somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রঙে ডুবে দেখা অটাম

২৪ শে নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বনে কি আগুন লেগেছে? না না না পলাশ ফুটেছে। বাইরে চোখ পরলেই অতি প্রিয় গানের কলি মনে আসছে। কিন্তু এখন পলাশ ফোটার সময় নয়। এখানে পলাশ ফোটেও না। অথচ প্রকৃতির রঙিন রূপ দেখলে মনে হয় আগুন লেগেছে চারপাশে। অথবা পলাশের আগুন রঙে সেজেছে।
পলাশের লালে বা কৃষ্ণচূড়ার লালে রাঙা চারদিক। ফুল নয় এখানে গাছের পাতারা রাঙা হয়ে উঠে ঝরে পরার আগে। মাত্র পাঁচ মাস আগে যে পাতা নানা সেডের সবুজ হয়ে গাছে গাছে চোখ মেলে ছিল। ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ জীবন পেলো পল্লবের ভাড়ে গাছগুলা ঝাকড়া মাথার সবুজ পাতা দুলিয়ে হাসছিল। বড় বড় ছাতা হয়ে ছায়া দিচ্ছিল গ্রীষ্ম দিনে।
শরত আসার সাথে তাদের জীবনের সময় ফুরিয়ে এলো, তাদের এখন ঝরে যাওয়ার অপেক্ষা। এই অল্প সময়ের মাঝে পাতা সঞ্চয় করে দিয়েছে গাছের বাকি ক'মাস বেঁচে থাকার রসদ।
পত্রপল্লবহীন ডাল মেলে গাছগুলো নিরবে অপেক্ষা করবে শীত শেষ হয়ে বসন্ত ফিরে আশার। অপেক্ষার সময়টা অনেক লম্বাপ্রায় সাত থেকে আট মাস। বসন্ত এলে তখন আবার তারা হেসে উঠবে মনের আনন্দে। তবে শীতের দীর্ঘ সময়ে অনেকের ডাল ভাঙ্গবে, গাছেরও মরন হতে পারে। তুমুল বরফের ভাড়ে উপড়ে পরে গেলে। সে সময়টা আসছে সামনে। কিন্তু এখন শরত। অটাম কিন্তু অটামের চেয়ে ফল বলা হয় বেশি। পাতারা ঝরে যাবে তাই বুঝি এই ফল শব্দটা ব্যাবহার হয় বেশি,ঝরে যাওয়ার সাথে মিল রেখে।
পাতাদের ঝরে যাওয়ার আয়োজনটা বড় বেশি ঝলমলে। বড় বেশি অন্য রকম। চলে যাবে বলে পাতারা সাজ করছে মনের মাধুরী মিশিয়ে। আনন্দে সাজ করছে রঙিন সাজে, সেজে উঠে সাজিয়ে দিয়েছে পুরো চোখের সামনের ধরনীতল।
যে দিকে দৃষ্টি যায় উজ্জ্বল রঙ লাল, কমলা, হলুদ,খয়েরি মেজেন্টা, মেহদী রঙ। কত্ত যে রঙের বাহার, বর্ণনার ভাষা নাই। সব রঙের নাম পাই না খুঁজে।
গত কয়েক বছর ফলের রঙিন সময়টা ছিল খুব সংক্ষিপ্ত। পাতা গুলো রঙিন হয়ে উঠতে না উঠতেই বাতাস আর বৃষ্টি হামলে পরল সপ্তাহ, দশদিনের মধ্যেই উড়ে উড়ে ঝরাপাতারা মাটিতে নুপুর বাজাতে শুরু করল। মন ভরে দেখার আগেই গাছগুলো ন্যাড়া হয়ে গিয়েছিল।
গত বছর ফল দেখার সুযোগ হয়নি আমার শরতের শুরুতে দুয়েকটা পাতা কেবল সিঁদুর রঙে রাঙা হয়ে উঠছিল, আমি ভ্রমনে বেড়িয়ে ছিলাম তখন। জার্মানির অনেকটা জুড়ে ঘুরছিলাম। বেশ কয়েকটা শহর পারি দিয়েছিলাম কয়েকদিন ধরে, গোল্ডেন অক্টোবর শুরু হওয়ার আগেই সেখান থকে রওনা হয়েছিলাম দেশের পথে।
