somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্টারভিউ

১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্টারভিউ দিতে গেছি। আমার সিরিয়াল সবার পেছনে।
একের পর এক ইন্টারভিউ রুমে ঢুকছে আর বের হচ্ছে। আমি
তাকিয়ে শুধু দেখছি। কারো সাথেই কিছু বলছি না।
একজন হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করল - ইন্টারভিউ দিতে
এসেছেন বুঝি? মাথা নেড়ে বললাম - হ্যাঁ। আবার
জিজ্ঞেস করলেন- এই প্রথম নাকি আরো দিয়েছেন?
বললাম, প্রথম। তারপর আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন
যেন উনি খুব বিরক্ত। তাঁর প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর
দেয়া আর রিপিট কোন প্রশ্ন না করায় যে উনি বিরক্ত
হয়েছেন তা বুঝতে আমার বাকি রইল না। আমরা জাতি
হিসেবে অনেক বাচাল। তাই কেউ বাচালগিরি না
দেখালে তাকে বেরসিক আর গম্ভীর মনে হয়। আমাকেও
নিশ্চয়ই তিনি তেমনই ভাবছেন।
.
সবার শেষে আমার ডাক পড়ল। আমি রুমের সামনে গিয়ে
বললাম- মে আই কাম ইন?
চশমাপরা এক টাকমাথার লোক বললেন - ইয়েস কাম ইন।
ভেতরে ঢুকেই দেখলাম আরো দু'জন কোটপরা লোক বসা।
সালাম দিলাম। সালামের উত্তর নিয়ে আমাকে বসতে
বললেন। বসলাম। হাত বাড়িয়ে আমার ফাইলটা চাইলেন।
দিলাম।
.
একজন জিজ্ঞেস করলেন-নাম কি?
- হৃদয় মাহমুদ
- কাউকে দিয়েছেন?
- কি?
- হৃদয়।
- কোথায় থাকে ?
লোকটা এবার বুকে হাত দিয়ে বললেন- এটার ভেতর।
আমি বললাম- কই পেলাম নাতো।
- কি বলেন? সবার মধ্যেই তো থাকে। এর জন্যই তো একজন
আরেকজনকে ভালোবাসে।
- কই আমি এক মেয়ের হৃদপিন্ড কেটে দেখেছিলাম।
কিন্তু জানেন তো, হৃদয়টাই পেলাম না।
আমার কথা শুনে তিনজনই চোখ বড় করলেন। টাকমাথার
লোকটা স্ববিশ্ময়ে প্রশ্ন করলেন - আপনি কি ডাক্তার?
- না তো। ব্যাচেলর।
- তাহলে হৃদপিন্ড কেটে দেখেছেন কিভাবে?
- মেয়েটা বলল, আমাকে নাকি ও হৃদয়টা দিয়ে দিয়েছে।
ঐ হৃদয়ে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। ঐ হৃদয়টা নেয়ার
জন্যই....
- খুন করেছেন?
- না। বুকটা কেটে হৃদপিন্ডটা খুলে খুলে দেখেছি। কখন
যে মারা গেল বুঝতেই পারিনি। হৃদপিন্ড হাতে নিয়ে
ওকে হৃদয় কোনটা জানতে চেয়েই দেখি ও আর কথা
বলছে না।
আমার কথা শুনে দুইজন হাত দিয়ে মুখ ঢাকলেন। একজন
টাকে হাত দিয়ে মাথা নিচু করলেন। আমি একেবারে
নরমাল।
.
একজন মুখ থেকে হাতটা নামাতে নামাতে বললেন- তা
পুলিশে ধরে নি আপনাকে?
- কোন প্রমাণ পায়নি। আমাকে সন্দেহও করেনি।
এবার টাকমাথার লোকটা বললেন, বাদ দিন ওসব কথা।
সিভিটা তো সুন্দর করেই সাজিয়েছেন। কম্পিউটার
জানা নেই কেন?
- চাকরির জন্য তো কম্পিউটার লাগে। বিয়ের জন্য এর
কি কাজ?
- কম্পিউটার জানা ছাড়া চাকরিই বা দিয়েছে কে
আপনাকে?
- কে বলল আমি চাকরি করি!
- সে কি, আপনি বেকার?
- হ্যাঁ।
রেগেমেগে টাকমাথার লোকটা বললেন, বেকার হয়ে
আমার মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছ কোন সাহসে? এটা
কি মজা হচ্ছে?
- আসলে বিয়ে করলে থাকার একটা জায়গা হয় আরকি।
জঙ্গী আসার পর থেকে বাড়িওয়ালারা ব্যাচেলর ভাড়া
দিচ্ছে না। আগের বাসা থেকেও বের করে দিল।
- হোয়াট দ্যা হেল ইজ গোয়িং হিয়ার! বেরিয়ে যাও।
একে তো ব্যাচেলার তার উপর একটা খুনি। যাও বলছি।
উনি রীতিমত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
- তাহলে আপনিও খুনি।
- কি আমি খুনি?
- হ্যাঁ। আপনি আমার আশা, ভরসা, স্বপ্ন খুন করেছেন। কত
ভেবেছি, আপনার মেয়েকে বিয়ে করলে থাকারও একটা
ব্যবস্হা হবে, ব্যাচেলারের অভিশাপটাও ঘুঁচবে। তা আর
হলো কই!
- সিকিউরিটি, সিকিউরিটি! এই রাসকেলটাকে ঘাঁড়
ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও।
- এক্সকিউজ মি জনাব। আমি একা এসেছি, একাই যেতে
পারব। সিকিউরিটি ডাকার দরকার নেই। আর হ্যাঁ, রেগে
গেলেন তো হেরে গেলেন।
.
তারপর আমি বের হয়ে আসলাম। বের হতেই একটা শব্দ হল।
মনে হয় কাঁচের কিছু রাগের বসে ভেঙেছেন। কি অদ্ভূত!
রাগ তো আমার হবার কথা ছিল। আমার স্বপ্ন খুন হল।
.
কি আর করার। অাজ রাতটাও বেঞ্চেই কাটিয়ে দিব।
কাল আবার আরেক জায়গায় ইন্টারভিউ আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×