আজ আকাশের মন খারাপ তাই সে কাঁদছে,অঝর ধারায় কাঁদছে। কাঁদবেইনা বা কেন? যেখানে মানুষের পাথুরে হৃদয় গলে বরফশীতল তরল হয়ে যায় সেখানে আকাশের মত কোমলমনা কাঁদবে না -এ কেমন করে হয়! মানুষের নিষ্ঠুরতাই যখন মানুষকে কাঁদায় তখন প্রকৃতি কিভাবে চুপ থাকে? সৃষ্টিলগ্ন থেকে প্রকৃতিযে ন্যায়-নিয়মের পক্ষেই চিরকাল কথা বলে আসছে,নিয়মের বাইরে তার গতিবিধি অচল। জীবনদর্শন থেকে দুটো ঘটনা বলছি_
দিবাভাগের কোনোএক নির্দিষ্ট সময়ে দুই ভদ্রলোক একসাথে capsule lift-এ উঠেছেন। লিফট গন্তব্যে পৌঁছালে প্রথমে যিনি বের হয়ে আসেন তিনি হলেন আলিফ সাহেব,দ্বিতীয়জন হলেন মতিন সাহেব যিনি ইতোমধ্যে হৃদক্রিয়ার কার্যবিরতির দরুন লিফটের দরজায়ই বসে পড়ে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়ে নত মস্তকে শিরদাড় হয়ে আছেন, ততক্ষণে আলিফ সাহেব ব্যাপারটি notice করে আশপাশ থেকে লোক ডাকাডাকি করে মতিন সাহেবকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসালয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারবাবু তাকে মৃত ঘোষণা করলেন। এরইমধ্যে তার পরিবার & পুলিশকর্মকর্তারাও এসে হাজির। পুলিশ মতিন সাহেবের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য আলিফ সাহেবকে জিজ্ঞাসাবাদহেতু হাজতে নিলেন। পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা রয়েছেন যারা অনভিজ্ঞের মত যাকে তাকে সন্দেহ করেন এবং সন্দেহভাজনকেই তারা ধরে নেন অপরাধী; তাই সেই কতিপয়কে রিমান্ডে নিয়ে প্রথমে মানবাধিকার শেখানো উচিৎ তবে অনেক ভালোরাও আছেন যাঁদের জন্য বাংলার মাটি আজও সোনার চেয়ে খাঁটি। যাইহোক ভাল-মন্দ মিলিয়েই মানুষ,ভালোমন্দ মানুষ নিয়েই জাতি,ভালোমন্দ জাতি নিয়েই দেশ-মহাদেশ-পৃথিবী।
তারপর,পুলিশের ভেবাচেকা খাওয়ার মত প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে গিয়ে ভড়কে গেলেন আলিফ সাহেব। আলিফ সাহেবের ভয় পাওয়া চেহারায় সন্দেহ আরও বেড়ে গেলো দায়িত্বশীলদের তাই তাকে রিমান্ডে নেওয়া হল। পরবর্তীতে লাশের dead report হাতে পেলে নির্দোষ আলিফ সাহেবকে ছেড়ে দেয়া হয় ঠিকই কিন্তু ততক্ষণে আলিফ সাহেবের লাশ হবার জোগাড়। এই হচ্ছে আমাদের civil service & social regulations! উপকারীকে উপকারের জন্য জবাবদিহি করতে হয়!
জীবন থেকে কঠিন শিক্ষা পাওয়া আলিফ সাহেবের পরবর্তী জীবনের আরেকটি ঘটনা নিম্নরূপ-
এক বর্ষা মৌসুমে আলিফ সাহেব রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন,শুনশান নীরব রাস্তার পাশে একটি গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে; ঝিরিঝিরি বর্ষাস্নাত হাওয়া বইছে। আলিফ না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলেন হঠাৎ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর একটি গাড়ি ওই পথ দিয়েই যাচ্ছিল,তারা লাশটি দেখেন & আলিফ সাহেবকেও। বলে রাখা দরকার যে আলিফকে দেখতে খানিকটা ডাকু মাস্তানদের মত লাগে যদিও এখানে তার কোন হাত নেই সমস্তই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। অনেকটা অঞ্জনদার 'রঞ্জনা' গানের ওই লাইনটার মত.. "ধর্ম আমার আমি নিজে বেছে নিইনি, পদবীতে ছিলনা যে হাত..."
যাকগে ঘটনায় ফেরা যাক,যথারীতি আলিফ সাহেব আবার জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন।
Policeman: What's ur name?
Alif: Alif Rahman.
Policeman: ID card, plz.
...
Policeman: What's the relation betwixt u & dead man,for what were u angry with him?
আলিফ সব খুলে বলল,তার বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠীও যে ওই লোককে কোনোদিন দেখেনি,চিনেনা-জানেনা সব। সব শোনার পর,
Policeman: U know nothing about the incident then why weren't u rushing to the spot with a view to helping him?
কিভাবে অমন স্বার্থপরের মত শত্রুসমচিত্তে নির্বিকারে হেটে পালাচ্ছিলেন?এতটুকু মানবতাওকি নেই আপনার?
যার মধ্যে বিন্দু-পরিমাণ মানবতা নেই সে হয় পাগল নাহয় গুন্ডা/অপরাধী। কাজেই পাগলাগারদ নাহয় জেলহাজত একটাতো ভোগ করতেই হবে আপনার।
রিভলভার,বুলেট ইত্যাদির কোন আলামত না পাওয়ায় অবশেষে খুনির সাহায্যকারী হিসাবে পাঁচ বছরের জেল হল আলিফ সাহেবের।
আলিফ এখন লৌহশিকে আবদ্ধ কক্ষে বসে বসে ভাবে, কত নির্বোধ আর একরোখা মানুষের আদালত! উপকার করলে, কেন করলি? আর না করলে ক্যান করলিনা নিশ্চয়ই তুই ক্ষতি সাধনকারী- অসাড়মন্ত্র!
অনেকে হয়তো বলবেন- This is Bangladesh bro,just avoid it, কিংবা কেউ বলবেন এই যুগটাই এমন; কিন্তু না- জাতি,ধর্ম বা কালের দোহাই দিয়ে লাভ নেই,কুৎসিতের কোন দেশ,জাতি,ধর্ম,কাল,পাত্র নেই। মিথ্যাচারী,দুষ্কৃতিকারীদের এসব দ্বারা আবদ্ধ করা যায় না। ওরা সর্বকালের,সর্বজাতির; যুগে যুগে এসে অপকর্ম করে তারা পগারপার। মন্দ সর্বদাই ভালোর সাথে সমানতালে পথ চলে আসছে সেই আদিকাল থেকে- এ আমাদের মেনে নিতে হবে তবে মন্দকে প্রাধান্য দেয়াটাই হবে অপরাধ। আলিফ আর পুলিশের ঘটনা দিয়ে পুলিশকর্মকর্তাকে দোষারোপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়,কামনার প্রশ্ন হল মানুষের বিবেক কেন সত্য ও সুন্দরকে হাজার মিথ্যা আর অমঙ্গল হতে উদ্ধার করতে পারেনা? আর যে বিবেক তা পারেনা নিঃসন্দেহে তা অবিবেচক বিবেক,তার জন্য বিচারিক কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহন অবশ্যই অপ্রত্যাশিত। প্রশাসনে কতিপয় অদক্ষ,অযোগ্য,অসৎ লোকের আনাগোনা সম্পর্কে পাঠক আমার চাইতে ভাল মন্তব্য আপনিই করতে পারবেন তাই আমার আর কিছুই বলার নেই...