হুমায়ুন আজাদকে হত্যার আগে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে শায়খ রহমান ও বাংলাভাইসহ জেএমবির শীর্ষ জঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় সাঈদীর ওয়াজের পর জেএমবিতে থাকা ছাত্র শিবিরের ক্যাডারদের হুমায়ুন আজাদকে হত্যার পরিকল্পনা বাসত্মবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। এজন্য জেএমবিতে থাকা শিবির ক্যাডার আতাউর রহমান সানির নেতৃত্বে শহীদ (ভাগ্নে শহীদ), মিজানুর রহমান শাওন, আব্দুল আউয়াল (ফাঁসিতে মৃতু্য) ও শামীমসহ কয়েকজনকে নিয়ে একটি বিশেষ কিলিং স্কোয়াড গঠন করা হয়। ওই স্কোয়াডই ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রম্নয়ারি বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা চালায়। পরে ২২ দিন তাঁকে সিএমএইচে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তাঁকে ৪৮ দিন ব্যাঙ্ককে চিকিৎসা দেয়া হয়। সর্বশেষ একই বছর জার্মানির মিউনিখে তিনি ১২ আগস্ট রহস্যজনকভাবে মারা যান। পুরো কিলিং মিশন মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন সাঈদী। কিলিং মিশন সফলতার সঙ্গে শেষ করতে পেরেই হুমায়ুন আজাদ মারা যাওয়ার পর সাঈদীসহ ও জেএমবির জঙ্গীরা মিষ্টি খেয়ে ও বিতরণ করে আনন্দ করেছিল। খুশিতে সাঈদী বলেছিলেন, 'এক মুরতাদ ছিল। আমরা তাঁকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এদেশে সরিয়ে দিলে নানা ঝামেলা হতো। তাই বিদেশে সরিয়ে দিয়েছি।' মিষ্টি খেয়ে ওই অনুষ্ঠানে হুজিপ্রধান মুফতি হান্নানও বলেছিল, অধ্যাপক আজাদ নামে এক মুরতাদ ছিল। সে মারা গেছে। তাই আমরা মিষ্টি খেয়ে আনন্দ করছি।

তথ্য সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ
৩৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×