সোস্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি তথা ‘নাৎসী’ পার্টির কুখ্যাত নেতা এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫ খৃ.)। যিনি রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-নিপীড়নে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক দুর্নাম কুড়িয়েছেন।আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন ইতিহাসে। তার সঙ্গে মিথ্যা প্রচারে দুর্নাম কুড়িয়েছেন তারই তথ্যমন্ত্রী ও প্রচার বিভাগের প্রধান ড. জোসেফ গোয়েবল্স (১৮৯৭-১৯৪৫ খৃ.)। যার একটা কৌশল ছিল ডাহা মিথ্যাকে শতবার সত্য বলে প্রচার করলে তা সত্যে পরিণত হয়। ফলে তারই অপপ্রচারে জার্মানিতে লাখ লাখ ইহুদির জীবন নাশ হয়েছিল।
হিটলারের পুঁজি ছিল মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদি বিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা। সমগ্রতাবাদী ও ফ্যাসিবাদী একনায়কত্বের রাজনীতি ও শোষণমূলক রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ ছিল তার লক্ষ্য। অন্যদিকে গোয়েবল্সের কাজ ছিল হিটলারের যুলুমের পক্ষে জনমত ঠিক রাখা এবং সেজন্য নিত্য নতুন মিথ্যা রটনা করা। এ দু’জনকে সবাই ঘৃণা করলেও বাস্তবে তারাই পরবর্তী বিশ্ব রাজনীতিতে সবচেয়ে স্মরণীয় ও বরণীয় ব্যক্তি হয়ে আছেন। কথিত ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেও হিটলার ছিলেন জার্মানির একচ্ছত্র নেতা। পুঁজি ছিল বর্ণবাদী মিথ্যাচার।
ঠিক এ যুগের হিটলাররা দেশে ‘ইসলাম’কে টার্গেট বানাচ্ছে বললে বোধ হয় ভুল হবে না। তার মতো এ যুগেও যেন নেওয়া হয়েছে ইসলাম বিরোধী ব্যাপক মিথ্যাচার। বিশ্বব্যাপী ইসলাম এবং মুসলিমদের ধ্বংস করতে করা হচ্ছে নানা ষড়যন্ত্র। যা বাস্তবায়নে সাহায্য করছে এক শ্রেণির তথাকথিত মুসলিম রাষ্ট্রীয় নেতারাই। বর্তমান বিশ্বে অমুসলিমদের সৃষ্টি জঙ্গিবাদ ইসু্কে হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। কখনো কোথায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আবার কোথায় গণতন্ত্র হরণ এবং এর ফলে সৃষ্ট জঙ্গিবাদকে দমনের নামে সর্বত্র চলছে মূলত মুসলিম শিকার। যখন কোন ইসলামি সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা প্রখ্যাত মুসলিম ব্যক্তিত্বকে টার্গেট করা হচ্ছে, তখন তার সঙ্গে জঙ্গিবাদের সম্পৃক্তার পরিকল্পিত অভিযোগ প্রচার করা হচ্ছে। মিডিয়ায় চালানো হচ্ছে সিরিজ অপপ্রচার। অত:পর এটাকে পুঁজি বানিয়ে নেয়া হচ্ছে পূর্বনির্ধারিত চূড়ান্ত পদক্ষেপ।
যেকোন অজুহাতে যেকোন রাষ্ট্রে বোমা ফেলে নিরীহ মানুষ হত্যা করাই এখন গণতন্ত্র উদ্ধারের বড় মাধ্যম। বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে দেশে দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ ও নির্যাতন এখন অঘোষিত আইনে পরিণত হয়েছে। এমনকি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার নীল নকশায় ক্ষমতার বদল হয়; ভোটাভুটি নাকি আইওয়াশ মাত্র। যুলুম করে শক্তিমানরা। তারা ব্যক্তি, দল, সরকারী প্রশাসন বা আদালত যে কেউ হ’তে পারে। আর যালেমদের বাঁচার হাতিয়ার হ’ল মিথ্যাচার। যে যত বড় যালেম, সে তত বড় মিথ্যাবাদী।
বিশ্বব্যাপী এভাবেই যুলুম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবাধিকার এখন কেবল শ্লোগানে পরিণত হয়েছে। ধর্মীয় অধিকার, সত্য বলার অধিকার, জান-মাল-ইয্যতের অধিকার, বড়-ছোট ভেদাভেদ, পুরুষ ও নারীর ভেদাভেদ ইত্যাদি সব ধরনের মানবিক মূল্যবোধ এখন ভূলুণ্ঠিত। সর্বত্র যেন চলছে মত্ত হস্তীর লড়াই। পৃথিবীর যে প্রান্তে, যে নামেই হতাহতের ঘটনা ঘটছে, কেবলই মুসলমানদের রক্ত ঝরছে।
উল্লেখ্য, হিটলার রাজধানী বার্লিনে নিজ সদ্য বিবাহিত স্ত্রীসহ বাংকারে আত্মহত্যা করেন। পরদিন ১লা মে গোয়েবল্স সস্ত্রীক আত্মহত্যা করার আগে নিজের ৬ সন্তানকে হত্যা করেন। এভাবেই এই দুই কুখ্যাত ব্যক্তির নির্মম পরিণতি হয়। এখানেই চূড়ান্ত শিক্ষা রয়েছে এ যুগের হিটলারদের; চাই সে অন্যায়ভাবে মুসলিম শিকার করুক বা অন্য যেকোন ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠীকে টার্গেট করুক।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৩৮