somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ যুগের মীনা কার্টুন!!! (জটিল জোকস)

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাতের খাবার খেতে বসেছে মীনা, রাজু আর তাদের পরিবার। আজকের খাবারের মেন্যু হচ্ছে সবুজ শাক-সবজি, ডিম, ডাল আর গরুর মাংস ভুনা। মীনা-রাজুর মা সবার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন। তবে খাদ্য বণ্টন করতে গিয়ে তিনি সামান্য লিঙ্গবৈষম্য করে ফেললেন। রাজুর পাতে দিলেন বেশি আর মীনার পাতে কম।
মীনা (তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করে): আমারে কম দিলা ক্যান? আমি কী অপরাধ করছি?
মীনা-রাজুর মা: তুমি কী করছ মানে? ঘরে তরকারি যা-ই আসে, তার অর্ধেক তুমি চুলে আর মুখে ঘষাঘষি করো। তাই এইডা তোমার শাস্তি।
রাজু (মীনাকে উদ্দেশ করে): আ হা হা হা, তোমার কি আর ঘরে খাওনের দরকার আছে? তোমারে বাইরে চায়নিজ রেস্টুরেন্টে খাওয়ানের মানুষের তো অভাব নাই।
মীনা-রাজুর দাদি: রাজু ঠিক কথাই কইছে, চায়নিজ রেস্টুরেন্টে মাইয়ারা খায় আর পোলারা বিল দেয়, তাই পোলা গো ঘরে বেশি বেশি খাওন দরকার।
মীনা (চোখের জল ফেলতে ফেলতে): বাঁইচা থাইকা কী লাভ? মাইয়া হইয়া জন্মাইছি বইলা আইজ এই অবস্থা, যে পোলা ঘরের কোনো কাজ-কাম করে না, তার পাতে খাবার যায় বেশি।
রাজু (চিৎকার দিয়ে): কী কইলা তুমি? আমি ঘরের কোনো কাম করি না?
মীনা: হ, ঠিকই কইছি, সারা দিন খাসদাস আর ঘুমাস, পারলে একটা দিন আমার কাম কইরা দেখ কত কষ্ট।
রাজু: আইচ্ছা কাইল তো কলেজ বন্ধ, আসো, কাইলকা আমরা দায়িত্ব পরিবর্তন করি। তুমি সারা দিন আমার কাজ করবা আর আমি তোমার কাজ করুম।
মীনা: আইচ্ছা তাইলে সেই কথাই থাকল।
টিয়া পাখি মিঠু তখন মনোযোগ দিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছিল। মীনা-রাজুর ঝগড়াতে একটু বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ওরে এত কথা বলে রে, শান্তিতে একটু খেতেও দিল না।’

পরের দিন
সময় সকাল ৮.৩০
মীনা-রাজুর মা: রাজু, ও রাজু। ঘরে আটা-ময়দা কিচ্ছু নাই, নাশতা করবি কী দিয়া? দোকানে গিয়া আটা-ময়দা নিয়া আয়। সঙ্গে চা-পাতা, চিনি, ডিম আর তেল লাগব।
রাজু (আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে): আমি পারুম না মা, আইজকে আমরা দায়িত্ব পরিবর্তন করছি। আমার কাজ মীনা করব আর মীনার কাজ আমি।
বাধ্য হয়ে মীনা ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলে কচলে দোকানে গেল। দোকানে কেনাকাটা করতে করতে বুঝতে পারল, এই কেনাকাটার ব্যাপারটা খারাপ না। বাজার থেকে সরানো টাকাগুলো মুঠোফোনে লোড করা যায়। এদিকে রাজু তখনো আরামসে ঘুমের মধ্যে। ভাবছে চুলা ধরানো, ঘর ঝাড়ু দেওয়া, মুরগিরে খাওন দেওয়া—এগুলা কে করল? আরে, মাস শেষে কাজের মহিলারে কি এমনি এমনি বেতন দেওয়া হয়?