শীত শীত অবহাওয়া থেকে তুমুল গরমে গিয়ে পরলাম তখন। এত্ত গরম দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা অনেকদিন শীতল আবহাওয়ায় থেকে অভ্যাসই খারাপ হয়ে গেছে, গরমে খুব বেশি হাসফাঁস লাগে। তবে অক্টোবরের শেষে একটু সহনীয় হতে শুরু হয়েছিল। আর একটা প্রিয় ঘ্রাণ অনেকদিন পর উপভোগ করেছিলাম বাংলাদেশে, ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ। আর কার কাছে কেমন লাগে জানি না। আমার কাছে দারুণ লাগে।
গত বছর ছিল সবুজের সাথে বাস। লালপাতার সাথে কাটানোর সময়টা মিস হয়েছে।
তাই বুঝি এ বছর রঙ আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। সেই সেপ্টেম্বর থেকে রঙের দুনিয়ায় বাস করছি। এবছর পাতায় রঙ ধরার আগে খুব গোমড়া মুখো আকাশ ছিল প্রায় দিন পনের। মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি। এর একটা বড় কারন ছিল। ইষ্টকোষ্টের উপর দিয়ে বয়ে গেছে তুমুল ঝড়। লণ্ড ভণ্ড করে দিয়ে গেছে অনেক মানুষের সাজানো জীবন। পূর্ব উপকূলের ঝড় ফিওনা। হাজার মাইল দূরে শক্তিশালী ঝড়ের প্রভাব, আকাশ অন্ধকার থেকেছে কয়েকদিন ধরে। শুধু পূর্ব উপকুলে নয় দক্ষিণে কিউবা এবং ফ্লোরিডাকেও লন্ডভণ্ড করেছে ঝড় ইয়ান। নাম ভিন্ন কিন্তু কাজ ছিল একই বাড়ি ঘর ভেঙ্গে, গাছ উপড়ে, বন্যা বইয়ে, মানুষের সাজানো জীবন তছনছ করা মাত্র অল্প সময়ের কাজ ছিল এই সব ঝড়ের। যে কোন সময় আমাদের উপরও আসতে পারত তার প্রভাব। তবে বৃষ্টি ঝড় বাতাসের চেয়ে বেশি ততটা শক্তি দেখায়নি এদিকে। থেকেছি মেঘলা দিনের গুমট বিষন্ন আলোয় দীর্ঘ পনের দিনের মতন ।
ঝড়ের দাপট চলে গেলে, অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ থেকে মেঘগুলো সরে গেলে দিনগুলো হাসতে শুরু করল আলো ছড়িয়ে, রঙ ছড়িয়ে।
সাথে হাসছে গাছ আলো ঝলমল রঙে রঙিন সাজে। আর সাজটা চলছে দীর্ঘ সময় প্রায় মাসের বেশি সময় ধরে এবার। ঝড়ের পরে বেশ সুন্দর দিনগুলি। যেন অনেকদিনের উৎসব আয়োজন চলছে প্রকৃতি জুড়ে।
আমি আছি চক্করের উপর, প্রায় প্রতিদিন পারি দেই শ তিনচার কিলোমিটার পথ, এক এক দিন এক এক দিকে। আর মন ভুলানো চোখ জুড়ানো রূপের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে ভুলে যাই আমি যাচ্ছি কোথায় কি কাজে।
কখন রাস্তার দুপাশে হলুদ আলো ছড়ানো বনভূমি,গাছ কখনো লালে লাল রক্তিম বন। আগুন রঙা পাহাড়ের চূড়া যেন দেখা যায়। যেন কোন স্বপ্নের দেশে নিয়ে যায়। যেতে যেতে মাঝে মাঝে থেমে হারিয়ে যাই মায়াবী সে রূপের ভুবনে।
কখনো কাজ শেষে চুপচাপ পাড়ি দেই পাহাড়ি রাস্তা, ইচ্ছে খুশি যে দিক যেতে মন চায় সেদিকে ঘুরে। বিকাল সময়গুলো বেশ লম্বা। আর এই সুযোগ নিয়ে মায়াবী সময়টাকে উপভোগ করি কাজের ফাঁকফোকর গলে সময় পেলেই।
বিকেল বা সন্ধ্যার আলোয় রঙের খেলা যেন আরও তুমুল ভাবে জেগে উঠে। দুপুর বেলা যে রঙ দেখা যায় সন্ধ্যা বা বিকালে তা হয়ে উঠে আরো মায়াময় আকর্ষণীও।
