কাল বেশ খানিকটা সময় পেলাম দুপুরের পর। ঘরে বসে ভালোলাগল না বেরিয়ে পরলাম বাড়ির কাছে ঘুরে বেড়ানোর জন্য। সে বেড়িয়ে পরা আমাকে হাঁটিয়ে নিল আপ ডাউনে পাঁচ পাঁচ দশ কিলোমিটার। অনেকদিন পর অনেকটা লম্বা পথ হাঁটলাম। পাহাড়ি চড়াই বেয়ে উঠা নামার মাঝে হাফ ধরে যাচ্ছিল। কখনো মনে হলো অনেকদিন আগের চীনের প্রাচিরে হাঁটার মতন লম্বা পথ ধরে হাঁটছি যেন।
পার্কে পৌঁছে দেখলাম আমি একা না। আমার মতন বোহেমিয়ান আরো বেশ কিছু আছে। কেউ ফিরছে কেউ আসছে। কারো সাথে মিলে মিশে এক সাথেই চলছিল পথ চলা।
গাছপালার ভিতর দিয়ে আঁকাবাঁকা হাঁটা পথ চলে গেছে একটি ছোট্টো জলপ্রপাতের কাছে। সেই জলপ্রপাত ধরতে পাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত হাঁটা। হাঁটা পথে অনেক শুঁয়োপোকা দেখলাম গাড় খয়েরি এবং কালোর মিশেলে। আমি দুচারটাকে না মাড়িয়ে চলতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু অনেকগুলো চিরে চ্যাপ্টা হয়ে আছে মানুষের হাঁটার পথে এসে। এই ঝর্ণা কাছে এসে গেলো ভাবছি কিন্তু তার কাছে কিছুতেই পৌঁছানো হচ্ছে না। শুধু সুরের মূর্ছনা শুনতে পাচ্ছি বনের মর্মরের সাথে।
তার সাথে দেখা হওয়ার পর িফরার পথে উপরে উঠতে টের পেলাম পাহাড়ে চড়ার কষ্ট। অনেকটা সময় নিয়ে ধীর পায়ে চলতে হলো উপরে উঠে অাসেত ।
রাতের তুমুল বৃষ্টি শেষে ভেজা বুনোঘ্রাণ উজ্জ্বল রোদের আলোয় মনমাতানো সময় ছিল।
গাছের রঙিন পাতার ভিতর দিয়ে পাহাড়ি উঁচু নিচু ট্রেইল ধরে হাঁটতে মন্দ লাগছিল না। কাল উষ্ণতাও ছিল বেশ ।
কোথাও শান্ত জলে পদ্মপাতার স্থির ভেসে থাকা । কোথাও পাতার মর্মর ধ্বনী। কোথাও রোদের আলোর উজ্জ্বলতা তো কোথাও ছায়া গম্ভীর ঘন অন্ধকার। পাইনের সারি তো পপলারের ডালের দোল খাওয়া।
ঝরে পরা জলের শব্দ আর কাকের ডাকের সাথে মিশে ছিল কাটবেড়ালি আর চিপমাঙ্কের ছুটাছুটির শব্দ। মিলে মিশে বেশ আনন্দময় বনভূমি। এখানে অনেক পার্ক ন্যাচারেল ভাবে বাড়তে দেয়া হয়, গাছ তৃণ, গুল্ম সেভাবে বেড়ে উঠে বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে বনভূমি আপন ভঙ্গিমায়। নতুন কোন লতাপাতার দেখা পেলাম না। যাদের সাথে দেখা হলো সবার সাথে আমার নিত্য বসবাস। ভীষণ চেনা তাই পাহাড়ি চড়াই উতরাই পেরুনা ছাড়া তেমন বৈচিত্র ছিল না। তবু অনেকটা হাঁটার সুখ পেল শরীর। বাতাস এবং পাতার শেষ ঘ্রাণ টেনে আলোকিত হলাম।
আপনমনে হাঁটতে হাঁটতে গান করছিলাম গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা মাটির পথ। কিন্তু মনে হলো রাঙ্গা মাটি নয় হবে রাঙ্গা পাতার বনভূমি।দুপুর যখন বিকাল হয়ে গেলা সূর্যের মুখােমুখি চলেত হচ্ছিল। মুখ চোখ কুচকে উঠে সূর্যের প্রখরতায় সরাসরি মুখের উপর অালো পড়ায়।
ফিরার পথে কাছেই একটা গলফ ক্লাবে ঢু মারলাম। একদম আদি অকৃত্তিম থেকে চূড়ান্ত সাজানো এবং ভীষণ ধনীদের খেলার এই গলফ ক্লাবের বিশাল চত্তর একটি গাছের পাতাও অযত্নে অবহেলায় কোথাও পড়ে নাই। ঘরের চেয়ে বেশি সাজানো এর প্রতিটি ইঞ্চি। আরো বিস্তৃত হচ্ছে কর্মযজ্ঞ চলছে অনেকটা জায়গা জুড়ে।
হুসহাস দামীদামী গাড়ি চালিয়ে আসছে যাচ্ছে সদস্যরা। ছোটছোট গাড়ি নিয়ে সব যত্নে রক্ষা করছে কর্মিরা। তার মাঝে চক্কর দিলাম কয়েকবার আমি গাড়ি নিয়ে। রেস্টুরেন্টে ঢুকে পরলাম খাবার খেতে। তেমন বৈচিত্র কিছু পেলাম না। দামের ব্যাতিক্রম ছাড়া। সূর্যটা লাল হয়ে উঠেছে। আলো ছড়িয়ে রক্তিম করে তুলেছে পৃথিবী। লাল পাতার বনে মনে হয় আগুন লেগে গেছে। সোনা বরণ রূপ ঠিকরে পরছে।
দারুণ সুন্দর একটা সন্ধ্যা নামছে। সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে তার আলো ফুরানোর আগেই বাড়ি পৌছাব ভেবে পথে নামলাম। সারা সময় আকাশের নানা রঙ দৃষ্টি নন্দন হয়ে মন ভোলানোর খেলা খেলল আমার সাথে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৪:৩৭