রাজুর কার্যকলাপ (সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা)
আজকে তো আবার দায়িত্ব পরিবর্তনের দিন। মীনার মতো করে রাজুকে সারা দিন কাটাতে হবে। তাই সকালে নাশতা-টাশতা শেষ করে রাজু পাশের বাসার রহিমের মায়ের সঙ্গে গল্প করতে গেল। এই সময়টাতে মীনা সাধারণত হাবিজাবি গল্প করতে প্রতিবেশীদের বাসায় গিয়ে বসে থাকে। দুপুরের দিকে বাসায় ফিরে রাজু পত্রিকার পাতা ঘেঁটে ত্বক আর চুলের যত্ন নেওয়ার টিপসগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ল। দুটো খাবারের রেসিপি খাতায় টুকে নিল। মীনা প্রায়ই এই রেসিপিগুলো খাতায় টুকে রাখে কিন্তু কোনো দিনও কিছু বানায় না।
এমনি দুপুরে খাওয়ার পর মীনা বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে তার বয়ফ্রেন্ড দিপুর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ফোনে আলাপ করে। ফালতু টাইপের আলাপ। এই যেমন ‘কী খাইলা, কী করলা? কেমনে খাইলা? কোন হাত দিয়া খাইলা?’ এই টাইপের কথাবার্তা। রাজুর তো আর গার্লফ্রেন্ড নাই, তাই সে তার বন্ধু কুদ্দুসকে ফোন দিয়ে আলাপ শুরু করল, ‘কী খাইলা, কী করলা? কেমনে খাইলা?’ কুদ্দুস বিরক্ত হয়ে বলল, ‘****** (গালি) ***** (গালি), *******(গালি)।’ এরপর তো আর প্রেমালাপ করা যায় না। তাই রাজু সুন্দর করে লাইনটা কেটে দিল।

মীনার কার্যকলাপ (সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা)
সকালে নাশতা খাওয়ার পর রাজু গলির মোড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রাস্তায় যেসব মেয়ে যাওয়া-আসা করে তাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। মীনা তাই রাজুর মতো করে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকল। দুইটা ছেলেকে রিকশা ঠিক করে দিল। সারা দুপুর গায়ে বাতাস লাগিয়ে ফিরল দুপুরের দিকে। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচের কিছু অংশ দেখল।
এরপর রাজুর মতো কোচিংয়ে যাওয়ার নাম করে বাসা থেকে বের হয়ে গেল। যাওয়ার সময় বাসা থেকে বাড়তি কিছু টাকা নিয়ে গেল। সারা দিন নানা জায়গায় ঘোরাঘুরি করে বাসায় ফিরল সন্ধ্যার পর।

সন্ধ্যার পর
সন্ধ্যার পরে রাজু সবার জন্য চা বানাল। আর মীনা পড়তে বসল। এখন রাজুকে একটা কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। মীনার মতো করে এখন তাকে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত বসে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখতে হবে। রাজু দাঁত কিড়মিড় করে টিভিতে সিরিয়াল দেখতে বসল। আর মীনা পড়ার টেবিলে বসে পড়ার ভান করে মুঠোফোন দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে চার-পাঁচটা ছেলেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাল। দু-তিনজনের ছবিতে সুন্দর সুন্দর লাইক কমেন্ট দিল (রাজু ফেসবুকে মেয়েদের সঙ্গে যা করে আরকি)।

এদিকে ঘণ্টাখানেক হিন্দি সিরিয়াল দেখার পর রাজু নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারল না। এসে মীনার পায়ে ধরে বলল, আমারে তুমি মাফ কইরে দ্যাও, বইন। আইজ থাইকা আমার পাতের খাবারও তোমার... তাও তুমি আমারে এই শাস্তি দিয়ো না!

মীনা (মুচকি হেসে): দেখলা তো রাজু, আমরা সারা দিনে কত্ত কষ্ট করি। আগে আগে মাফ চাইয়া ভালোই করছ, নয়টার সময় আবার ইস পেয়ার কা ক্যায়া নাম দু দেখাবে আর আমি লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে পারুম না ভাইবা চউক্ষে পানি চইলা আসছিল।
রাজু (চোখের পানি মুছতে মুছতে): যাও বইন যাও, গিয়া টিভি দেখো।
মীনা: এই তো ভাইয়ের মতো ভাই।
বেচারা মিঠু ভেবেছিল অন্তত একটা দিন মীনার সঙ্গে বসে তাকে সিরিয়াল দেখতে হবে না, তাই সে সুর করে করে বলল, ‘পোড়াকপাল আমার, একটা দিনও শান্তি নাই’।

** আরও দমফাটানো হাসির জোকস পড়তে এই লিংকে ক্লিক করতে পারেন। হাজার হাজার জোকস এর ছড়াছড়ি।।।


৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×