বাড়ি ভর্তি গাছের মায়া ওরা তা আছেই চেনা জগত। কিন্তু দুপা দূরে গেলেই অন্য পৃথিবী অন্য ভুবন। কত যে ছবি তুলেছি বছর বছর ধরে তারপরও মনে হয় এ অপরূপ সৌন্দর্য ঠিক মতন ধরতে পারিনি। আরো ছবি তুলে রাখি নিজের কাছে। আসলে চোখের আলোয় যা দেখা যায় মন দিয়ে যা অনুভব করা যায় তার কিছুই ধরা যায় না ছবি তুলে। লিখে প্রকাশ করে। প্রকৃতির এই রূপের গভীরে আমি শুধু হারাই।
ভোরের বেলা যেমন দেখা যায়, মেঘলা দিনে তার অন্য চেহারা। রোদের প্রখরতায় যে রূপ ফোটে সন্ধ্যা বিকাল দুপুরের সময়ে সব হয় আলাদা আলাদা। প্রতিটা সময় ক্ষণ অন্য রকম অন্য কিছু তাই মনে হয় হলো না দেখা পুরোপুরি হলো না চেনা জানা। আমি তাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকি তার সাথে হারাবার।
তিত্রিশ অক্টোবর হালকা বৃষ্টি ঝরছিল। আমি বনের পথে কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু মেঘলা আকাশের সাথে ছবির ঝলমলে রঙ পাচ্ছিলাম না মন মতন। বাড়ি ফিরে মনে হলো বৃষ্টি নয় বরফের বল গড়াচ্ছে। সকালে দেখলাম সাদা রঙের চাদর বিছানো রঙের উপর। বছরের প্রথম বরফ বেশ আগে ভাগেই পরল। তবে জোড়দার নয় দুুপুরের মধ্যে সব রঙ বরফের চাদর থেকে বেড়িয়ে এলো। সন্ধ্যায় অদ্ভুত একটা সোনালী আভা মাখাল সূর্য পৃথিবীর শরীর জুড়ে। আমি অবাক হয়ে শুধু দেখলাম । এত্ত সুন্দর হতে পারে চারপাশ। এমন লাইটিং ফোকাস মানুষের পক্ষে সম্ভব না, যেমনটা প্রকৃতি পারে। মজার বিষয় হলো প্রথম বরফ পরার পরের দু সপ্তাহ আবার আঠার উনিশে উঠে গেল তাপমাত্র। যদিও রাতের বেলা হিমের ঘরে নামত কাটা।
রাতটা ছিল অঝর বৃষ্টির। সকাল থেকে গুমড়া মুখ বিষন্ন আকাশ, ঘন বিষাদের ছায়া চারপাশে। কিন্তু যতবার জানালায় চোখ যায়, উজ্জ্বল হলুদ আলোয় মনভরে যায়। গাছগুলো হলুদ রঙের হলি খেলছে। শরত অরণ্যের বনে বনে।
হলুদ পাতার লম্বা সুরঙ্গের ভিতর দিয়ে যেতে মনে হলো কি অদ্ভুত এই গোল্ডেন অক্টোবর। হলুদ ট্যানেল পেরিয়ে আসতেই লাল টুপি পরা বনভূমি চোখের সামনে নেচে উঠল। নীল আকাশের নীচে অপূর্ব ঐশ্বর্য নিয়ে বনভূমির পর বনভূমি। হলুদ লাল কমলা, খয়েরি, মেরুন বর্ণছটার রঙে সেজে উঠেছে চারপাশ । যেন হারিয়ে যাই রূপকথার রহস্য জগতে। যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর। হলুদের অসাধারন উজ্জ্বলতায়। লালের মায়ায়। কোন পাশ রেখে কোন পাশে দেখি। কোন রঙের তুলনা কার সাথে করি। একের চেয়ে আরেকজনের রূপের মাধুরি মনে দোলা লাগায়। এত উজ্জ্বল এত সুন্দর প্রাণহরণকারি রূপ। কত ছবি তুলেছি এই সব রঙে রাঙ্গানো গাছের, নিজের চেয়েও বেশি। ম্যামরি ভর্তি হয়ে যায় এক একটা কার্ডের তবু বারে বারে প্রতি বছর নতুন হয়ে যেন নতুন রূপে আসে কোথাও পাহাড়ের মাথায় আগুন লেগেছে তো কোথাও থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়ার রঙে রাঙ্গা। লাল গলিচা, পাতা চারণভুমির পাশেই হলুদ স্বর্ণচাপার বিস্তৃর্ণ মাঠ। যে দিকে তাকাই সব নতুন লাগে।
