somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“জিহাদ ও ইসলামী খেলাফত !”

০১ লা মে, ২০১৬ সকাল ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর প্রায় ৩০ বছর সময়কালকে বলা হয় খোলাফায়ে রাশেদিনদের যুগ। চতুর্থ খলিফা হযরত আলীর নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই যুগের সমাপ্তি ঘটে। এসময় উমাইয়া বংসের নেতা মুয়াবিয়া মুসলিম দুনিয়ার একছত্র নেতায় পরিনত হন এবং নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেন। ৭৫০ সালে উমাইয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে মুসলিম দুনিয়ায় এক বড় ধরনের বিপ্লব সংগঠিত হয় যার ফলে উমাইয়া খেলাফতের পতন ও আব্বাসীয় খেলাফতের উত্থান ঘটে। ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও দীর্ঘ মেয়াদী খেলাফত ছিল আব্বাসীয় খেলাফত। ৭৫০ থেকে ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। সবশেষে মঙ্গলদের হামলায় উৎখাত হয়ে, মিশরের সুলতানদের অতিথি হয়ে তা টিকে ছিল আরো কয়েকশ বছর (১২৬১-১৫১৭)। আব্বাসীয় খলিফারা আরব ছিল। কিন্তু তাদের দরবারে ও সেনাবাহিনীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ অনারব মুসলমানের সংখ্যা বেশি ছিল। মূলত আব্বাসীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে মুসলিম দুনিয়ায় আরব আধিপত্যের পতন ঘটেছিলো, তারা নামমাত্র খলিফা ছিল। সেসময় রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছিল ইরানী ও তুর্কীরা। ইউরোপীয় উপনিবেশের আগ্রাসনের আগে মুসলিম দুনিয়া প্রধানত তুর্কী ওসমানী, পারস্যের সাফাভিদ সাম্রাজ্য এবং ভারতের মুঘল সাম্রাজ্য এই তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। এই হচ্ছে মূলত ইসলামী খেলাফতের চিত্র।

এখন আমার মুল প্রশ্নে আসি।
আইএস বা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন প্রতিনিয়ত শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য পৃথক ভূখণ্ড নিয়ে ইসলামী খেলাফতের কথা বলে। কিন্তু তারা কি আসলেই জানেনা, নবী করিম (সাঃ)-এর আমল থেকে পরবর্তীতে এই ইসলামী খেলাফতের চেহারা কেমন ছিল ?
ঐতিহাসিক সত্যি এটাই যে ইসলামের প্রথম ১০০ বছরেরও বেশি সময় এই খেলাফতের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ছিল খ্রিষ্টান ধর্মাবলী। এবং ৭ থেকে ১১ শতক পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাসের প্রথম ৪০০ বছর দুনিয়ার অর্ধেক খ্রিষ্টান বাস করতো ইসলামী খেলাফতের অধিনে।
প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই এক্ষেত্রে ধর্মের চেয়ে আঞ্চলিকতাকে প্রাধান্য দেয়া হতো। উদাহারন সবরুপঃ- উমাইয়া খেলাফতের আমলে অনারব মুসলমানদের জিজিয়া কর দিতে হলেও তাদের খেলাফতের অনুগত আরব খ্রিষ্টানদের জিজিয়া না দেয়ার উধাহারন আছে। ঠিক তেমনি ভারতবর্ষে মুঘল শাসনামলে জিজিয়া করের ক্ষেত্রে দেখা যায় ফিরোজ’শা তুঘলকের আগে দিল্লীর তুঘলকি সুলতানরা ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে জিজিয়া কর নিতেন না। আকবর তো জিজিয়া বেবস্থাই তুলে দিয়েছিলেন। ইসলামী খেলাফতের এই মুঘল সম্রাটরা স্থানীয় হিন্দু শাসকদের মাদ্ধমেই প্রজা শাসন করেছেন।
সুতরাং অমুসলিমদের ক্যাটাগোরাইজেশন এবং পউত্তালিকদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে আইসিসের খেলাফত যেসব উদাহারন সৃষ্টি করেছে তা যুগে যুগে চলে আসা ইসলামী খেলাফতের থেকে একেবারেই আলাদা।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পর যে উম্মাহ (সমাজ) গঠন করেছিলেন তা মুসলিম উম্মাহ ছিলনা। বরং তা ছিল বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের মানুষের সামাজিক চুক্তির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান যা মূলত “রুল অফ ল” প্রতিষ্ঠিত করেছিলো আর এটাই মদিনা সনদ নামে পরিচিত। উল্লেখ করা দরকার, মদিনা সনদে “মুমিন” এবং “মুসলিম” নামে পরিষ্কার ভাবে দুটা আলাদা ক্যাটাগরি ছিল। যারা এক আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে রাসুল হিসেবে মেনে নিয়েছিল তারা হোল “মুমিন”। আর “মুসলিম” বলতে বোঝানো হতো যারা রাজনৈতিক আনুগত্য ও মৈত্রীর মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মার অংশ ছিল। মদিনা সনদে উম্মার অন্তরভুক্তদের মধ্যে মুমিন ও মুসলিম ছাড়াও ইহুদী, খ্রিষ্টান ও আরো কিছু ধর্মের অনুসারীও ছিল। মদিনা সনদে স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে, “মুসলমানদের জন্য মুসলমানদের ধর্ম এবং ইহুদিদের জন্য ইহুদিদের ধর্ম”। “মদিনা সনদ” ছিল মূলত একই সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং যুদ্ধ/জিহাদের ঘোষণা পত্র। চুক্তিকারীরা শত্রুর আক্রমন ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ এবং শত্রুর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে জিহাদ করতে একমত হন। ধর্মে তারা আলাদা হলেও যুদ্ধ/জিহাদের ক্ষেত্রে এক উম্মাহ (সমাজ)। এক্ষেত্রে সুরা বাকারার ৬২নাম্বার আয়াত অমুসলিমদের সহঅবস্থান ও বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আয়াতটির অর্থ হচ্ছে, “নিশ্চয়ই যারা ইমানদার এবং যারা ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং অগ্নি উপাসক, এদের যারাই আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস করে ও সৎ কর্ম করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে পুরুস্কার রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবেনা”।
নবী করিম (সাঃ) মদিনা থেকে যে জিহাদের শুরু করেছিলেন তা মুসলমান নামের কোন একটি ধর্মের অনুসারীদের অন্য সব ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ নয়, বরং মক্কার কুরাইশদের বিরুদ্ধে মদীনার উম্মার জিহাদ। যাতে নবি করিম (সাঃ)-এর সাথে ইহুদি, খ্রিষ্টানরা অংশ নিয়েছিল।

