somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

হুজুগে গুজুবে জাতি

২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে ঠিক কোন বিষয়টা সৎ এবং সততার সাথে চলে ভাবতে গিয়ে মাথা নষ্ট হওয়ার যোগার। দেশে যারা আত্মিয় বন্ধু এবং সারা দেশের মানুষ আছেন তাদের অসহায় অবস্থাটা বড় বেশি কষ্ট দেয়। একটা জাতিকে আগাতে না দিয়ে পিছনে টেনে রাখার কি ভীষণ রকম প্রচেষ্টা কিছু নোংরা মানসিকতার মানুষের। আর তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন সাধারন জনতা। খেতে পড়তে, চলতে সামাজিকতায় প্রতিটি ক্ষেত্রে।
একটা সময় জিঞ্জিরা মেড বিখ্যাত ছিল সব আসলের নকল পণ্য বানানোর জন্য। জিঞ্জিরায়য় তৈরি হয়ে দোকানের শো-কেসে চলে আসত আসলের মতন দেখতে নকল পণ্য। এখন সারা দেশে তার ব্যাপ্তী। এতদিন শুনলাম খাদ্যে ভেজাল। মাছ, সবজী, ফলে ফরমালিন।এখন তার উপর নকল সব ক্যামিকেল দিয়ে আসল খাদ্য দ্রব্য উৎপন্ন করছে দেশের বিজ্ঞানীরা। দুধ মিষ্টি, দই, ঘি, আইসক্রিম, তেল চিনি লবণ মশলা, ক্রীম কসমেটিকস, যা কিছু নিত্য ব্যবহার্য সব কিছুতেই ভেজাল তৈরি করতে পারদর্শি এরা।
কাঠের গুড়া দিয়ে যে মুরগির কাটলেট বানানো যায় এবং তা নানা দামী রেস্টুরেন্টে বিক্রি হয় এ রকম ভেজাল খাওয়ানোয় কােন রকম বিকার হয় না ধর্ম ভীরু ধার্মিক মানুষের দেশে। ধর্মভীরু এইসব মানুষ কথায় কথায় উত্তেজিত হয়ে প্রতিবাদে অস্থির হন। সঠিক কথা বলা মানুষের কল্লা কেটে ফেলতেও তাদের খারাপ লাগে না। কিন্তু যাপিত জীবনের নানা রকম দূর্নীতি ভেজালের বিষয়ে মুখ বন্ধ করে রাখেন, প্রতিবাদে মুখর হন না।
শুধু খাবার না জীবন রক্ষা কারি ঔষধেও ভেজাল। ডাক্তারিতে, নার্সিংয়ে ভেজাল। পরিবহণে ভেজাল।
রাস্তা পুল তৈরি হয় সাথে সাথে ভেঙ্গে পরে, গর্ত দেখা দেয়। ভেজাল সিমেন্ট রড উপকরণের সাথে বানানেওলাদের মনে ভেজাল সঠিক ভাবে তৈরি না করার। সব কিছুতেই ফাঁকিবাজী, দূর্নীতি,দূর্ভিসন্ধি। অফিসের কাজে, স্কুলে শিক্ষায়। ছাত্র এবং শিক্ষক সবার মধ্যে দূর্নীতির প্রবনতা। অনেকে দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতে চান না কিন্তু নানা রকম নিয়মের জালে তারা বাধ্য হয়ে নিজের কাজ উদ্ধারের জন্য পিয়ন থেকে উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে নতি স্বীকার করে নিজের কাজটি করিয়ে নেন।
সঠিক ভাবে কোন কাগজ পত্র, পাসপোর্ট, পেনশন, বীল জমি রেজিস্টার কিচ্ছু পাওয়ার সুযোগ নেই। হয় ক্ষমতা নয় অর্থ তার বিনিময়ে সব কাজ হয়। সব জায়গায় সুযোগ সন্ধানীদের লম্বা হাত। তা এড়িয়ে কাজ করা বড় কষ্টের।
কাল একটা ছবি চোখের সামনে এসে গেল। শিক্ষক পরীক্ষার ক্লাসে উত্তর বলে দেননি বলে তার ঠোঁট কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে আরেক শিক্ষক। নিষ্ঠুরতার ভয়াবহ অবস্থা দেখে কেবল শিউরে উঠলাম একা একা। আরেকটি বাচ্চা ছেলের কান্নারত ছবি ঘুরছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যাকে দিয়ে শিক্ষক সব উত্তর অন্য শিক্ষার্থিদের লিখতে সাহায্য করছিলেন। আর উর্ধতন কর্মকর্তারা পরীক্ষার হলে এসে সেই বাচ্চাটার খাতা নিয়ে নিলেন, অনিয়মের অভিযোগে। অথচ শিক্ষকরা যারা তাকে দিয়ে উত্তর জেনে নিচ্ছেলেন অনিয়ম করে, তারা বাচ্চাটিকে রক্ষা করলেন না শাস্তি থেকে। অনিয়মকারীরা রইলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সরল বাচ্চা শিশুটি জীবনের শুরুতেই পেল চরম আঘাত।
আগে জানতাম ছাত্ররা নকল করে এখন দেখছি শিক্ষকরাও নকল করতে সাহায্য করে।

মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে একটার পর একটা সংকট তৈরি করে জনগণের জীবন যাপন অস্তির করে তোলার মধ্যে নির্মল আনন্দ পায় কিছু মানুষ। নানা রকম হুজুগ তুলে কখনো বাচ্চার মাথা কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কখনো ছেলে ধরা বলে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। কখনো নিত্য প্রয়োজনীয় পেয়াজ মজুদ করে রেখে মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পচে গেলে নদীতে ফেলে পরিবেশ দূষণ করতেও একটুও মনে বাঁধছে না। পরিবেশটা তো তাদের ছোঁবে না। নদীর প্রাণী মরে গেলে বা মানুষের উপর বিরূপ প্রভাব পরলে তাদের কি যায় আসে। নানা ভাবে নতুন অভিসন্ধিতে তারা আবার টাকা বানাবে।
ধরা পরার ভয় পেলে, বস্তা ভরা টাকা পানিতে, রাস্তায় ফেলে দিবে। এত টাকা আছে তাদের ধরা না পরার জন্য কিছু ফেলে দিলে এমন কিছু যাবে আসবে না তাদের।
যুদ্ধ শেষে স্বাধীন হওয়া একটি জাতি প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত নানা ভাবে দূর্নীতি, ফাঁকিবাজী,সাধনা করে গেছে নিজের আখের গোছানোয় ব্যাস্ত থেকেছে কিছু মানুষ। তাদের কারণে দূর্ভোগ পোহিয়েছে সাধারন জনগন বারে বারে। মুক্তিযোদ্ধারা যে দেশে নিপীড়িত আর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে সমাজপতি তাদের দেশের জন্য চেতনা কতটা সুন্দর হবে। যে দেশে জাতীয় বীর নেতাদের হত্যা করে ফেলে নির্মম ভাবে এখন পর্যন্ত তাদের কোন অনুশোচনা নেই এবং জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দেয় নানা রকম বিরূপ দ্বন্ধমূলক ভাবনা। সে দেশ কি ভাবে এগিয়ে যাবে এত মত পথ নিয়ে।
কখনোই কোন বিষয়ে দেশের মানুষ এক হতে পারে না। জাতীয়ও কোন ঐক্য নেই্ কোন কিছুতেই।
আমার জার্মান বন্ধুদের কাছে শুনি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর তারা তওরা করেছে আর কখনো যুদ্ধ না করার। তারা ভীষণ ভাবে লজ্জিত, তাদের দেশের একজন মানুষের জন্য পৃথিবী ব্যাপী মানুষের যুদ্ধে মৃত্যু দূভোর্গের কারণে। আমার জাপানি বন্ধুদের থেকে শুনি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশটাকে পূর্নরুদ্ধার করার জন্য তারা বিষর্জন দেয় সব রকম অহংকার, যুদ্ধমনোভাব, হিংসা হানাহানি।
তারা একান্ত ভাবে নিজেদের নিয়োজিত করে নিজের দেশটিকে উন্নত করার। এবং তারা উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করে একাগ্র নিবিষ্টতায়। আমরা তা অবলোকন করি। আর ভাবি জাপানিরা এত সত এবং কর্মনিষ্ঠ কেন? এত উন্নতি কেমনে করলো?
কিন্তু আমরা নিজেদের জন্য একাগ্রতায় সৎ হওয়ার সাধনা অনুকরণ করি না। বরং সুযোগে দাও মারার তাল খুঁজি।
বাঙালিরা দরিদ্র এবং সেই দারিদ্রতা থেকে মুক্তির চেষ্টা নানা রকম ফাঁকিবাজী ধোঁকাবাজী করে। সেই ফাঁকিবাজী মানসিকতা এখন ছড়িয়ে পরেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। নানা ভাবে ফন্দিফিকির করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায় অর্থের বিনিময়ে।
মানুষকে ঠকিয়ে যে যত ধন সম্পত্তি করতে পেরেছে । সে পায় সম্মান আমজনতার কাছে। অতি সাধারন ভালো মানুষরা নিগৃহীত হয়। আর নিজেদের দোষারোপ করে এই পরিস্থিতিতে। অসহায় তারা কি আর করতে পারে। ভালো মানুষ হওয়ার কষ্টে তাদের জীবন ত্যানা ত্যানা।
অন্ধ্রেরন্ধ্রে এত পচনশীলতা নোংরা মনভাব নিয়ে একটা জাতি কি ভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবে?

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৪৭
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×