একটি মেয়ে নাম প্রিয়াঙ্কা । আমার বোনের কাছে আবৃত্তি শিখত। মেয়েটি গানও করত। এসবের পাশাপাশি মেধাবী মেয়েটি পড়ালেখায় ভালো ছিল। ডাক্তার হয়ে ছিল। প্রেম করে বিয়ে করেছিল। একটি বাচ্চা আছে। কিন্তু সনাতনী ভাবনার বাইরে পরিবার আসতে পারেনি। স্বামীর পরিবার মেয়েটিকে অত্যাচার করত। সাথে প্রেমিক স্বামীও। চিকিৎসক পেশায় থাকার পরও মেয়েটিকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করাত। বাড়ির কাজের লোকদের ছাড়িয়ে দিয়ে ছিল, বিয়ে হয়ে মেয়েটি বউ হয়ে আসার পরে।
সহকর্মিরা বলছেন, প্রায় সময় তার গায়ে নানারকম আঘাতের চিহ্ন থাকত। মন কষ্ট নিয়েও মেয়েটি নিরব থাকত। ওর আরেক নাম শান্তার মতন শান্ত ছিল সে। অথচ তার পেশায় উন্নতির জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে দেয়নি শ্বশুড় বাড়ির লোকজন, মেয়েটি সব রকম প্রস্তুতি নেওয়ার পরও।
মা তাকে অনেক ভালোবেসে গান বাজনা, আবৃত্তি শিখাতে নিয়ে যেতেন। সময় দিতেন। কিন্তু নিজের পছন্দে বিয়ে করাটা হয় তো অপছন্দের ছিল। মেয়েটি অভিভাবকের অমতে এবং প্রেম করে বিয়ে করার একটা কারণে সামাজিক, ধর্মীয় নিয়মে আটকে গেল। তার সামনে এই অসহ্য জীবন থেকে বাঁচার আর কোন পথ খোলা রইল না। সমাজ এভাবেই বিচার করে একটি মেয়েকে। তার জীবনের সমস্ত প্রতিভার জলাঞ্জলি দিয়ে মা দিবসের দিন মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে শ্বশুড়বাড়ির লোকজন প্রচার করে।
আত্মহত্যা না হয়ে হত্যাও হতে পারে। মেয়েটি দুমাসের গর্ভবতি ছিল। জানা গেল মেয়েটি বসার ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলেছিল।
অনেক যত্নে শিক্ষিত করা হয় একটি মেয়েকে। শিল্পকলার নানা শাখায় জ্ঞানী করা হয়। কিন্তু নিজেকে স্বনির্ভর করার মূলমন্ত্রটাই শিখানো হয় না মেয়েদের। মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে শিখানো হয় না কখনো। মাথা নিচু করে ঝুঁকে থাকলেই ভালোলাগে সবার কাছে।
বিয়ে করেছে এবং প্রেম করে বিয়ে করেছে বলে অসম্মান, অমর্যাদায় সংসার করে যেতে হবেই। সবাই এই ধরনাটা মাথায় নিয়ে বসে থাকে। অল্প বয়সের আবেগে ভুল সঙ্গী নির্বাচন করতে পারে তার মানে এই নয় তার সাথেই মাথাকুটে থাকতে হবে। কেন মেয়ের খারাপ থাকা শোনেও পরিবার মেয়েটির পাশে দাঁড়ায় না সাথে সাথে।
বিয়ে মানে যেন নারীদের জীবন শেষ। এই ভাবনার পরিবর্তন হওয়া দরকার। সব পরিবারের সদস্যদের বোঝা উচিত। বিয়ে যদি সুখের না হয় তবে সে বিয়ের জন্য কষ্ট মেনে সংসারে থাকার কথা বলার চেয়ে মেয়েটাকে সাহায্য সহযোগীতা করা এই কষ্ট অবসানের।
একবার বিয়ে হওয়া মানেই মেয়েদের ঘাড় গুজে সেখানে সব কষ্ট মেনে নিয়ে থাকতে হবে এইসব রীতি নিয়মের অবসান হওয়া দরকার।
নিয়মগুলো বদল হওয়া দরকার ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:১০