এক
- (একটি রাগী মহিলা কন্ঠ)এই যে আপনি … এদিকে তাকান !!!
- (ছেলেটা সিগারেটটা কৌশলে হাতের ভিতরে গুটিয়ে নিল)জ্বী… কিছু বলবেন ?
- আপনাকে আমি কয়েকদিন যাবৎ খেয়াল করছি, লেডিস হলের এই এরিয়ায় এসে আপনি সিগারেট ফুকেন। আচ্ছা আপ্নারা ছেলেরা কি মনে করেন বলেন তো… ভাবেন সিগারেট খেলে মেয়েদের চোখে হিরো হওয়া যায় ? এই সস্তা হিরোজমের সংগাটা কোথায় পেলেন বলেন তো ? চেহারা দেখে মনে তো হচ্ছে না কোন মেয়ে আপনাকে মন দিয়েছে। তো ছ্যাকা খেয়ে কি লেডিস হলের সামনে সিগারেট নিয়ে বসেছেন ???
- (সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে)আর কিছু বলবেন ?? ইউ মে ক্যারি অন …
- কি ??? আপনার সাহস কত ? আপনি আবার আমার সামনে সিগারেটে টান দিলেন ? আপনি জানেন আমার বাবা আমার সামনে সিগারেট খেতে সাহস করেন না ??
- জানতাম না। এখন জানলাম। কিন্তু আমাকে দেখে কি আপনার বাবার কথা মনে হল (অট্টহাসি)। এনি ওয়ে, আপনার মা বোধহয় অনেক সুন্দরী … না ?
- আশ্চর্য … আপনি কোন ডিপার্টমেন্টে বলুন তো ! আমি প্রক্টর স্যারের কাছে কমপ্লেন দিব আপনার নামে। আচ্ছা আপনার বাবা মা কোন শিক্ষা দেয়নি আপনাকে ?? আপনি কি সব মেয়েকে ডেকেই জিজ্ঞাসা করেন তার মা সুন্দরী কিনা ? আপনার সাথে কথা বলতেই আমার ঘৃণা করছে।
- ওমা … এতে রাগের কি হল !!! আপনি দেখতে এত্ত কিউট, তাই ভাবলাম হয়ত আন্টিও হয়ত অনেক কিউট। মেয়েরা মায়ের মত দেখতে হলে একটু বেশিই কিউট হয়। আর তাছাড়া প্রক্টর স্যারের কাছে আমার নামে আরো অনেক অভিযোগ জমে আছে। আপনি আর তার প্যারা বাড়িয়েন না।
- আপনি ফ্লার্ট করছেন আমার সাথে ? জাহান্নামে যান আপনি, আমার কোন যায় আসেনা। কিন্তু এর পর কোন দিন যদি এখানে বসে সিগারেট ফুকতে দেখেছি … তবে সত্যিই আমি প্রক্টর স্যারের কাছে কম্পলেন করব
।
- ধুরো … ঘোড়ার ডিম। এসছিলাম বান্ধবীর থেকে কিছু নোটস নিতে, আর বিদঘুটে নোটস গুলো আমার মাথায় ঢুকে না। সিগারেটটা ধরালাম তাই… কিন্তু আপনি জ্ঞানের পসরা সাজিয়ে বসলেন। আচ্ছা জ্ঞান দিলেন ভালো কথা … আবার ক্যারেকটার নিয়ে কথা বললেন। আপনার আচরন দেখে তো মনে হচ্ছে না আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে… থাকলেও ঝগড়ার আশীর্বাদের ব্রেক আপ হইছে। (হাসি চেপে রাখার শব্দ)।
- আপনার সাথে প্যাচাল পেড়ে সময়টাই নষ্ট। আপনি জাহান্নামে যান।
- ওকে … মিস। দেখা হবে ওখানে।
(দুই)
- (পরিচিত সেই মহিলা কন্ঠটা আবার) আপনি লাইব্রেরীতেও আসেন ? এমেইজিং !!
- (সেই সিগারেট খোর ছেলেটাই) আপনি কি প্যারা ছাড়া কিছুই দিতে পারেন না ? একটা এসাইন্মেন্ট দিতে হবে আমাকে কাল… সেটাই প্রিপেয়ার করলাম।
- ওহহহ , তারমানে আপনি ওতটা কেয়ারলেস নন বটে। তো সিগারেট খাচ্ছেন না কেন ? লাইব্রেরীর ভিতরেই খান না … সমস্যা কি ?
