somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই রিভিউঃ জীবন যে রকমঃ

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন যে রকমঃ আয়েশা ফয়েজ
তিনি একটি বই লিখেছেন কাজেই তার সবচে বড় পরিচয় তিনি একজন লেখিকা। তবে আর আরেকটি বড় পরিচয় তিনি হুমায়ন আহমেদ এর মা। আরী একটি পরিচয় তিনি মুক্তিযুদ্ধে একজন শহীদের স্ত্রী।
বইটি মুলত লেখিকার আত্মজীবনী। নিজের জীবনের বিয়ের ঘটনা থেকে শুরু করেছেন। সময় টা ১৯৪৪। সময়ের সাথে মানুষের চিন্তা, দর্শন আর সমাজ কিভাবে পরিবর্তন হয় সেটা বুঝার জন্য এই বইটি পড়া যেতে পারে। একটা ছোট উদাহরন দেয়া যাক। তখন যৌথ পরিবারে স্বামী স্ত্রী দিনের বেলা কথা বলবে এটা ছিল স্বাভাবিকতা বিরুদ্ধ। স্বামী চাকরি পাবার রেজাল্ট পেয়ে দিনের বেলা স্ত্রীকে জানালেন। লেখিকার বর্ণনায়, ”তখন দিনের বেলা ঘরের ভিতর বউদের সাথে কথা বলা অকল্পনীয় ব্যাপার। সে সেসবের তোয়াক্কা না করে আমাকে খুজে বের করে বলল, ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম মনে আছে? আজ রেজাল্ট হলো, আমি একটা চাকরি পেয়েছি।“ ব্যক্তি জীবনের এরকম বেশ কিছু অভিজ্ঞতার বর্ণ্না আছে। সন্তান দের জন্ম নিয়ে স্মৃতি চারন করেছেন।
বইটি গত হয়ে যাওয়া সময় কে আমাদের সামনে তুলে ধরে। একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী, স্বল্প আয়ে কষ্ট করে চলা, বিভিন্ন দুর্গম স্থানে বদলী এবং বিচিত্র জীবন অভিজ্ঞতা, বেশ কয়েকজন সন্তান নিয়ে এক মুখরিত পরিবার সব মিলে হয়ত এটি একটি আটপৌরে কাহিনী হতে পারত। কিন্তু বইটির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। জীবনের এই সময়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, যে যুদ্ধে তার স্বামীকে পাকিস্তানী মিলিটারীরা গুলি করে মেরে ফেলেছে। তিনি ছেলে মেয়ে নিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। কোথাও মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা সহ আশ্রয় পেয়েছে , কেউ আবার নিজের বিপদ এড়াতে বাচ্চা কাচ্চা সহ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। নিজের জীবন বাজী রেখে যুদ্ধের মধ্যেই কিভাবে বিভিন্নজনের (যাদের মাঝে পুলিশ, মিলিটারী এবং শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আছেন) সাথে দেখা করেছেন স্বামীর খোজ পাবার জন্য তার বর্ণ্না দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “কাজলের আব্বাকে মে মাসের পাঁচ তারিখ বিকেল পাঁচটায় ধলেশ্বরী নদীর তীরে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছিল। সবাই সেটা জানত, আমাকে সামনাসামনি বলার কারো সাহস হয়নি।“
স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি পিরোজপুর গিয়ে স্বামীর দেহাবশেষ তুলে পোষ্ট মর্টেম করিয়েছেন, শহীদের মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা করেছেন এবং স্বাক্ষী প্রমাণ যোগাড় করে স্বামী হত্যার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তার বর্ণ্না পাওয়া যায়। যে মামলা নিয়ে অগ্রগতি হয়নি। এই স্মৃতিটি লিখেছেন লজ্জা নামে শিরোনাম দিয়ে। তার বর্ণ্নায় “অনেক যত্ন করে খুনের কেসটা দাঁড় করানো হয়েছিল। যারা দেখেছে তাদের স্বাক্ষী প্রমাণ। যারা কবর দিয়েছে তাদের সাক্ষী প্রমাণ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সবকিছু। প্রধান আসামী ব্রিগেডিয়ার আতিক রশীদ। সাথে মেজর এজাজ।“
যুদ্ধ পরবর্তী সরকারের কাছে কি ধরনের আচরন পেয়েছেন তার কিছু বর্ণ্না পাওয়া যায়, যা বর্তমান চেতনার বাজারে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন দেশে একজন শহীদের স্ত্রী বাড়ি পাবার একজন একজন মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করতে যান। লেখিকার বর্ণ্নায়, “দীর্ঘ সময় পর মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে দেখা হলো, আমাদের দেখে একেবারে ক্ষেপে গেলেন, বললেন, পেয়েছেন কি আপনারা? প্রত্যেকদিন সকালে এসে বসে থাকেন?সকালে ঘুম থেকে উঠেই আর কত বিধবার মুখ দেখব?” পরবর্তীতে অবশ্য কাজলের বাবার এক কালের বিশেষ বন্ধু একজন জয়েন্ট সেক্রেটারীর সাহায্যে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির এলটমেন্ট পেয়েছিলেন। সে বাড়ি থেকেও তাকে সপরিবার বের করে দেয় তখনকার রক্ষীবাহিনী। সকালে তিনি পুলিশের সাহায্য চাইতে যান।
“ভোর হতেই আমি বের হলাম। পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলাম। তারা বলল, আমরা গোলামীর পোশাক পরে বসে আছি! রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা কি করব?”
আহমদ ছফার প্রচেষ্টায় গণকন্ঠ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সে প্রেক্ষিতে রক্ষীবাহিনী প্রধান উনার সাথে যোগাযোগ করে একটি সমাধান করে দেন। উনার নামে বরাদ্দকৃত দোতলা বাসার নিচ তলা দেন রক্ষীবাহিনির একজন মেজর সুবেদারকে যিনি তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন, দোতলায় উনাদের থাকতে দেয়া হয়।
বইটি সুখপাঠ্য। আর ঐতিহাসিক প্রক্ষাপটের কারনে বইটি পড়লে মনে হবে আপনি টাইম ট্রাভেল করে ফিরে গেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ সময়ে।
বইটির প্রকাশক সময় প্রকাশনি। রকমারী থেকে অন লাইনে কিনতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×