আশি বছর বয়সের বেভারলি স্মিথ, শারীরিক ভাবে শক্ত সামর্থ, দৃঢ় মনের একজন মানুষ। সারা জীবন কাজ করেছেন ব্যাস্ত থেকেছেন। এই বয়সে নিজের মতন আনন্দ খুঁজে জীবন যাপন করেন। পড়তে খুব ভালোবাসেন। প্রতিদিন বাড়ির কাছে লাইব্রেরিতে যান। সেখানে পড়া লেখা করেন বই নিয়ে বাড়ি ফিরেন। রাতে কয়েক পাতা বই পড়ে ঘুমাতে যান প্রতিদিন।
সেদিন তেইসে এপ্রিল দুহাজার আঠারো। দুপুরের দিকে লাইব্রেরিতে যাচ্ছিলেন হেঁটে হেঁটে। বসন্তের প্রথম উত্তপমুখর দিন। সুন্দর বোদ উঠেছে।
অফিসের লাঞ্চ আওয়ার। অনেকে বেরিয়েছেন পাশে রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়া সারতে। কিছু ভ্রমণকারি ইয়াং স্ট্রিটের বড় বড় দালানের পাশের ফুটপাত দিয়ে হাটছেন।
প্রত্যেকে শান্ত , হাসিখুশি নিজের মতন জীবন যাপন করছেন। কিন্ত মূহুর্তের মাঝে অশান্ত হয়ে গেল পরিবেশ একটি ভ্যান শেপার্রড এভিনিয় থেকে ইয়াং ধরে এগলিন্ট পর্যন্ত অস্থির ভাবে চলে আসছে। সামনে যাকে পাচ্ছে তাকে উড়িয়ে দিয়ে তার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। বেভারলিসহ ছিটকে উড়ে চলে গেল অনেকে। দশ জন মানুষের জীবন মুহুর্তের মাঝে শেষ হয়ে গেল।
বেভারলির জীবন বদলে গেল চিরতরে। বেভারলি স্মিথ বেঁচে গেলেন কিন্তু উনার দুটো পা হাটু থেকে কেটে ফেলতে হলো। একাশি বছর বয়সে এখন বেভারলি হামাগুড়ি দিয়ে চলা ফেরা করতে শিখছেন। একজন সক্ষম মানুষ পঙ্গু হয়ে বিছানায় জীবন কাটাচ্ছেন। নিজের বাড়ি ছেড়ে রিহার সেন্টারে কাটাচ্ছেন গত একটা বছর। এখান থেকে বাড়ি গেলে আগের মতন একা একা চলা ফেরা করতে পারবেন না। সারাক্ষণ কে তার পাশে থাকবে। তার থাকার জন্য বাড়িটাও হুইল চেয়ার উপযোগী করতে হবে। এসব কিছুর দরকার ছিল না। নিজের মতন সয়ং সম্পূর্ণ বেভারলির।
একজন বিষন্নতায় ভুগছে কারো সাথে মিশতে পারে না। তাই সে একটি গাড়ি রেন্ট করে নিয়ে মানুষের উপর দিয়ে চালাতে লাগল। বেভারলি আর সোহাত, দুজন বেঁচে আছে সেই ঘটনায় আহতদের মধ্যে। সোহাতের প্রিয় বন্ধু ঘটনায় মারা গেছে। সোয়াত এখনো প্রিয় বন্ধুর চলে যাওয়া মানতে পারে না। সোহাতের মুখের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল। ডাক্তার সাত ঘন্টার অপারেশনের পর দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সোহাতের জীবন হয়েগেছে ঘর বন্দী। বইরে যেতে ভয় পায় সে ভীষণ ভাবে।
সেদিন ঘরে ছিলাম আমি নিজের মতন কাজে ব্যাস্ত। কিন্তু হঠাৎ একটা ফোন আসল প্রিয় জনের। আতংকিত তুমি কোথায়? তখনও আমি কিছু জানি না। আমি ঘরে আছি জেনে নিশ্চিন্ত হয়ে খবর জানাল। সবাই সবার খবর নেয়ার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে যাই। নিজেরা ভালো থাকার পরেও ভালোলাগে না। সাধারন মানুষের অকারণ দূর্ভোগ জেনে। আমরা বাইরে যাই বিভিন্ন কাজে। ঘরে ফিরি কাজ সেরে যে যার মতন। পথে কে কোথায় কি অবস্থায় আছে এ নিয়ে চিন্তার কিছু ছিল না অনেক বছর। কিন্তু এখন আতংকিত থাকি ঘরের মানুষটি ঘরে না ফেরা পর্যন্ত।
এমন একটা সময়ে আমরা বসবাস করছি। যখন মানুষ সভ্যতার চরমতম সব সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারে, আয়েসে আরামে জীবন কাটাতে পারে। যুদ্ধ অশান্তির কোন প্রয়োজন নেই। অথচ কিছু অসুস্থ বর্বর নিষ্ঠুরের কারণে আমাদের প্রতি দিন একটা শোকের দিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিদিন একটি শোক দিবস পালন করি। চার্চে হত্যা, মসজিদে হত্যা বীচে হত্যা, রাস্তায় হত্যা। ক্যাফে হত্যা। মলে হত্যা, মেরাথন দৌড়ে হত্যা, স্কুলে হত্যা, ক্যাম্পে হত্যা। প্যারিস, নরওয়ে, বেলজিয়াম, লণ্ডন, ইউএস, হলি আর্টিজম, সিরিজ বোম, বৈশাখি অনুষ্ঠানে বোম, একুশে আগষ্ট আরো আরো অনেক দিন দিবস আতংক আমাদের মানবিকতা মুখথুবড়ে পরে ।
এমন মৃত্যুর মিছিল রক্তের লালে অঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে আমাদের যাপিত প্রতিদিনের হিসাব। অথচ এরকম হওয়ার কথা ছিল না।