somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইয়িদ রফিকুল হক
আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

অসময়ে ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে গেছে

২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অসময়ে ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে গেছে
সাইয়িদ রফিকুল হক

এই বাঙালি কবে যে একটু মানুষ হবে—তা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি সাধে বলেছিলেন:

সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ করনি।

কবিগুরু ঠিকই বলে গেছেন। এই বাঙালি আজও মানুষ হয়নি।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিপর্যয়। সারাবিশ্বে আতঙ্ক বাড়ছে বৈ কমছে না। কিন্তু এতোকিছুর পরও বাঙালির বৃহত্তর একটা অংশের মধ্যে কোনোরকম বোধোদয় হচ্ছে না। তারা আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল খুশিমতো চলেছে।
বিদেশ থেকে ফিরে কেউ-কেউ স্বেচ্ছায় ‘হোম-কোয়ারেন্টাইনে’র সুযোগ নিয়ে গৃহবন্দি না থেকে ইচ্ছেমতো যত্রতত্র ঘোরাফেরা করছে, আড্ডাবাজি করছে, পিকনিকে যাচ্ছে, ফ্যামিলি ট্যুরে বা গেট টুগেদারে যাচ্ছে, পরকীয়া-প্রেম করছে, বিয়েশাদী করছে, বিয়েশাদী করার জন্য কনে দেখতে যাচ্ছে! কেউ-কেউ আবার বিদেশ থেকে ফিরে ১৪-১৫দিনের বিধিনিষেধ না মেনে ইতোমধ্যে বিয়েও করে ফেলেছে! এরা পৃথিবীতে আর কিছুদিনের মধ্যে নতুন বংশধর আনতে যাচ্ছে! বাঙালির বিরাট একটা অংশ এখনও ভয়ংকরকম স্বার্থপর, অবিবেচক, একগুঁয়ে আর ভণ্ড। এদের মধ্যে আজও সত্যিকারের দেশপ্রেমভাব জাগ্রত হয়নি।

দেশের ভিতরে যারা দীর্ঘকাল বসবাস করছে, বিদেশ থেকে ফেরেনি —তারাও ভয়ংকর অসহিষ্ণু আর অবিবেচক। এরাও বিদেশফেরত আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে দহরম-মহরম-সম্পর্কে জড়িয়ে ঘরে-ঘরে একেবারে ঈদের আনন্দ বইয়ে দিচ্ছে! কারও মধ্যে সামান্য বিবেক জাগছে না! এরা বুঝতে পারছে না এই ভাইরাসের ভয়াবহতা। এটা যে বার্ডফ্লু, সোয়াইনফ্লু, ইবোলা-ভাইরাস ইত্যাদির চেয়ে আরও ভংয়কর—তা বুঝতে বাঙালির আর কতদিন লাগবে?

যাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে তারাও সেখানকার নিয়মকানুন মানতে চাইছে না। তাদের তিনবেলা উন্নতমানের খাবারসরবরাহ করা সত্ত্বেও তারা নানারকম অজুহাতে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার নানারকম ছলচাতুরি করছে। মাত্র ১৪দিনের কোয়ারেন্টাইনে তারা যেন একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছে! তাদের বুঝতে হবে, তাদের যেকোনো ভুলের কারণে দেশবাসী আরও প্রকটভাবে আক্রান্ত হতে পারে! বাঙালির এই বোধশক্তি থাকলে—তারা স্বেচ্ছায় ‘হোম-কোয়ারেন্টাইনে’ যেত এবং ১৪দিন দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতো।
বাংলাদেশও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে এই ভাইরাসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, এবং আরও ৩৩জন আক্রান্ত। এরই মধ্যে একটি পশুশ্রেণী জনমনে সন্দেহ ও ভয় ঢোকানোর জন্য এই ‘করোনাভাইরাস’ নিয়ে নানারকম গুজবসৃষ্টি করতে বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করছে না। এরা মানুষ নয়। এই পশুদের পাশবিকতার ছোবলে জাতি আজও ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। বিপদের সময়ও এদের মধ্যে সামান্যতম মনুষ্যত্ব জাগে না! হায় রে বাঙালি!

