somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন জাদুকরের কয়েকটি মন্ত্র (পর্ব -১)

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
ওটির সামনে সবাই ভিড় করে আছে। শুধু জয়নাল সেখানে নেই। সে বেবিটেক্সি নিয়ে তার বাসায় চলে গেছে। বাসা থেকে সে পাসপোর্টটা নেবে। সেখান থেকে যাবে বাদামতলী। বাদামতলী থেকে একটা নৌকা ভাড়া করে সে যাবে বুড়িগঙ্গার মাঝখানে। মাঝ বুড়িগঙ্গায় সে আল্লাহকে বলবে–আল্লাহপাক, আমি আমার জীবনের সবচে প্রিয় জিনিসের বিনিময়ে চাচাজির জীবন ভিক্ষা চাইছি। আমার সারা জীবনের শখ আমেরিকা যাওয়া। আমি আমেরিকা যাব না। আল্লাহপাক, আমি পাসপোর্টটা বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিচ্ছি।

সকাল দশটার সময় সত্যি সত্যি মাঝ বুড়িগঙ্গায় জয়নাল তার পাসপোর্ট ফেলে দিল। শামসুদ্দিন সাহেব মারা গেলেন সকাল এগারোটায়। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার জ্ঞান ছিল। তিনি চারদিকে তাকিয়ে জয়নালকে খুঁজলেন। বিড়বিড় করে বললেন, পাগলাটা গেল কোথায়?
---- আজ আমি কোথাও যাবো না।

২.
অর্ণব বিস্মিত হয়ে দেখছে তার বাবার চোখে পানি। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, বাবা কাঁদছ কেন?

নান্টু বলল, রান্নার সময় চোখে ধোঁয়া লেগেছে। এই জন্যে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কাঁদছি নাতো। আমি কাঁদব কেন? নান্টু অবাক হয়ে দেখল তার ছেলের ঠোট বেঁকে যাচ্ছে। বাবার কান্না দেখে ছেলের কান্না পেয়ে যাচ্ছে। অর্ণব প্রাণপণ চেষ্টা করছে কান্না সামলাবার। পারছে না। এইতো ছেলের চোখে পানি।

নান্টু ছেলেকে কাছে টেনে নিল। তার মনে হল এই পৃথিবীতে তারচে সুখী মানুষ আর কেউ নেই।
---- চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস।


৩.
ডাক্তার সাহেব, তুমি আমার জন্যে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলেছ–তার প্রতিদানে আমি ‘জনম জনম কাঁদিব।’
--------------------------

চিঠি শেষ করে আনিস স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। এক সময় সন্ধ্যা মিলাল, রাত হলো। অন্ধকার রাত–তারপরেও আনিসের মনে হলো–অপূর্ব জোছনা হয়েছে। জোছনার তীব্ৰ আলো শ্বেতপাথরে চকমক করছে। জোছনা গায়ে মাখার জন্যে কি-না কে জানে ডাক্তারি ব্যাগ মাথার নিচে দিয়ে আনিস লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল।

অন্ধকার ঝোপের আড়াল থেকে মতি অবাক হয়ে দৃশ্যটা দেখছে। শ্মশানঘাট সেই ধুয়ে পরিষ্কার করে। শ্মশানঘাটায় এসে এই পাগল ডাক্তার যা করে তাই তার দেখতে ভালো লাগে। তার কাছে মনে হয় রহস্যে ভরা এই মানব জীবনটাকে লোকে যত খারাপ বলে–আসলে তত খারাপ না।

মতির কাছে মনে হলো ডাক্তার শুধু যে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে তা না, মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মতি মনে মনে বলল, আহারে আহারে!
---- তেতুল বনে জোছনা ।


