বাংলাদেশ সব কিছুতেই লাস্ট থাকে। কিন্তু দুদিন আগে সিবিসির খবরে যখন বললো বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ২00২ সালে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করে ছিল বাংলাদেশ, খবরটা শুনে খুব ভালোলাগলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই শুরুটা খুব আয়োজন করে শুরু হলেও কার্যকরী হয়নি। ধারাটা ধরে রাখা হয়নি। বাংলাদেশে এখনো প্রচুর প্লাস্টিক তৈরি এবং ব্যবহার হচ্ছে। অনেক দেশ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। প্লাষ্টিকের ব্যাগ বোতল কন্টেইনার ফিরত দিয়ে টোকেন থেকে পয়সা দেয়ার বিনিময়ে। নানা ভাবে জনগনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ বিশাল এই পদক্ষেপের কাজটা শুরু করেও ধরে রাখতে পারেনি। বরং যেখানে সেখানে প্লাষ্টিকের বর্জ পরিবেশ দূষণর সাথে জলাবদ্ধতা, নর্দমা বন্ধ, মাটি নষ্টর মতন নানা অপকারিতায় জর্জরিত হয়ে আছে। অথচ সোনালি আঁশের দেশ বাংলাদেশে পরিবেশ বান্ধব পাটের ব্যাগ ব্যবহারে সুন্দর পরিবেশ হয়ে উঠতে পারত। বিশ্বে প্রথম পরিবেশ বান্ধব একটি দেশ হিসাবে পরিচিতি ধরে রাখতে পারত।
পাটের ব্যাগও এই সময়ের পরিবেশবীদদের কাছে গ্রহণীয় হতো। রফ্তানী হতে পারত। আমার ছোটবেলায় পাটের ব্যাগ নিয়ে বাজারের যাওয়ার নিয়ম ছিল। তখন কোন প্লাষ্টিকের ব্যাগ দেখিনি। প্লাষ্টিকের কাছে মার খেয়েছে পরিবেশের সুন্দর প্রাকৃতিক উপাদান পাট।
পরিবেশ দূষণ নিয়ে এখন যত ভাবা এবং বলা হচ্ছে পৃথিবী জুড়ে্ আগে এতটা জোড় দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ এই সময়ে এগিয়ে থাকা একটি দেশ হতে পারত। ২০০২ থেকে প্লাষ্টিক বন্ধ হওয়া পরিবেশ বান্ধব দেশ হিসাবে।
প্লাষ্টিক অনেক দেশে বোঝা হয়েছে এখন। দখল করছে সমুদ্রের বিশাল অংশও। যারা পরিবেশ নিয়ে ভাবে তাদের কাছে এই বিষয়টা খুবই কষ্টের। কিন্তু বলা যায় ৯৮ ভাগ মানুষই অজ্ঞ এ বিষয়ে। তারা প্লাষ্টিক ব্যবহারের সুবিধা বোঝে। ভয়াবহ ক্ষতির দিকটা জানে না।
২০২১ সালের মধ্যে সব প্লাষ্টিকের জিনিস বর্জন করার ঘোষনা দিয়েছে কানাডা। জাতীয় ভাবে বর্তমানের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হওয়ার ঘোষনা আসার আগেই কিছু ভলান্টিায়ারের উদ্যোগে, নোভাস্কোসা প্রভিন্সে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। স্বেচ্ছাসেবী মনোভাব সাহায্য করতে পারে পরিবেশকে।
আসলে কিছু মানুষ চেষ্টা করে ভালো কিছু প্রচার করার, তাদের সুন্দর প্রচারণা অন্যরা ভালোর জন্য গ্রহণ করলে সব পরিবর্তনই সম্ভব। নোভাস্কসার রেস্তুরা মালিক, টেক আউটের খাবার দোকানগুলির মালিক লজ্জা পায় প্লাষ্টিক ব্যবহার করতে। ভলান্টিয়ারদের সেলাই করে দেয়া ব্যাগ গুলোই ক্রেতা এবং দোকানীরা ব্যবহার করে প্লাস্টিকের ব্যাগের চেয়ে। হাসি মুখে অন্যরাও সামিল হয়ে যাচ্ছে এই কাজ করতে। বাজারের ব্যাগ বানানোর জন্য পুরানো কাপড় দিয়েও সাহায্য করছে কেউ। তারা অসুবিধা হলেও ভালোর জন্য ফিরে যাচ্ছে কাঁচের পেয়ালা বোতল জার কাগজ ব্যবহারে। জাতিয় ভাবে ঘোষনার অপেক্ষা করতে হয় না।
আমি অনেকদিন পাঁচ সেন্টে প্লাস্টিক ব্যাগ কিনে ব্যবহার করা বন্ধ করেছি। কিন্তু দোকান গুলোতে ঠিক ব্যবহার হচ্ছে। এবং অনেক ক্রেতা পাঁচ সেন্ট করে দু তিন ডলারের ব্যাগ কিনে ফেলেন একবার সদাই করতে গিয়ে। সে অর্থ কোথায় যায় জানি না। আবার এই অর্থে কেনা প্লাস্টিক চলে আসে রাস্তায়, উড়ে বেড়ায় বাতাসে গাছের ডালে। কখনো ভেসে যায় জলের ভিতর। কখনো স্কুলের শিক্ষার্থি বা কমিউনিটির মানুষ আয়োজন করে এক একটা এলাকা পরিস্কার করে। অথচ প্লাষ্টিক না থাকলে এই পরিচ্ছন্নতার জ্বালাতনও থাকত না।
ক্রেতা সচেতনতা এই ব্যবহার কমে যাবে।
অনেক আগে থেকে জানি। প্লাস্টিকের মধ্যে খাবার রাখা ঠিক না। অথচ ফ্রিজে খাবার রাখা হয় প্লাস্টিকে।
বোতলজাত পানির সাথে পান করা হয় প্লাস্টিক। এত ছোট আকারে মিশে থাকে যা চোখে না দেখে, পান করা হয়। মিশে যায় আমাদের শরীরে। কাগজ এবং কাঁচের বোতলে তরল অনেক কিছু বিক্রি হলেও কোনটা কিনবে সেটা ক্রেতার পছন্দ।
ভিতরের বস্তুর জন্য যতটা আগ্রহ মোড়কের ভালো মন্দের হিসাব হয়তো অনেক ক্রেতাও করেন না।
বিজ্ঞানের আবিস্কারের সুফল এবং কুফল দুই বিদ্যমান। কতটা গ্রহণ এবং বর্জন করা হবে তা নির্ভর করে ভোক্তার পছন্দের উপর। তবে জাতীয় ভাবে এই কুফল যুক্ত প্লাষ্টিক বর্জন করলে ভালো হবে । সেটা সব দেশেই হওয়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১২:০৯