আমাদের দেশটাকে কিংবা দেশের প্রধান-প্রধান শহর-বন্দরগুলোকে করোনাভাইরাসের জন্য হয়তো এখনই ‘লকডাউন’ করা হচ্ছে না। তার বদলে সরকার, আগামী ২৬-এ মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সাধারণ ছুটি-ঘোষণা করেছে। এর উদ্দেশ্য—দেশের মানুষজন যেন বিনাপ্রয়োজনে এই কয়দিন ঘর থেকে বাইরে বের নাহয়। কিন্তু গতকাল এই ছুটি-ঘোষণা করার পর থেকেই একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে অসময়ে শুরু হয়েছে ঈদের আমেজ! এরা ছন্নছাড়া-ঘরছাড়া হয়ে ছুটছে বাসস্টপে, রেলস্টেশনে! ভাগ্যিস, লঞ্চ বন্ধ! নইলে, ভোগান্তি আরও বাড়তো। সবাই এখন গ্রামে ছুটছে! কিন্তু কেউ যদি করোনাভাইরাস বহন করে গ্রামে যায়—তাহলে, কী হবে? অনেকে জানলেও নিজের অসুখ গোপন করে গ্রামে যাবে। এই না হলে বাঙালি!

এই অসময়ে জায়গা-পরিবর্তন করাটা সমীচীন নয়। খুব বেশি প্রয়োজন হলে ভিন্নকথা। তবে এর চেয়ে বড় বিপদ এখন জাতির জীবনে আর নাই। এই ভাইরাসের বিস্তাররোধে আমাদের সবাইকে আন্তরিক ও মহানুভব হতে হবে। এবার যারা গ্রামে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে কয়টি কথা—

১. করোনাভাইরাস নিয়ে কেউ দয়া করে কারও গ্রামে যাবেন না। আপনি নিশ্চিতভাবে সুস্থ না হলে গ্রামে যাবেন না।

২. করোনার সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও নিজের গ্রামে গিয়ে অন্যান্য সুস্থ মানুষের জীবনে জেনেশুনে ভয়ানক বিপদ ডেকে আনবেন না।

৩. যারা বিদেশফেরত হয়ে চুপটি করে এতোদিন ঢাকা-শহরের অলিগলিতে যথেচ্ছা বিচরণ করেছেন—এবার হাওয়া বদল করার জন্য আবার গ্রামেও যাবেন না। দয়া করে সেখানেও ভাইরাস ছড়াবেন না। সরকার-ঘোষিত সাধারণ ছুটিকে নিজের জীবন বাঁচাতে ও অন্যের জীবনরক্ষার্থে বাসায় বা বাড়িতে অবস্থান করে ন্যূনতম দেশপ্রেমিকের পরিচয় দিন।

৪. আপনি সুস্থ মানুষ হয়ে কয়দিনের জন্য গ্রামে গিয়ে অসুস্থ হয়ে (করোনাভাইরাস-বহন করে) ঢাকায় ফিরে মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না।

৫. ঝোঁকের মাথায় গ্রামে যাবেন না। সরকার-ঘোষিত সাধারণ ছুটিকে দেশ ও জাতির জন্য সদ্ব্যবহার করুন।

এতোকিছুর পরও যারা বিবেকবান হবে নাতাদের উদ্দেশ্যে আমাদের কী বলার আর কী করার আছে? যা করার এবার সরকারই করুন। তবুও মনে আসে এই আক্ষেপ: হায় রে বাঙালি, কবে বুঝবে বিপদের মানে?


সাইয়িদ রফিকুল হক
২৪/০৩/২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৫৮
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×