somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিস কুমিল্লা (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি তেজ, অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি। বিকেল বেলা বের হইছিলাম হাঁটতে। কিছু কাজও ছিল। পড়াশোনার খাতিরেই কুমিল্লাতে থাকি সময়-সুযোগ পেলেই বের হয়ে পড়ি। কান্দির পাড় দিয়ে ঘুরে এসে ঢুকলাম সিটি লাইব্রেরিতে। কিছু বই দেখার ছিল। লাইব্রেরি থেকে বের হতেই চোখ গেল একদল মেয়ের দিকে। সবার পরনেই ছিল কমলা রঙের শাড়ি। আমি আমার মত যাত্রা শুরু করলাম।
.
পাশের আকন্দ পেপার হাউজে গেলাম। প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দোকান থেকে বের হতেই দেখি শাড়িপরিহিতা মেয়েগুলো দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। সবাই হাসতে হাসতে কথা বলছিলো। আমি দোকান থেকে বের হতেই সবাই চুপ করে গেল। হঠাৎ একজন বলে উঠলো-
- ভাইয়া, একটু শোনেন
( বুঝলাম না কাকে বলল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই) বললাম-
- আমি?
- জ্বি, আপনি
- বলো। (বয়সে ছোট মনে হওয়ায় তুমি করেই বললাম)
- ঈপ্সিতা আপনার সাথে কথা বলতে চায়।
- ঈপ্সিতা কে?
(কয়েকজন বিস্ময়ধ্বনি প্রকাশ করলো। মনে হলো যেন ঈপ্সিতা নামের মেয়েটাকে চিনতে না পারা খুব বড় কোনো দোষের কাজ। যদিও মনে হচ্ছে কোথাও একটা দেখেছি। কিন্তু কোথায় তা মনে করতে পারছিনা, চেষ্টাও করছিনা আসলে)
একজন বলে উঠলো-
- (একজনকে দেখিয়ে) ও ঈপ্সিতা, আপনার বাসার সামনের বাসায় থাকে।
(ও! এবার চিনতে পেরেছি। উপরের তলার ছোট ভাইয়ের সাথে কয়েকদিন ছাদে গিয়েছিলাম। তখন দেখেছিলাম হয়ত পাশের বাসার ছাদে। কিন্তু এখন তার আমার সাথে কি কথা থাকতে পারে বুঝলাম না।)
- তোরা এখন যেতে পারিস (ঈপ্সিতা)
- জো হুকুম, ম্যাডাম (ওর বান্ধবীরা)
ওরা অটোরিকশা ভাড়া করে চলে গেল। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। ঈপ্সিতা বলল-
- চলুন, হাঁটি
(বিরক্ত হচ্ছি মনে মনে। কি করবো বুঝতেছি না। হাঠতে থাকলাম।)
.
.
মনসুর মেমোরিয়াল (মিন্টু) কলেজের পাশে রেললাইনের ধারে হাটার একটা রাস্তা গেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে বলল -
-আপনার সাথে কিছু কথা আছে। ( ঈপ্সিতা)
- বলো, কি কথা? (আমি)
- আই লাভ ইউ
থমকে গেলাম, ভড়কে গেলাম। বলে কি মেয়েটা। চেনা নেই, জানা নেই। হঠাৎ এসে বলে, ভালোবাসি? আজব! যাই হোক, নিজেকে সামলে নিলাম। বললাম-
- ঈপ্সিতা
- জ্বি, বলুন
- তুমি কিসে পড়ো?
- ক্লাস এইটে।
- আমার নাম জানো?
- (মাথা নিচু করে) না
- আমি কি করি জানো?
- না
- আমি কেমন ছেলে, জানো?
- (নিরুত্তর)
- তাহলে? চেনোনা, জানোনা - এমন একজন ছেলেকে হুট করে ভালোবাসি বলে ফেললা! ভালোবাসা কি এতই সহজ?
