স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতির বাস্তবিকতা বুক ফুলিয়ে প্রশংসা করার মত। সেদিক বিবেচনায় প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আকাশ ছোঁয়া দাম আমাদের জন্য কোন ব্যাপার না। গোটা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্যরেখার নিচে বাস করা মানুষের অনুপাতে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষস্থানে। মোটাদাগে আমাদের দারিদ্র্যসীমার নিচের অনুপাত সংখ্যা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ দেখালেও আমাদের আঞ্চলিক বৈষম্যতার কারণে কোন কোন জেলায় তা ৬০ শতাংশেরও বেশি। জাতীয় গড় ২৪ হলেও প্রচলিত দারিদ্র্যসীমার নিচেই কুড়িগ্রামে প্রায় ৭১ শতাংশ মানুষ বাস করে। অন্যদিক দিয়ে দেখলে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে বাস করে। এই ৭৫ শতাংশের মধ্যে শতকরা ৬০ শতাংশেরও বেশি রয়েছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। আর ৩০ শতাংশ দরিদ্র, বাদবাকি মধ্যবিত্ত ও ধনীদের মধ্যে বিভক্ত।
গত ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। বাড়িতে অবস্থানকালীন প্রতিদিনই আমি হাটে যাওয়ার চেষ্টা করি। নিত্যদিনকার মত একদিন হাটে যাওয়ার পথে পরিচিত একজন ভদ্রলোককে দেখলাম তিন বস্তা ধান নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে হাটে যাচ্ছে। আমি তাকে ধানের বাজারদর জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন প্রতি মন (চল্লিশ সেরা) ৬০০ টাকা মাত্র। হাটে যাওয়ার পর ঐদিনের দ্রব্যাদির বাজারদর দেখে বড্ড অবাক হলাম। এই ভদ্রলোক একমন ধানের টাকা দিয়ে বড়জোর একসাপ্তাহ চলতে পারবেন; যদি তার ফ্যামেলির সদস্য সংখ্যা চার-পাঁচ জন হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানের মান বাজারদর বিবেচনায় থাকে সাপ্তাহে দু'মন ধান বিক্রি করতে হবে। সবাই কিন্তু আবার এরকম ধানের উপর নির্ভরশীল হতেও পারে না। হতে হয় অভাবের উপর নির্ভরশীল।
বছর কতেক আগে সিএনজি ওয়ালা কথা প্রসঙ্গে বলেছিল, 'এখন গ্যাসের দাম বাড়ানো হল, বাড়লো রাস্তার ভাড়া খরচ। পাঁচ টাকার জায়গায় আমরা নিচ্ছি সাত টাকা। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। কিছুদিন পর এভাবে দাম বাড়তে বাড়তে ৫ থেকে ১৫ টাকা হলেও কেউ কিছু বলবে না। এটাই আমাদের কপাল, আর আপনাদের কাছে আপনাদের ভাগ্য বলুন আর উন্নয়ন।'
বর্তমান চড়া বাজারদর নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে আমাদের অনেকেই ব্যাতিক্রমী আলোচনা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ঐ গণমাধ্যমের মতই আমরা নিরব হতে খুব বেশি সময় নেইনি। দুএকদিন আগে একজন ব্লগারকে দেখেছিলাম এ নিয়ে সুন্দর একটি পোস্ট দিয়েছেন। ভালো লেগেছে অনেক।
চড়া বাজারদরের কারণে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্রাইসিসের মধ্যে পড়েছে আমাদের সমাজের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষগুলো তাদের সাথে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের সকলেই। কিন্তু আমাদের জনগণের মধ্যে ঐক্যের অভাব ও আমাদের শিক্ষিত সমাজের অন্ধত্বতার কারণে এই ক্রাইসিস আমাদের থেকে দূর হয় না। ভৌগোলিক দিক বিবেচনা করলে আমাদের রাষ্ট্রের জন্য এরকম চড়া বাজারদর সম্পূর্ণভাবেই একটা মুর্খ সমাজব্যবস্থাপনার ফলাফল বলা যেতে পারে। এরকম কৃষির ক্ষেত্রে উত্তম উপযোগী রাষ্ট্রের জন্য এমন চড়া বাজারদর কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না হলেও আমরা তা গ্রহণযোগ্যতার উর্ধে বসিয়ে অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছি। আফসোস নয়, তবু ভালবাসাটুকুই রাখি এই দেশের জন্য।
১ম ছবি : ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত একটি পত্রিকার প্রতিবেদন।
২য় ছবি : আজ জুম'আ থেকে আসার পথে তুলা ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৪০