- আপনি চিন্তা করেন না … মানিব্যাগে আছে। বেরিয়েই খাব।
- আচ্ছা আমি যে এই দুদিন আপনাকে এত্ত কথা শোনালাম, আপনার ভিতরে কি একটু অপমান বোধ হয়নি। কি এমন আছে ওটার মধ্যে … কত টাকা খরচ হয় দিনে। ঐ টাকাটা দিয়ে অন্য কিছু খেলেও তো কাজে লাগে।
- হুম … মাঝে মাঝে গাজাটা ও খাওয়া হয়, আমার কাছে ‘অন্যকিছু’ বলতে ওটাই। তবে সবসময় না কিন্তু… বিশেষ অকারেন্স গুলোতে, ফ্রেন্ডরা একসাথে থাকলে।
- আপনার মত ছেলেদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কি আশা করা যায় বলুন। এখন শুনছি আপনি সিগারেট খোর শুধু নন … গাজাখোর ও বটে। বাবা – মা টাকা পাঠাচ্ছে, সেগুলো উড়িয়ে আবার বুক চেতিয়ে বলা হচ্ছে যে গাজাও খাওয়া হয়।
- দেখুন কথা গুলো কিন্তু এবার আমার ইগোতে আঘাত দিচ্ছে। আমি নিজে ইনকাম করি, আর আমার সিজিপিএ এখনো পর্যন্ত আপনার চেয়ে .৪৩ বেশি। আর আমি মিউজিশিয়ান… তাছাড়া ক্রিয়েটিভ মানুষদের অভ্যেস, রুচি কিছুটা আলাদা হয় … সেগুলো আপনাদের মাথায় ঢুকবে না।
- নিজেকে ক্রিয়েটিভ ও দাবী করা হয় ? আপনি আমার একাডেমিক ইনফরমেশান পেলেন কিভাবে ? আমার সিজিপিএই বা জানলেন কিভাবে ? আপ্নি কি … …
হঠৎ লাইব্রেরীয়ানের বাজখাই কন্ঠ … “এটা খেলার মাঠ না … লাইব্রেরী। ঝগড়া করতে চাইলে তোমরা বাইরে গিয়ে করো। অনেক ক্ষন ধরে সহ্য করছি। ”
(তিন)
তারপর ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেল। খুলল প্রায় এক মাস পর। একটা ছেলে লাইব্রেরীর সিড়ির উপরে বসে আছে। যেন কারো জন্য অপেক্ষা করছে। একদিন … দুদিন … তিনদিন … অপেক্ষার মানুষটি আসেনি। ছেলেটা রোজ সকালে এসে বসে থাকে … ঘন্টা তিনেক পর চলে যায়। কিন্তু হঠাৎ একদিন ছেলেটা দেখল একটা মেয়ে আসছে লাইব্রেরীর দিকে, সেই মেয়েটাই যে তাকে প্রচুর ঝাড়ি দিয়েছে সিগারেটের জন্য। মেয়েটির অপেক্ষাতেই ছিল ও … কিন্তু আজ মেয়েটাকে অপূর্ব লাগছে একটা লাল শাড়ীতে, ঠোটে হালকা লিপস্টিক। তাকে দেখে বোঝার জো নেই যে এই মেয়েটিই এত জেদি, এত্ত বকাঝকা করে। কিন্তু হঠাৎ ছেলেটা দেখল মেয়েটার পাশে কেউ একজন, ফর্মাল ড্রেসে বেশ সুদর্শন একটা ছেলে। কাছে আসতেই লাইব্রেরীর সিড়িতে অপেক্ষারত ছেলেটা প্রায় চেচিয়ে উঠলঃ
- আপনি জানেন আপনার জন্য কতদিন থেকে এখানে অপেক্ষা করছি আমি।
- (মেয়েটা নির্লিপ্তভাবে) আপনাকে কে বলেছে অপেক্ষা করতে ?
- আপনি জানেন আমি এক মাস সিগারেট খায়নি !!
- কংগ্রাচুলেশানস। শুভ কামনা থাকল।
- কিন্তু আপনি না থাকলে আমি আবার এটা ধরে ফেলব। আমি চায় আপনি আমাকে সারাজীবন ধরে বকাঝকা করেন। নাহলে আমি কন্ট্রোল করতে পারব না নিজেকে। আবার শুরু করব।
- মানে ??? আমি ঠিক বুঝছি না আপনার কথা।
- মানে কিছু না … আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। যদি সল্প সময়ে বলতে হয় তাহলে এটাই আমার কথার মানে। যদি একটু সময় দেন তাহলে আরেকটু ভেংগে বলব।
- (মেয়েটা কিছুটা কাছে এসে) একদম পাগলামী করবেন না। পাশে যাকে দেখতে পাচ্ছিলেন উনি আমার বাগদত্তা। আমাদের রিলেশান ছিল … ফ্যামিলি মেনে নিয়েছে। সো … … । আচ্ছা আপনাদের আই মিন ছেলেদের চিন্তা ভাবনা এতটা সস্তা কেন বলতে পারেন। দুদিন একটা মেয়েরা সাথে একটু কথা হলেই তার প্রেমে পড়ে যেতে হবে ?? রাবিশ ।
ছেলেটা কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে বসে থাকল। সম্মোহনে ঘোরটা কাটতে কয়েক মিনিট লেগে গেল। তারপর সে মানিব্যাগটা খুলে উকি দিল। অনেক দিনের অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে একটা সিগারেট… প্রায় চ্যাপ্টা হয়ে গেছে । বের করে নিল ছেলেটা … ডান হাতের দু নখের মাঝে আটকে আছে সেটা। এই মূহুর্তে একটু আগুন ওর অনেক বেশি দরকার............
#একটা_লাইটার_হবে_??
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১:১৮