জিহাদের এই ধারা পরবর্তীতে খোলেফায়ে রাশেদিন এবং উমাইয়া খেলাফতের আমলেও অব্যাহত ছিল। অর্থাৎ মুসলমানদের প্রথম দিকের জিহাদের বাহিনীতে বহু অমুসলিম অন্তরভুক্তি ছিল। এবং সেসব আরবিয় খ্রিষ্টান গোত্র যারা মুসলমানদের জিহাদি মিত্র ছিল তাদের জিজিয়া কর দিতে হতো না। খলিফাদের যুগ থেকেই খেলাফতের অধিনে থাকা খ্রিষ্টানরা ধিম্মি কর দিতো এবং তারা নিজেদের ধর্ম পালন ও সমাজে ধর্মীয় আইন পালনের সুবিধাপ্রাপ্ত ছিল। সিরিয়া, ইরাক, ইরান এসব জায়গায় যদিও তরোয়ালের মাদ্ধমেই ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্ন। সে সময় মধ্যপ্রাচ্য ছিল মূলত খ্রিষ্টান বাইজেনটাইন (পূর্ব রমান) এবং জোরাস্ত্রিয়ান সাসানিদ (পারস্য) সাম্রাজ্যের ক্ষমতার লড়াইয়ের ময়দান। তারা এই এলাকায় নিয়মিত যুদ্ধ করতো এবং এই এলাকার খ্রিস্টানরা ছিল এদের নির্যাতনের স্বীকার। তাই মুসলিমরা যখন এদের পরাজিত করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করলো তখন এই অঞ্ছলের খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের সাদরে গ্রহন করলো।

তারমানে দাড়ায় ইসলামী খেলাফত বা জিহাদের ফলে আমরা এখন যে অতীত সভ্যতার কথা বলি, অমুসলিমরা ছিল তার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এখানে বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়, আল্লাহর রাসুল এবং তার খলিফারা যেখানে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন জাতি, গোত্র ও ধর্মের মানুষদেরকে সাথে নিয়ে মিলেমিশে ইসলামী শাসন কায়েম করেছিলেন, সেখান আন্তর্জাতিকভাবে আইএস বা আভ্যন্তরীণভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলো, মুসলমানদের জন্য পৃথক ভুমি নিয়ে বর্তমানে কোন ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ চালাচ্ছে ?
(প্রথম পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ সকাল ৯:৪১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×