somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মৌতাত গোস্বামী শন্তু
একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।একজন মানুষ হিশেবে সৎ, নির্লোভ, সত্যান্বেষী, সত্যবাদী হওয়াটা জরুরী হয়ে পরে বিশ্বমানবতার জন্য, সমাজের জন্য।

লেখাজোকা

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

।।ক।।
সুযোগ নেওয়া নাকি না নেওয়া?

১.
একটা ব্যাপারে তো আমরা সবাই অভ্যস্ত—মানে আমি ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্ত বড়লোকদের নিয়া কথা বলতেছি, আশা করি এর বাইরে অন্য কোথাও এইসব হয় না—সেইটা হইল আমরা প্রায় সকলেই চাকর পালন করি। যাগোরে ‘কাজের লোক’ বলি আমরা ভদ্র ভাষায়। ভদ্রতা বেশি হইলে মেইড, গভর্নেস, সার্ভিস পারসন ইত্যাদি। কারো কারো চাকর নাই। এখন চাকর কইমা গেছে।
animal-hy মুখে আমরা সমান বলি, মানুষের প্রতি সমান আচরণ না হইলে রাগ হই। লোকজন লোকজনরে ঠকায় বইলা হিপোক্রিট বইলা গালি দেই। তো আমরা যে চাকর পালি এইটা কী? কম পয়সায় লোক ঠকানো।
আমি মনে করি না যে মানুষরে দিয়া গরুর গাড়ি কি রিকশা টানানো যাবে না। বা গাড়ির ড্রাইভারদের ৫/৬ হাজার টাকা দিয়া সারাদিনরাতি গাড়িতে বসাইয়া রাখন যাইব না। অবশ্যই যাবে। দুনিয়া ব্যবসাস্থল। এইখানে কান্ট্রি ম্যানেজার হিসাবে আপনি সাত লাখ টাকা পাইবেন বইলা চাকররে কি ড্রাইভাররে সাত হাজার টাকা দিতে হবে এমন কথা নাই। কেউ কাউরে পারতে টেকা দিতে চায় না। আমি শুনছি চাকর-বাকররা এই দেশে দুই/তিন হাজার টেকার বেশি পায় না বাসা-বাড়িতে। তো দুনিয়ার এই বাংলাখণ্ডে নিজেদের ঠকতে দিয়া কাজ করতে গরীব অসংস্কৃত অভদ্র লোকরা তো আছেনই।
আমরা কি সেই সুযোগ নিব না? এই সুযোগ নেওয়াটা হিপোক্রিসি নাকি কেউ নিতে না চাইয়া বেশি পয়সা বা ন্যায্য পয়সায় কাজ করাইলে সেইটা হিপোক্রিসি?
আমি প্রশ্ন রাইখা গেলাম। দি ফাস্ট কোশ্চেন। পরে মনে থাকলে এই নিয়া বলব।

২.
আপনারা জানেন ভদ্রতা এক রকমের শক্তি। এইটা মানুষরে বাছাই করার ক্ষমতা দেয়। ভুল জায়গায় ছেলে-মেয়ের বিয়া দেওনের থিকা ভদ্রলোকদের বাঁচায়। অল্প দিনের পয়সার লগে বেশি দিনের পয়সার যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য সেইটা ধরতে শিখায়।
সর্বোপরি কালচার বা কৃষ্টি বা সংস্কৃতি ঠিক রাখতে হেল্প করে। জগত ভারসাম্যময় থাকে।
ইভেন রেডিক্যালরাও দেখবেন ভদ্রতার বাইরে যায় না। তো হিপোক্রিসি নিয়া অন্তত আমার আলাপ আমি ভদ্র সমাজের চৌহদ্দির বাইরে থিকা দেখতে চাই না।
আই লাভ টু বি ভদ্র। আমার শার্ট প্যান্ট জুতা মানে স্যান্ডেল আছে। আমি অভদ্র লোকদের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক আলাপ করি না। অ্যাম আই এ হিপোক্রিট? মনে হয় না। মানুষ তার রুচি বা টেস্টের বাইরে গেলে বরং সেইটাই হিপোক্রিসি হবে। কিন্তু তা হইলে অন্যদের সমস্যাটা কী?

৩.
সো গরীব মানেই হইল যার ভদ্রতা নাই। যদি বাই এনি চান্স গরীব বা সেমাই গরীব ভদ্র হইয়া যায় তারে আমরা বলি বিনয়ী। তবে ‘বিনয়ী ভদ্রলোক’ অন্য জিনিস।
আগের দিনে স্কুল মাস্টাররা যখন কম পয়সার বেতন নিয়া বড়লোকদের ছেলে মেয়েদের পড়াইতে যাইতেন তখন ওইরকম ছিল। আগে তো লজিং টিচাররাও আছিলেন। এখন স্কুল মাষ্টাররা আর ‘বিনয়ী’ নাই। ওনারা ভদ্রলোক হইছেন।
আমি বলতে চাইতেছি, সর্বদা গরীবের ভদ্রতা ভদ্রলোকদের পারপাস সার্ভ করবে—এইটা তার পেশার অংশ। এইটা ভদ্রলোকদের সেই সৌজন্যমূলক ভদ্রতা না। এইটা প্রায়োগিক ভদ্রতা, অর্থাৎ পেশাদারি বিনয়। ফলে বিনয়ী ড্রাইভার (এই রকম খুব একটা পাওয়া যায় না। তেল গ্যাস চুরির দায় নিয়া থাকেন ইনারা); বিনয়ী মালী। বিনয়ী দ্বারবান। বিনয়ী সাংবাদিক। বিনয়ী দোকানদার। (কিন্তু বিনয়ী ব্যবসায়ী পাইবেন না। দরকারই নাই। পয়সা থাকলে বিনয় লাগে না।)
অনেকে দেখবেন বাড়িওয়ালারা কেন বিনয়ী না এই নিয়া খুব রাগ! বা, দেখবেন মধ্যবিত্ত ভদ্রঘরের কন্যাসন্তান রিকশাঅলারে গালি দিতেছে ‘অভদ্র’ বইলা। অন্য পেশাজীবীদেরও এই উদাহরণে নিয়া আসা যাইত। কিন্তু ভদ্রসমাজের সঙ্গে রিকশাঅলাদের যোগ বেশি। ভদ্রলোকরা শৈশব থিকা রিকশাঅলাদের পিঠ দেখতে দেখতে বড় হয়। তো ‘অভদ্র’ বলে। আগে মধ্যযুগে, সত্তর আশির দশকে স্যান্ডেল দিয়া জুতার বাড়ি মারত। পরে বস্ত্র ব্যবসায় উন্নতির ফলে রিকশাঅলারা আর খালি গায়ে গাড়ি চালান না। মনে হয় সেই কারণেই জুতার বাড়িও কম খান।)
তো রিকশাঅলাদের কেন ‘অভদ্র’ বইলা গালি দেয়? রিকশাঅলা মানেই তো যিনি ভদ্রলোক নন। আপনারা শুনছেন রিকশাঅলাদের কেউ ভদ্রলোক হয়? যেইখানে নাগরিকদের সাধারণ নামই ভদ্রলোক, সেইখানে কায়িক বা গায়ে খাটা লোকেরা আর যাই হউক ভদ্রলোক না। ভদ্র-র একটা অস্থির বা না-ফিক্সড সংজ্ঞা এই রকম হইতে পারে—যিনি কায়িক শ্রম করেন না।
‘হিপোক্রিট’ এই নামপদ ভদ্রলোকদের সঙ্গে জড়ায়ে আছে। আপনারা কখনো শুনছেন কেউরে বলতে যে এই রিকশাঅলাটা, তরকারিবেচা লোকটা, ফকিন্নির এই বাচ্চাটা—একটা হিপোক্রিট; এই গালি দিতে। আমি অবশ্য শুনছি, ‘ফকিন্নির বাচ্চা একটা হিপোক্রিট’ এই গালি দিতে আমি শুনছি। আদতে এই গালি দেওয়া হয় এই ভাইবা যে আসলে ফকিরের সন্তান সে না কিন্তু তারে দেখলে বনেদি ভদ্রলোকদের এই ধারণা হয় যে এই হালার পয়সা হইছে অল্পদিন হয়। কালচার আসে নাই। (আহারে কালচার!)
তো এই যে অবিনয়ী ভদ্র স্কুলগামী কি কলেজগামী ইউনিভার্সিটিগামী ছাত্রী রিকশাঅলার কাছ থেকে যে ভদ্রতা আশা করে এর কারণ কী?
