somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসসালাতু খায়রুম মিনান নাউম !

২৬ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি নেট।

মকবুল বাসার ছাদে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করছে আর ফজর নামাজের আজানের জন্য অপেক্ষা করছে। একটু আগে সেহরি শেষ করেছে।নিমের ডাল দিয়া দাঁত মিসওয়াক করছে। এই নিমের ডালটি বায়তুল মোকাররম এর সামনে থেকে কদিন আগে মাত্র কিনেছে। স্বভাব বশত মকবুল ফেসবুকে ঢু মারছে স্ক্রল করেই যাচ্ছে জরুরি তেমন কিছুই নজরে পড়ছে না। হঠাৎ চোখে পড়ল বন্ধু ইকবাল ২৬ এ মার্চ উপলক্ষে বিশাল এক স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুক এর অন্তর গরম কইরা দিছে। শেষে আবার জয় বাংলা, জয় বংগবন্ধু লিখে দিছে।

মকবুল ভাবে আসলে জীবন বড় অদ্ভুত। এই ইকবাল স্কুলে থাকতে কোনদিন সামনের বেঞ্চে বসতে পারে নাই। রোল নাম্বার যার ছিল পঞ্চাশের পিছনে। সে আজ এ এলাকার মাতবর কমিশনার। যার একটা সিগনেচার এখন বহু কিছু। মকবুলের কতবার ওর অফিসে যেয়ে বসে থাকতে হয়েছে। ফোনে ওকে পাওয়া যায় না। মকবুল যখন কলজের ফাস্ট ইয়ারে তখন এলাকায় একটা খুন হয় যার তিন নাম্বার আসামী ছিল ইকবাল। ইকবাল তখন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের হয়ে কাজ করতো। কেমনে জানি কোন যাদুর বলে ইকবাল মিডলইস্টে চলে যায় আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যদিও জনশ্রুতি আছে খুনটার পিছনে সেন্টার নেতার হাত আছে উনিই ইকবালকে সাহায্য করেছে।

প্রায় আট বছর পর ইকবাল দেশে ফেরত আসে। ওর দল ক্ষমতায় আসার পর সেই বড় ভাই আরো বড় নেতা এখন। ইকবাল এখন আর আগের ইকবাল নেই। সারাক্ষণ মিটিং মিশিল শ্লোগান এসব নিয়ে ব্যস্ত। বিয়ে করেনি তবে এক সুন্দরী নারী মডেলের প্রেমে পড়েছে যাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে দুবাই ট্যুরে যায়।ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে।ইকবাল কমিশনার হওয়ার পর এলাকায় ইয়াবা সেবির সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি এর ডিলার। ফুটপাতে ও বেড়েছে হকার। এ থেকে ইকবাল মাসে আয় করে লাখ টাকা যার এক অংশ সেই বড় ভাই পায়, থানা পায় এমনকি আরও উপর লেবেলের নেতা পর্যন্ত পায়।

ইকবাল গত পাঁচ বছরে দুইটা ফ্লাট কিনেছে বনশ্রী এলাকায়। বর্তমানে ওখানে থাকে আর মাঝেমধ্যে পার্টি অফিসে দলবল চ্যালা চামুণ্ডা নিয়ে বসে থাকে। এর ওর কাজের দেন দরবার করে। এলাকার ছোট খাটো বিচার সালিশ করে বেড়ায়। রাস্তায় বের হলে মানুষ সালাম দিতে দিতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলে। মকবুল কে অফিসের পিয়ন সালাম দেয় তবে মুখটা বাঁকা করে।

কদিন আগে মকবুলের একটা জরুরি কাজে ইকবালের পার্টি অফিসে যেতে হয়েছে। মকবুলকে দেখে হাসতে হাসতে হাত মিলিয়ে ইকবাল বলল, " তা কি মনে কইরা এই গরীবের আস্তানায়? " মকবুল বলল, ছোট ভাই এর চারিত্রিক সনদে সই। ইকবাল শুনে হো হো করে হাসে। এই ব্যাপার তা কি খাবি?  এই বলে, এক ছোকরাকে অর্ডার দেয় যা তো দুইটা ঠান্ডা কোক আর বিরিয়ানি লইয়া আয় জলদি। দেহছ না আমার দোস্ত আইছে। খুব ভালো ছাত্র ছিল। ভালো মানুষ। চাইয়া রইছত ক্যা? যা এক দৌড়ে যাবি আর আবি। মকবুল না করতে পারে নাই কেমন জানি ঘোরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।

ঠান্ডা কোক আর বিরিয়ানি খাওয়ার সময় ইকবাল মকবুল কি কাম করে কেমন ইনকাম এসব জিগ্যেস করে। ওর ছোট বোনের কই বিয়ে হইছে। জামাই কি করে? সব খোঁজ খবর নেয়া শেষে মকবুলরে জিগায় কি দেহছ অমন কইরা? মকবুল ইকবালের চোখে চোখ রাইখা বলে, তোরে। ইকবাল শুনে আবারও হো হো কইরা শরীর দুলিয়ে হাসে। ইকবাল ইশারা দিয়া দলের পোলাপান দের বাইরে যেতে বলে। এসি চলছে তবুও মকবুল ঘামছে। ইকবালের মাথার উপর প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পিতার ছবি। ইকবাল মকবুলের চোখে চোখ রেখে বলে,  " আমি কোনদিন তোদের মতো ভদ্র মানুষ হতে চাইনি হতে চেয়েছি রাজনীতিবিদ ! " আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করছে আলহামদুলিল্লাহ।

এমন সময় মকবুলের ঘোর কাটে এলাকার মুয়াজ্জিনের আজানে " আসসালাতু খায়রুম মিনান নাউম  "।





সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ২:৫৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×