- ধীরে ধীরে চিনে নেব ( আস্তে আস্তে)
- তুমি যত সহজে বলছো, বিষয়টা তত সহজ না। তুমি এখনো অনেক ছোট। এ বয়সে মাথায় অনেক কিছুই ভর করে। এসব কিছুর পাত্তা দিও না। জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাও। এসব করার জন্য অনেক সময় আছে।
- জীবন সাজানোর জন্যই তো আপনাকে চাই।
.
(ভালো বিপদে পড়া গেল- মনে মনে বললাম)
- দেখো, কাউকে পছন্দ করা দোষের কিছু নয়। তুমি আমাকে পছন্দ করো - ঠিক আছে। আমি তোমার পছন্দকে এপ্রেসিয়েট করি। কিন্তু তোমার যা বয়স তাতে এসব মোহ - আবেগ ছাড়া কিছুই নয়। মনে রাখবে - মোহ আর ভালোবাসা এক জিনিস নয়। ভালোবাসা চিরস্থায়ী কিন্তু মোহ কয়েকদিন পরই কেটে যাবে।
- আপনি কি করে জানলেন আপনার প্রতি আমার মোহ কাজ করছে?
- দেখো, তুমি আমাকে চেনো না, আমি কেমন ছেলে তাও জানোনা। অথচ বলছো আমায় ভালোবাসো! একে ভালোবাসা বলেনা। এটা শুধুই মোহ। এখন যদি আমি খারাপ ছেলে হই? যদি আমি তোমার সাথে রিলেশনের নামে টাইম পাস করি?যদি তোমার সাথে এমন কিছু করি যাতে তুমি সমাজে মুখ দেখাতে না পারো? তখন? তখন তুমি কি করবে? কিছু না জেনে, না বুঝে শুধু বিপদই ডেকে আনা হয়; ভালোবাসা হয়না।
.
.
মেয়ের মুখাবয়ব দেখে বোঝা যাচ্ছে এতক্ষণ যা বোঝালাম তার কিছুই বোঝেনি। আমার কথার কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে আমার। মানে মানে কেটে পড়ার ধান্ধা করলাম। বললাম-
- অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমার বাড়ি ফিরতে হবে। আমি আসি।
এই কথা বলে যেইনা পা বাড়াতে গেছি..দেখি- এমা! এতো আমার সাথে সাথেই আসছে। ধুর! ভাল্লাগেনা। একেবারে আঠার মত লেগে আছে মেয়েটা। শেষমেশ বাধ্য হয়ে আমার সর্বশেষ অস্ত্র প্রয়োগ করলাম। বললাম-
- দেখো, আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। আমরা একে অপরকে অত্যন্ত ভালোবাসি। এবং আমি তার প্রতি অত্যন্ত সৎ। আমার লাইফে যদি সে কখনো নাও আসে তবুও আমি অন্য কাউকে মন দিতে পারবো না। তাই আমার পক্ষে শুধু তুমি কেনো অন্য কারোর সাথেই কোনো সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব না।
.
একনাগাড়ে কথাগুলো বলার পর তাকিয়ে দেখি মেয়েটার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। রাস্তায় লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। যদিও আমি মেয়েটার উপর রাগারাগি করিনি - কিন্তু ভয় হচ্ছে-কখন না জানি লোকজন ধরে মাইর টাইর দিয়া দেয়!
.