আবার কোথাও ফসল তোলা শেষে, ধুসুর মাঠ একা পরে আছে। কোথাও আবার শীতের বীজ লাগিয়ে দিয়েছে কৃষক। জেগে উঠেছে সবুজ সজিব নতুন চারা। অদ্ভুত লাগে এই বৈচিত্র। জানতে হয় চিনতেও হয়। কখন কোন ফসলের আবাদ করলে শীতেও দেখা যাবে সবুজের আভাস।
ঝকঝকে রোদের আলোয় অপরূপ, খেলা করে চোখের সামনে। আমি চলি দীর্ঘ পথ বেয়ে মাঝে মাঝে ভুলে যাই আমি চালক। হয়ে যাই কেবল দেখনেওলা। তখন থেমে যাই রাস্তার পাশে যে জায়গাগুলো বড় বেশি টানে তার কাছে। মনের মাঝে গেঁথে নেই রূপ মাধুরি। বিকাল, সকাল , দুপুর, সন্ধ্যা এক এক সময়ে এক এক আবেগে ধরা দেয় অপরূপা। মেঘ আলোর বৈচিত্রে। স্থির হয়ে কাটাই তাদের সাথে। সময় পেলাম, তাই হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম বনভূমির ভিতরে লাল হলুদ পাতার ভীড়ে আমি একা মানবী। আর সবাই প্রকৃতির অংশ। মনে হয় আমিও তাদের অংশ হয়ে যাই কখনও। নাহ বনের ভিতর আর কোন প্রাণীর সাড়া নেই, আমি ছাড়া। সবাই চলে গেছে অন্য কোথাও।
প্রাণ ভরে পান করি সুধা। গত কিছুদিন কাজের প্রয়োজনে ছুটছিলাম নানা দিকে প্রভিন্সের উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম জুড়ে। চির চেনা অনেক দেখা ভূমি, আবারো শরৎ উপলক্ষে নতুন রূপে সেজে উঠা নতুন বৈচিত্রে অবলোকন করলাম। নতুন ভাবে হৃদয়ে গেঁথে নিলাম প্রকৃতির সৌন্দর্য। কোথাও কাশ ফুলও সাদা পালক মেলে দুলছে। কোথাও থোকা থোকা বাদামী রঙের কাশবনের ঝাড় বাতাসে দোল খায়। কখনো লাল এবং খয়েরি পালক মেলা কাশফুলের হাসিও মন মাতিয়ে দেয়। অনেক রঙের কাশফুল থাকলেও কাশফুল নিয়ে এত উচ্ছাস দেখিনা কারো মাঝে আমাদের দেশের মতন। অনেকে বাগান লাগিয়ে রাখে কাশের গুচ্ছো। পথের ধারে ফুটে থাকে আপন মনে।বিস্তির্ণ বনভূমি জুড়ে।
বারেবারে দেখা সে রূপ মন ভরে প্রাণ ভরে দেখি, হলুদ লাল রঙ ছড়ানো দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ ফিরে আসে প্রতি বার শরতে, কখনো পুরানো হয় না তার রূপ ।
বৃষ্টি আর বাতাসের টানে অল্পদিনেই উড়ে যাবে সব পাতা। মায়াবী রঙের গালিচা বিছিয়ে রাখবে ভূমি জুড়ে। মর্মরধ্বনীর নূপুরধ্বনী বাজবে তখন পায়ের নিচে। শীত ঋতুকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে উজ্জ্বলতার হাসি নিয়ে ঘুমিয়ে যাবে অটাম।
