somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এগিয়ে যাওয়ার ভাবনা

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একজন অন্য আরেকজনের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কের ভেতরে ও বাইরে চলতে চলতে ধীরে ধীরে একটা সমঝোতার সম্পর্ক তৈরি হয়, তার আগ পর্যন্ত একজন অপরিচিত মানুষ প্রথম দেখায় তার পোশাক পরিচ্ছদ কথা বলার ধরন, সাথে থাকা গাড়ি, অথবা গাড়ি না থাকা, লোকাল বাসে চড়া,ফুটপাতে দেখা এবং কখনো কখনো ব্যক্তির আচরন দেখে তার সম্পর্কে একটা কিছু অনুমান করেন, সেই অনুমান ভালোও হতে পারে আবার খারাপও হতে, অনুমানে অপর ব্যক্তির চোখে বাদশা ও হতে পারেন আবার চোর ও হতে পারেন কিন্তু এর অর্থ তো এই না যে উনি মনে মনে মনগড়া যা ভাবতেছেন আপনি নিজে তাই?

আমি একবার সিএনজিতে এক বয়স্ক মহিলাকে লিফট দিয়েছিলাম, এর কারন হল রাস্তায় কোন সমস্যাজনিত কারনে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট প্রায় বন্ধ ছিল, মহিলা এইখানে ওইখানে বাসে ওঠার জন্য খুব চেষ্টা করতে করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, আমিও উনার পাশে পাশে দাঁড়িয়ে উনার মতনই struggle করছিলাম এই জন্যই উনার সমব্যথী হয়ে উনাকে আমার সিএনজিতে আমন্ত্রন জানালাম।

সে বিপদের মুখে পড়ে আমার আমন্ত্রন পলকের মধ্যে গ্রহন করলেন ঠিকই কিন্তু সেইফ জোনে অর্থাৎ সিএনজি চলতে শুরু করার কিছু পড়ে উনার মনেহল কোন ভয়ঙ্কর মাফিয়ার দলের কারো হাতে উনি সম্ভবত পড়েছেন, কাজেই আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশী জামাই ছেলে ছেলের বউকে দ্রুত ফোন করতে লাগলেন কোন অচেনা মেয়ের সাথে তিনি বাড়ি ফিরতেছেন এখন এই জায়গায় আছেন তো তখন ওই জায়গায় আছেন, সিএনজি ড্রাইভারকে ধমক ও দিতেছেন এই বলে সেই বলে রাস্তার মাঝখানে থাকতে কিনারে চইলা যাইতেছেন কেন? এত বড় সাহস।

আরেকবার এক অতি গরীব মহিলাকে একই সুবিধা দেয়ার পর মহিলা সিএনজি চলতে থাকার কিছুক্ষনের মধ্যে আমারে নামায়ে দেন বলে নেমে যান। 
আবার সিএনজিতে লিফট পেয়ে চির কৃতজ্ঞ হয়েছেন এরকম মানুষ ও অনেক।
বাসে আরেকবার এক আংকেল ধরণের লোক বার বার তার পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল মানি ব্যাগ ঠিক আছে কিনা চেক করতে করতে আড় চোখে আমাকে observe করছিলেন। কপাল! আমার চেহারায় কেন লেখা নাই যে আমি নিতান্তই নিরীহ মানুষ।

একই ব্যাপার আমার পক্ষ থেকেও হয়েছে, আমি কেন অচেনা মানুষকে সাহায্য করতে যাই তাতে আমি বিপদ্গ্রস্থ হতে পারি এই কারনে এইসব করা যাবেনা এই সকল সতর্কতা বানী শুনতে হয়েছে।

আমার ঘটনার সাথে মিলে এই নিয়ে একটা স্টোরি আছে এরকম,
এক অতি দুঃখী একাকী সেনসেটিভ মনের যুবক তার কাজের জন্য বাসে ট্রেনে রাস্তায় রোজ যাতায়াত করতেন, সেটা করতে গিয়ে সে দুনিয়ার কষ্ট পেয়ে রাত্রে বাসায় ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রোজ কান্নাকাটি করেন এই মনে করে যে, উনার এই নির্দয় পৃথিবীতে সবার কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার পাওয়ার কারন; উনার গ্রাম্য চেহারা গায়ের কালো রং অথবা শুধুমাত্র উনার দুর্ভাগ্য।

একবার ফুটপাতে উনি দাঁড়িয়ে থাকার সময় এক ব্ল্যাক অ্যাম্বাসেডর গাড়ী উনার পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালেন, সে ঐদিন অবাক হয়ে দেখলেন অতিরিক্ত সুন্দরী মেয়ে গাড়ী থেকে নেমে তার দিকে এগিয়ে আসছেন, সে অবাক এবং খুশি হয়ে গেলেন মেয়েটি তাকে কি বলতে পারেন এই সম্পর্কে তার অনুমান নেই, তবে ভালো কিছু নিশ্চয়ই উনি ধরে নিলেন।

কিন্তু কাছে আসার পর তো অনেক খারাপই হল যা আপনি আমি বা উনি নিজেও কল্পনাও করেন নাই, মেয়েটি ঠাশ করে যুবকের গালে চড় মারলেন এবং রাগে গজরাতে গজরাতে কারন বললেন এই যে চটপটি ফুচকার গাড়ী কেন রাস্তার মাঝখানে রেখেছেন, এতে উনি এক্সিডেন্ট করতে পারতেন!! তার কয়েক মুহূর্ত পর চটপটি ফুচকার ভ্যানগাড়ির আসল মালিক এসে ভ্যানটি রাস্তার সাইডে নিয়ে রাখলেন। উনার হঠাৎ একটা বিশেষ কাজ করতে তার ভ্যান রাস্তার মাঝপথে রেখেই চলে গিয়েছিলেন। 

