শুক্রবার ভোর ৫ টা ৪০ মিনিট.. ধানমন্ডি ৩২ নম্বর
রোডের ৬৭৭ নম্বর বাড়ি।
মধ্যরাতেই মেজর ফারুক অপারেশন ব্রিফ করে, সেই
অনুযায়ীই সবকিছু ঘটতে থাকে। মেজর হুদা, মেজর
মহিউদ্দিন এবং মেজর নূর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
হত্যাকাণ্ডের প্রধান তিন ঘাতক। এর মধ্যে মেজর
মহিউদ্দিন এর সৈন্যরা শেখ মুজিবের গার্ডদের বাঁধা
উপেক্ষা করে ভেতরে ঢুকতে চাইলে তারা বাঁধা দেয়।
তাদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ
কামাল বুঝতে পারেন সৈন্যরা বাসা আক্রমণ করতে
এসেছে। তিনি (শেখ কামাল) তার অস্ত্র নিয়ে নিচে
নেমে এসে রিসেপশন রুম থেকে গুলি করতে থাকেন,
সৈন্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। শেখ কামাল রিশেপশন
রুমেই মারা যান। মেজর হুদা বাসার ভেতরে ঢুকলে
সিঁড়িতেই শেখ মুজিবের সাথে দেখা হয়ে যায়। তাদের
মধ্যে কথাবার্তা হয় অনেকটা এরকম-
বঙ্গবন্ধুঃ তোরা কি করতে চাস?
মেজর হুদাঃ আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।
বঙ্গবন্ধুঃ তুই আমাকে মারতে চাস? কামাল কোথায়?
তোরা কামালকে কি করেছিস?
মেজর হুদাঃ স্যার, কামাল তার জায়গাতেই আছেন।
আপনি আমাকে 'তুই' 'তুই' করে বলবেন না। আপনি বন্দী।
বঙ্গবন্ধুঃ (গর্জে উঠে) কি! তোদের এতো বড় সাহস!
পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাকে মারতে পারে নি,
আর তোরা মারতে চাস? আমি জাতির পিতা, আমি
বাঙালি জাতিকে ভালোবাসি, তারা আমাকে
ভালোবাসে।
মেজর হুদাঃ স্যার, এসব কথা রেখে আপনি চলুন আমার
সাথে।
তাদের কথাবার্তার এক পর্যায়ে সিঁড়ি থেকে ৭/৮ ফুট
সামনে মজর মহিউদ্দিন, মেজর নূর ও অন্যান্য সৈন্যরা
চলে আসে। মেজর নূর এগিয়ে এসেই 'বাস্টার্ড' গালি
দিয়ে প্রলাপ বকতে বকতে তার স্টেনগান থেকে গুলি
করে। জাতির পিতার বুক ঝাঁজরা হয়ে যায় সে গুলিতে।
তিনি সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর বুক থেকে তাজা
রক্ত গড়িয়ে পড়ে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে... সময় তখন ভোর ৫
টা বেজে ৫০ এর মতো। ঠিক যে সময় পুবের আকাশ লাল
করে আদিকালের সূর্যটা ওঠার কথা ছিল ঠিক সেই সময়ই
চিরদিনের মতো অস্ত গেলো বাঙালি জাতির
অবিসংবাদিত, টকটকে লাল সূর্যটা.
তথ্য সূত্রঃ
-লিগেসি অব ব্লাড/ অ্যান্থনি মাসকারেনহাস
-তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা/ লে.
কর্ণেল (অব এম এ হামিদ পিএসসি
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪২