somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ কাককথা

১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শহরটিতে আগে সকাল শুরু হত কাকের কর্কশ স্বর দিয়ে।

যেমন শহরের এই ছোট বাসাটির কথাই ধরা যাক। আগে বাসাটি ছিল টিনশেড, সামনে বেশ জায়গাজুড়ে উঠোন ছিল। আর উঠোনে ছিল কয়েকটা নারকেল গাছ। গাছগুলো উচ্চতায় ছিল একতলা বাসাটির চারগুণ। সেই নারকেল গাছেই ছিল অনেক কাক পরিবারের বাস। কাকগুলো সেখানে নারকেল গাছের ডালে বসে থাকত আর পাতার ফাঁকেফাঁকে তাদের কালো ঠোঁটগুলো ঠুকে শান দিত অথবা কখনো ঠোঁটে কাঠি বা শুকনো ডাল এনে গাছে নতুন নতুন বাসা বানাত। আর তাদের পরিবারে নতুন অতিথি এলে বাড়িয়ে দিত সতর্কতার মাত্রা। এ শহরে কোকিল নেই, কাজেই কোকিলের ডিমে তা দেবার অজানা আশংকাও ছিল না কাকদের। এভাবে বেশ ভালই কাটছিল তাদের শহুরে দিনগুলো। সময় অসময়ে তারা কা-কা রবে এমনভাবে ভরে তুলত যে মানুষ তাদের একসময় শহুরে পাখি বলেই জানতে শুরু করল।

কাকগুলো তাদের দৈনন্দিন খাবার সংগ্রহ করত শহরের পড়ে থাকা আবর্জনা থেকে। নানাপ্রান্তের ডাস্টবিনে ভিড় লেগে ওদের থাকত সবসময়। যেহেতু শহরে মানুষজনের অভাব নেই, তাই ময়লা আবর্জনারও অভাব ছিল না। আর কাকদেরও তাই খাবারের উৎস ছিল অফুরান। শহরটিতে ভোর হবার আগেই পরিচ্ছন্নতাকর্মি পুরো শহর ঝাঁট দিত, আর দিনের বাকি সময় এ দায়িত্ব নিত কাকেরা। তারা যতটা না ময়লাগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করত, তার চেয়ে বেশি চেটেপুটে খেয়ে পরিষ্কার করে রাখত। এসবমিলে কাক ছিল শহরটির জাতীয় পাখি।

তারপর কয়েক বছর পরের কথা। এখনো শহরটিতে সকাল হয়, তবে তাতে কাকের ডাক মেশানো থাকে না। কারণ এখন সেই একতলা টিনশেডের মতন বাড়িগুলো আর নেই। সেখানে চারতলা সমান উঁচু নারকেলগাছগুলোর স্থান নিয়েছে ততোধিক উঁচু ইটপাথরের দালান। অন্যপ্রজাতির গাছগুলোও ক্রমশ কমে এসেছে। আজ শহরে প্রকৃত অর্থেই শহরায়ন ঘটেছে। আগে যে কাকগুলো তাদের বাচ্চাদের দিকে আক্রমণ করতে দেখলেই তাদের ধারালো ঠোঁটের একদু ঘা বসিয়ে দিত, সেই কাকগুলো তাদের বাসা হারিয়ে আজ কোথায় আশ্রিত হয়েছে কে জানে! এখন তাদের অস্তিত্ব গাছগুলোর মতনই ম্রিয়মাণ। একটি কাককে এখন ঢিল ছুঁড়লে কা-কা রব তুলে এগিয়ে আসে না বাকি কাকেরা, কারণ তাদের সমাজে এখন কাকদের সংখ্যা নেই বললেই চলে।

সেরকম শহরের অলিতেগলিতে আবর্জনার স্তুপে এখন আর পাওয়া যায় না কাকদের। সেখানে তাদের একসময়কার ভোজনোৎসব যেন এখন ইতিহাসের শীর্ণ পাতা। ডাস্টবিনগুলো বরং এখন ভরে উঠেছে কিছু টোকাই আর গরিব ছেলেপুলেদের দিয়ে। সেখানেই হয় টোকাইদের দৈনন্দিন ভোজন। শহরে শহরায়ন ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু বস্তিবাসী অভাবি লোকের সংখ্যা যেন আরো বেড়েছে।

এ শহরের আদি অধিবাসি জনৈক নাগরিক এরকমই একটা ডাস্টবিন অতিক্রমকালে আজ থেকে কয়েক বছর আগের চিত্রের সাথে কোথাও একটা মিল খুঁজে পায়। সে দেখে, পথচলতি ডাস্টবিনে খাবার কিংবা জীবনের সন্ধান করছে কিছু টোকাই। মানুষটির মনে হয়, তার শৈশবের সেই কাকগুলো আজ যেন টোকাই হয়ে শহরের আবর্জনার স্তুপে চলে এসেছে। কাকগুলোর আত্মা কি আজ তাদের জীর্ণদেহে? টোকাইদের শরীরে পরা ধুলোময়লা পোশাক দেখে তার অবিকল মনে হয় কাকরঙা শরীরের রূপ। এতসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ এক টোকাইয়ের কণ্ঠস্বর শুনে সে আবার আরেকটা মিল খুঁজে পায়। টোকাইগুলো তাকে এখান থেকে সরে যেতে বলছে, খাবার জোগাড় করে দিতে না পারলে এখানে দাঁড়িয়ে থেকে মজা দেখা কেন। কিন্তু তাদের স্বর শুনে জনৈক নাগরিকটির জীবনসংগ্রামে ভারাক্রান্ত কোন স্বরের কথা মনে হয়না। বরং মনে হয়, টোকাইর মুখে উচ্চারিত হয়েছে সেইসব হারানো কাকের কর্কশ স্বর।

এবার কি তাহলে ঠোকর খাওয়ার পালা? ভয়ে মানুষটা ত্রস্তপদে একটু দূরে পিছিয়ে আসে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:০২
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×