পথচারী যুবক এত বড় অন্যায়ের প্রতিবাদ কাউকেই করতে পারলেন না, না ফুচকা ওয়ালাকে না সুন্দরী অচেনা অ্যাম্বাসেডর গাড়ির মালিক মেয়েটিকে, উনি হতাশ এবং দুঃখিত চোখে বার বার ফুচকা ওয়ালার ভ্যানের দিকে তাকাতে তাকাতে অতিরিক্ত কষ্ট পেলেন এই ভেবে যে তাকে দেখতে এতই খারাপ দেখায়!
সে তো অফিশিয়াল ড্রেসকোড পড়ে আছেন ফুচকাওয়ালার মতন লুঙ্গি-গামছা কিংবা ময়লা ফতুয়া পড়ে নেই, মুখে পানের রস লেগে নেই, তারপরও কেন তাকে ঐ অশিক্ষিত ফুচকাওয়ালার মতন দেখালো ইয়া খোদা!! 

ঐদিন বাসায় ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রাগে দুঃখে কষ্টে নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করতে করতে  কেঁদে কেঁদে বুক ভাসালেন।
কয়দিন পর একই ঘটনা বাসের মধ্যে, একজন গায়ে পড়ে তার সাথে ঝগড়া করলেন এই দোষ দিয়ে যে উনি তার পায়ে পারা দিয়েছেন কিংবা তার টাকাও চুরি করে থাকতে পারেন, এই নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাকে বাস যাত্রীটি শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিতে দিতে বললেন চোর বাটপার কোথাকার বাসে উঠছিস কেন যা ভাগ এখান থেকে।
ঐদিনও বাসায় ফিরে যুবকটি কান্নাকাটি করলেন, নিজের চেহারাকে দোষারোপ করলেন। 

এভাবেই বেশ অনেকদিন কেটে যাবার পর একদিন ট্রেনে অসম্ভব সুদর্শন ফর্সা এক যুবককে দেখতে পান তিনি, আর মনে মনে ভাবলেন এই যুবকের মতন ভালো চেহারা হলে নিশ্চয়ই কেউ তাকে এতটা অবজ্ঞা করতেন না।

যুবকটির হাতে একটি দৈনিক পত্রিকা ছিল, সে সেটা পড়ছিল, কিছুক্ষণ পর এক লোক যুবকটিকে গায়ে পড়ে ধমকাতে লাগলেন কেন তার সামনে পত্রিকা মেলে ধরে আছেন? একপর্যায়ে বলেই বসলেন বেয়াদব; ছোটলোক; বস্তি কোথাকার! যুবকটি কোন তর্ক না করে লোকটি কাছ থেকে দুই হাত দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন, অন্যদিকে তাকিয়ে আনমনে হাসলেন তারপর মাথা ডানে-বামে ঝাঁকিয়ে তার হাতে থাকা পত্রিকা পড়ায় মনোযোগ দিলেন।

পুরো ঘটনাটা অবাক হয়ে অপর যুবকটি দেখলেন, তিনি অবাক হলেন এই কারণে যে সুদর্শন যুবকটি এত বাজে মন্তব্য শোনার পর ও মন খারাপ করলেন না; তার মতন কষ্টও পেলেন না। 

তখন তার কাছে গিয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ভাই আপনার সাথে উনি এত খারাপ ব্যবহার করলেন আপনি মন খারাপ করলেন না কেন? 
যুবকটি তার উজ্জ্বল চোখ জোড়া তার দিকে স্থাপন করে হেসে বললেন আমার বয়স ২৫ বছর, কাজেই বলা যায় আমি নিজেকে চিনি ২৫ বছর ধরে আর এই লোকটি আমাকে চেনে খুব বেশি হলে চার থেকে পাঁচ মিনিট সময় ধরে, সুতরাং সে আমার সম্পর্কে যাই বলুক না কেন আমি তো জানি আমি কি, কাজেই আমি তার কথায় কষ্ট কেন পাব মন খারাপ কেন করব?  

এত কিছু বোঝার পর ও মন মানতে চায় না, মন খারাপ হয় হতাশ লাগে। তবু বাস্তবতা বুঝতে পারাটাও কম কিশে। শেষ করছি রবি ঠাকুরের একটি অভিমানী কবিতার পংতিমালা দিয়ে----

চাহে না পৃথিবী, চাহি না পৃথিবী,
আপনার ভাবে আপনি রব!

আমার হৃদয় আমারি হৃদয়,
বেচি নি তো তাহা কাহারো কাছে,
ভাঙা-চোরা হোক, যা হোক তা হোক,
আমার হৃদয় আমারি আছে!

চাহি নে কাহারো আদরের হাসি,
ভ্রূকুটির কারো ধারি নে ধার,
মায়া-হাসিময় মিছে মমতায়,
ছলনে কাহারো ভুলি নে আর!

কাহারো ছলনে আর নাহি ভুলি
জ্বলিয়া পুড়িয়া হয়েছে খাঁক,
তাদের সোহাগ, তাদের বিরাগ
তাদের আদর তাদেরি থাক!


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×