এ যেন মেয়ে বিয়ের সাজে সাজার আয়োজন চলে প্রকৃতি জুড়ে। শুধু মেয়ে নয় সেজে উঠে সখা সখি ঘরবাড়ি সব কিছু। মেহদি, হলুদ, বিয়ে উৎসব। প্রতিটি মানুষের মনেও উৎসবের আনন্দ লাগে। বেড়িয়ে পরে ঘুরতে বন দেখতে পাতার রঙ দেখতে। ছবি তোলার হিরিক পরে। বানিজ্যিক ভিত্তিতে অনেকে বানিজ্যও করে নেয় প্রকৃতিকে পুঁজি করে। নানা পাহাড়ে, জঙ্গলে, ট্যানেলে লেকের পাড়ে সৌন্দর্য দেখাতে নিয়ে যায় বাসে, ট্রেনে করে। তবে সব কিছুই করতে হয় সময় মতন। নয় তো রূপ দেখতে পাওয়া যায় না পয়সা খরচ করেও। আয়োজনকারী বলবে প্রকৃতি এবার আগেই পাতা ঝরিয়ে দিয়েছে। অথবা এখনও সময় আসেনি রঙ্গিন হয়ে উঠার। তাই নিজেকেও একটু রিসার্চ করে নিতে হয়।
তারপর মেয়ে বিদায় হয়ে যায়, ঝলমলে সাজানো বাড়ি নিরবে পরে রয়। ক্লান্ত এবং নিরবতায় ঢাকা শীত গ্রাস করে নেয় উৎসবের প্রকৃতি। আমার কাছ এমনই মনে হয় প্রতি শরৎ, অটাম বা ফলের সময় এলে। এবছর সময়টা অনেক দীর্ঘ ছিল এই রঙিন পত্রপল্লবের আয়োজনের।
বৃষ্টি আর বাতাস যা চরম শত্রু, পাতা ঝরে পরার। তারা একটু দেরীতেই এলো সেই আগের ঝড় হাওয়ার পরে। তাই অনেকদিন ধরে অনেক ঝলমলে রূপের আবগাহণে স্নান করার সুযোগ পেলাম। যদিও অটাম শেষ হবে জানুয়ারীর একুশ তারিখে তবে অটামের অনিন্দ্য সুন্দর রূপ ঢেকে ফেলেছে শীতের ধবল বরফ এ বছর একটু আগেই যেন বরফ পরা শুরু হলো। বেশ জাঁকিয়ে বসেছে চারপাশে শীতের আয়োজন নভেম্বরেরই।
ভোরবেলা দৃষ্টি মুগ্ধ করে দিল প্রকৃতির ভীন্ন রূপ। মেয়েটা প্রতি মূহুর্তে পোষাক পাল্টে হাজির হয় আমাকে নতুন করে তাকে ভালোবাসতে শিখায়। ভোরবেলায় সাদা আচ্ছাদনে আবৃত দিগন্ত বিস্তুৃত মনোমুগ্ধকর শুভ্রতা জড়িয়ে ধরল আমাকে আবারও। রাতে এক আকাশে যখন জ্বলছিল অসংখ্য তারা অন্য পাশে ছিল ঘন মেঘের জলভরা চোখ। ছোটছোট সাদা মুক্তোদানার উড়াউড়ি। আমাকে তার কাছে রাখার জন্য যথেষ্ঠ আকর্ষণীও। তারপরও নির্মম বাস্তবতা আমাকে নিয়ে গেল সুপ্তির কোলে।
ভোরবেলার গোলাপী আকাশ আর মাটি আবারো হিপনোটাইজ করল আমার মন।
রাত দুপুর পর্যন্ত কাজ সেরে বাড়ি ফিরে আনাবিল প্রশান্তির ঘুম সেরে, মেতেছি প্রকৃতির সাথে। ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলের খেলা দেখছি। রঙিন পাতার পাখি হয়ে উড়ে যাওয়া সাথে মুক্তোদানার ছড়াছড়ি রোদের ঝিলিক গায়ে জড়িয়ে।
ভাবছি আমার গোলাপ কুঁড়ির কষ্টের কথা তারা কি শেষ পর্যন্ত চোখ মেলে তাকাতে পারবে। শেষবারের মতন ফোটার চেষ্টা করছে ঘুমিয়ে পরার আগে। জয় করতে পারবে শীততের তীব্রতা। বরফে ঢেকে যেতে থাকলে তুলে এনে ঘরে ফুলদানীতে রাখলাম। সেখানে ফুটে উঠে সুবাসিত করল আমার ভুবন।







আরো ছবি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ব্লগ আর নিতে পারছে না।
সব ছবি আমার তোলা কোন এডিট ছাড়া
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২২ ভোর ৫:১৪
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×