- আই লাভ ইউ
চমকে উঠলাম মেয়েটার কথায়। এ অবস্থাতেও এ কথা বলছে! এ তো দেখি আমার সর্বনাশ করে ছাড়বে। আমি আর কিছু বললাম না। বললাম-
- আমি যাই
বলেই দ্রুত পা চালাতে লাগলাম। মেয়েটা শাড়ি পরা। সো নো টেনশন। দ্রুত পগারপার হবো। পৈশাচিক হাসি দিতে গিয়েও পারলাম না। স্যান্ডেল ছিঁড়ে গেছে! মেজাজটাই বিগড়ে গেল। ইতোমধ্যে মেয়েটা আবার পাশে এসে জুটছে। পাশাপাশি হাটা শুরু করছে। তাকিয়ে দেখি- মেয়েটার চোখে পানিও নাই, কিছুই নাই। আরো মনে হয় হাসতেছে। বলল-
- তোমার ফোন নম্বরটা দাও।
(সর্বনাশ! তুমি বলা শুরু করছে) বললাম-
- ফোন নম্বর দিয়ে কি হবে?
- কথা বলবো
- কার সাথে?
- কার সাথে আবার? তোমার সাথে।
- আমার ফোন আমার মায়ের কাছে থাকে। সামনে আমার এক্সাম।
- তাইলে আন্টির সাথে কথা বলবো।
(পাগল নাকি? নিশ্চিত মাথায় সমস্যা আছে। আমি কিছু বললাম না।) শুধু বললাম-
- তুমি চলে যাও। বাসার কাছে চলে আসছি। এখন লোকজন দেখলে প্রব্লেম।
- তোমার ফোন নম্বর দাও।
- পারবোনা
কথাটা বলেই পাশে স্বদেশ হাসপাতালে ঢুকে পড়লাম যাতে মেয়েটা চলে যায়। কিন্তু কে যাবে? নাছোড়বান্দা মেয়ে হাসপাতালের গেটেই দাঁড়িয়ে রইলো। বের হয়ে বললাম -
- এখনো যাওনি?
- তোমার ফোন নম্বর দাও।
এবার আর পারলাম না। রাগ করেই বললাম-
- উফ! এই মেয়ে, তোমাকে বললাম না তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক আমার দ্বারা হবে না? কি সমস্যা তোমার?
কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো-
- সম্পর্ক করতে হবেনা। তোমার ফোন নম্বরটা দাও, প্লিজ।
এমনিতেই বাসার পাশে। এখন আবার কান্না শুরু করলে বিপদ। বললাম-
- কাগজ কলম দাও
- ফোনে নিচ্ছি
- না, কাগজ কলমই লাগবে
ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে কাগজ কলমই বের করল। আজিব! কাগজে নম্বর লিখে দিলাম। ফোনে দিলে ধরা খেতাম। কল করতো। বন্ধ সিম। বাচ্চা মেয়ে- ধরতে পারেনাই বিষয়টা।
হাসিমুখে বলল
- এখন তাহলে যাই?
- আমি কি বেঁধে রাখছি নাকি? যাও
.
মেয়েটা আগে আগে মেইন রোড থেকে বাসার সামনের গলিতে ঢুকে পড়লো। আমি পরে যাবো। এলাকার দুই পায়ের কুকুরগুলো দেখলে সমস্যা। নিজের বোনকে সাথে নিয়ে বের হলেও এরা উত্তক্ত করার চেষ্টা করে।
.
যাই হোক- বাসার সামনে যেতেই দেখি - মেয়েটা ওদের বাসার গেইটে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবলাম- বন্ধ সিমের ব্যাপারটা ধরে ফেলল নাকি? হাতে ফোন দেখলাম না। যাক বাবা! এখনো ধরা খাইনি তাহলে।
মেয়েটা হঠাৎ বলে উঠলো-
- এই যে মিস্টার, আমি কুমিল্লার মেয়ে। আমার সাথে নো গুটিবাজি।কথাটা বলেই হাসি দিয়ে চলে গেল।
.
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। হুঁশ ফিরতেই দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম। ভাবলাম - পরীক্ষার আগে আর বের হওয়া যাবেনা। সামনে আমার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। আপনারা দোয়া করবেন- পরীক্ষাটা যেন ভালোয় ভালোয় দিতে পারি। আর যেনো কোনো গুটিবাজির খপ্পরে না পড়তে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৩৮
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×