আপনারা বলবেন, কেন ছাত্ররা/ছেলেরা কি এই আশা করে না? আমার মনে হয় না সেইটা তারা করে। তারা আশা করে বশ্যতা। সেইটা তারা বাসার মা, বোন, মেয়েদের কাছ থিকা যেমন আশা করে রিকশাঅলাদের কাছ থিকাও তেমনটা। চাইলে ধরা যায় যে রিকশাঅলা (পুরুষ) এই জীবটি সোসাইটির ভদ্র পুরুষদের কাছে নারীস্বরূপা। এবং তারা তাদেরকে ‘তুমি’ও ডাকে।
তো রিকশাঅলাদের নাগরিক মধ্যবিত্তরা—ওনারাই চরেন তো—পুরুষেরা বলেন ‘তুই’ বা ‘তুমি’—আর মেয়েরা সচরাচর আপনি বলে। মনে হয় ভয়ে বলে। যাদের গাড়ি আছেন তারা এই অভিশাপ থিকা মুক্ত।
তো নাগরিক মধ্যবিত্ত সুশীলা মেয়েদের কী সেই ভয়? নারীস্বরূপাদের প্রতি নারীদের এই ভয় কেন? রিকশা উল্টাইয়া ফেলাইয়া দিতে পারে, এমন কোনো জিনবাহিত ভয়? বা যতদূর যাবে তার আগে নামাইয়া দিয়া হুজ্জত বাঁধাবে? তো কেন বলে মেয়েরা যে ‘অভদ্র রিকশাঅলা’; মনে হয় রিকশাঅলারা ভদ্রলোকদের মেয়েদের বাগে পাওয়ার পর বিনয়ী থাকে না। এবং ছোটযাত্রার বা মাত্রার ভ্রমণকালীন কোনো সম্পর্ক তারা ডেভেলাপ করতে চায়। সেইটা রিকশার চাক্কা জোরে ঘুরাইয়া হউক, ‘তিন চাক্কা’র সংগীত কইরা হউক, বা কোনো ছোটগল্প জুইড়া দিয়াই হউক। এইটা নিশ্চিতই অপমানজনক। এতে মধ্যবিত্ত জাতিকার, মধ্যবিত্ত মেয়েজীবটির মানহ্রাস ঘটে। এবং তারা যেহেতু পরিবার দ্বারা শোষিত ফলে এইটারে ঠেকানো তাদের জন্য কঠিনও বটে। যে কারণে তারা রিকশাঅলাদের ‘আপনি’ বলতে বাধ্য হয়।
তো এই ভ্রমণকালীন যে অনুভূতিরাশির আগমন সেইটা প্রটেক্ট করতে গিয়া মেয়েরা নিশ্চয়ই অমোচনীয় শ্রেণিপার্থক্যকে ইনডিকেট করার জন্য ‘রিকশাঅলারা অভদ্র’ এমন ভাব নিয়া বইসা থাকে। বা চেহারায় দূরত্ব রক্ষাকারী কুঞ্চিত এক ভাব রক্ষা করে—যে আপনি অভদ্র আমরা ভদ্র। সেবা বিক্রয়কারীর সেবার অধিক তারা তার দেহখানির নিয়ন্ত্রণও নিয়া নিতে চায়। এবং অবজ্ঞার মারফতে সেটির (রিকশাঅলার দেহটির) সামাজিক খোজাকরণ করে। ফলত রিকশাঅলাটি একটি অলিঙ্গবাচক ভারবাহী প্রাণীতে পরিণত হয়। অর্থাৎ ভদ্রর সঙ্গে অভদ্র শ্রেণীর যেহেতু বিবাহ অসম্ভব, সুতরাং রিকশাঅলার উচিত হবে না ভদ্রঘরের মেয়েদের ব্যাপারে কোনো রোমান্টিক চিন্তার বা কল্পনার বা যৌন কল্পনার আশ্রয় নেওয়া।
ফলে সদাই আমরা এই দুই শ্রেণীর মানুষ এই শহরে বসবাস করি। অভদ্র—কায়িক শ্রমিক। আর আমরা ভদ্র—লোকেরা। এই ভদ্র লোকেরাই হিপোক্রিসি নিয়া ভাবিত। ফকিন্নির বাচ্চাদের সেই ভাবনা, মনে হয় নাই। তো আমি দেখাইতে চাইলাম যারা হিপো্ক্রিসি নিয়া ভাবেন এবং রাগেন তাদের সবার মধ্যেই হিপোক্রিসি বিরাজমান। এবং তাদের সবার এরিয়া হচ্ছে ভদ্রতা।
ভদ্রতা একটা সামাজিক আচরণবিধির নাম। হিপোক্রিসি কি এইটারে সমস্যায় ফেলায় দেয়? দেখা -যাউক। অর্থাৎ দি থার্ড কোশ্চেন, হিপোক্রিসি ভদ্রতার কাজে লাগে, নাকি ভদ্রতারে সমস্যায় ফেলায় দেয়?


S@P/ ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×