৪.
আমরা একটা সাইকেল কিনেছি। গভীর রাতে সাইকেলে করে দুজন ঘুরে বেড়াই। সফিক প্যাডেল করে, আমি বসে থাকি পেছনের ক্যারিয়ারে। মাঝে মাঝে রূপাদের বাড়ির সামনে থামি। বাড়ি তালাবন্ধ। অনেকদিন ধরেই নোটিশ ঝুলছে, বাড়ি বিক্রয় হইবে। নোটিশটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার সাইকেলে চড়ে বসি। আমাদের মধ্যে কথাবার্তা তেমন হয় না। নীরবতা অসহ্য বোধ হলে সফিক টুনটুন করে ঘণ্টা বাজায়। আমি বিরক্ত হয়ে বলি, আহ থামা তো। সফিক ঘণ্টা বাজানো বন্ধ করে। মাঝে মাঝে চাঁদনী রাতে আমরা শহর ছেড়ে দূরে চলে যাই। রাস্তা ফাঁকা থাকলে সফিক সাইকেল চালায় ঝড়ের বেগে। জোছনা দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে যাই … আমি চাপা গলায় বলি–আরো তাড়াতাড়ি প্যাডেল কর, আরো দ্রুত। সুফিক হাঁপাতে হাঁপাতে প্যাডেল করে, পেছনে পড়ে থাকে চাঁদের আলোয় ঢাকা আশ্চর্য শহর।
----- পাখি আমার একলা পাখি।


৫.
আসমানী একবার বলেছিল, এই যে বাবু সাহেব শুনুন। একবার আমরা ঝুমঝুমা বৃষ্টিতে হাত ধরাধরি করে রাস্তায় হাঁটব। বৃষ্টি বিলাস করব। কেমন?

ফরহাদ বলল, আচ্ছা।

মনে থাকে যেন?

আমার মনে থাকবে।

ফরহাদের মনে আছে।

তার মনে থাকলেতো কিছু যায় আসে না। বিশ্বব্রহ্মান্ডের যিনি নিয়ন্ত্রক–তাঁর কি মনে আছে? তাঁর হয়তো মনে নেই। মানুষের মনে স্বপ্ন ঢুকিয়ে দিয়ে তিনি হয়ত দূরে সরে যান। কিংবা কে বলবে তিনি হয়ত দূরে যান না। খুব কাছেই থাকেন। স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণায় মানুষ যখন ছটফট করে, তিনিও করেন। কারণ এইসব স্বপ্নতো তিনিই তৈরি করেছেন। স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট অবশ্যই তাঁকেও সইতে হবে।

ফরহাদ পেছনে তাকালো মেয়েটা ঠিক আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে ভিজছে। একটুও নড়ে নি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেই দৃষ্টিতে গভীর মমতা। বৃষ্টি হচ্ছে। আসমানী একবার বলেছিল—বৃষ্টি হল মেঘের অশ্রু। মেঘ কাঁদছে, কারণ মেঘমালার জন্মই হয়েছে কাঁদার জন্যে।
---- চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস।

৬.
তাহের জানে এইসব কিছুই না, চোখের ভুল। চোখের ভুলকে গুরুত্ব দেয়া ঠিক না। কোন কিছুকেই আসলে গুরুত্ব দেয়া ঠিক না। এই পৃথিবীতে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বেঁচে থাকা। আর সবই গুরুত্বহীন।

তারা দুজন বেঁচে থাকতে চায়। শুধুই বেঁচে থাকতে চায়। প্রকৃতির অমোঘ নির্দেশ পালন করতে চায়–হে মানব, তোমরা বেঁচে থাক। মানব প্রজাতি রক্ষার জন্যে সন্তান উৎপাদন কর। কিছুতেই যেন এই প্রজাতির বিস্তার বন্ধ না হয়। কারণ, তোমাদের নিয়ে আমার অনেক বড় পরিকল্পনা আছে। তোমরা যথাসময়ে তা জানবে।

পারুল তার সন্তানের জন্যে যে আগ্রহ, যে আনন্দ নিয়ে অপেক্ষা করে ঠিক সেই পরিমাণ আগ্রহ ও আনন্দ নিয়ে অপেক্ষা করে নিকি। সেও সন্তান-সম্ভবা হয়েছে। প্রকৃতি সব ধরনের প্রজাতিই রক্ষা করতে চায়। সবাইকে নিয়েই তার হয়ত পরিকল্পনা আছে।

আমরা তুচ্ছ মানুষ। আমরা সেই মহাশক্তির বিপুল রহস্য বুঝতে পারি না বলেই বিচলিত হই। বিচলিত হবার কিছু নেই।
----পারুল ও তিনটি কুকুর।

------------------------------------------
এমন হাজারও মন্ত্র দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন এক জাদুকর ! হুট্ করে মাথায় এলো। মাত্র কয়েকটি পোস্ট করলাম। ভাবছি এটা চালিয়ে যাবো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩৩
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×