যথাসময়ে রওনিতাকে কৌশিকদের সামনে উপস্থাপন করা হল।রওনিতাকে কৌশিকের বাবা মা আদর করে সোফায় নিজেদের মাঝখানে বসালো।কৌশিক রওনিতাকে একবার পুরোপুরি দেখে আবার চোখ নিচে নামিয়ে ফেলল।লাল ড্রেস পরা মাথায় ঘোমটা দেওয়া শ্যামলা গড়নের ৫ ফুট ৪ উচ্চতার মেয়েটি দেখতে অপরূপ সুন্দরী না হলে ও সুন্দরী বটে।এবার শুরু হল প্রশ্ন উত্তর পর্ব।কৌশিকের বাবাই প্রথম প্রশ্ন করল রওনিতাকে।তুমি কিসে পড় মা?
আমি এবার ইংলিশে মাস্টার্স কমপ্লিট করলাম।
কৌশিকের মেজাজ টা ভিতর ভিতর খারাপ হল।রওনিতা জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি থেকে এবার মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে,বর্তমানে চাকরীর জন্য চেষ্টা করছে,এসব সবই তার বাবা মা বায়োডাটা থেকে জেনে এসেছে।তারপর ও এসব ফর্মালিটি মার্কা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে।শুধু তাই নয়,যদি আজ সব কিছু ঠিকঠাক মতে হয়, তাহলে আজই তারা রওনিতাকে আংটি পড়িয়ে দিয়ে যাবে।মার ব্যাগে আংটিটা আছে।কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন উত্তর পর্ব শেষে কৌশিক আর রওনিতাকে কথা বলার জন্য একটা আলাদা রুমে পাঠানো হল।
রওনিতা কৌশিককে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।রুমে গিয়ে রওনিতা মাথা থেকে ঘোমটা টা নামিয়ে ফেলল।এবার প্রথম কথা রওনিতাই বলল।আপনি যদি কিছু মনে না করেন আমরা আমার রুমের সাথের বারান্দায় বসি।বারান্দাটি অনেক বড় এবং গোল।কৌশিককে বারান্দায় একটা চেয়ারে বসতে দিয়ে রওনিতা নিজের বিছানা থেকে মোবাইলটি নিয়ে এল।এবার সে কৌশিকের মুখোমুখি রাখা ইজি চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে দোল খেতে খেতে কৌশিককে একবার আপাদমস্তক দেখে নিল।নীল শার্ট কালো প্যান্ট পরা ৫ ফুট ১০ইঞ্চি উচ্চতার সুগঠিত শরীর এবং চওড়া কাঁধের এই ২৯ বছরের যুবকটিকে যে কোন মেয়ে প্রথম দেখায়ে ই পছন্দ করবে।
ইউ আর লুকিং গুড।
থ্যাংঙ্কস রওনিতা,খুশিতে গদগদ হয়ে উঠল কৌশিক।রওনিতাদের কাজের লোক এসে রওনিতা আর কৌশিকের মাঝে রাখা ছোট টেবিলে চা দিয়ে গেলো।রওনিতা নিজে ই কৌশিককে এক কাপ চা হাতে তুলে দিল।
রওনিতা এবার জিজ্ঞেস করল আংটি খুলে ফেললেন যে?
কৌশিক একটু অপ্রুস্তুত হয়ে পরল,উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে সে নিজে একটা প্রশ্ন করে ফেলল।
আপনি কিভাবে জানলেন যে আমি আংটি পড়তাম?
রওনিতা একটু হেঁসে কৌশিকের প্রশ্নের উত্তর দিল,না জানতাম না।এখন জানলাম।আসলে অনেকদিন আংটি পড়ে থাকলে আঙুলে আংটির দাগ হয়ে যায়।আপনার বাম হাতের রিং ফিঙ্গারে ও এমন একটা দাগ পড়ে গেছে।
কৌশিক বুঝতে পারল রওনিতার অবজারভেশন ক্ষমতা ভাল।ওর সাথে একটু সাবধানে কথা বলা উচিত এবং থাকা উচিত।
ও আচ্ছা,আসলে রং উঠে গেছিল তাই খুলে ফেলেছি।
আর কোন কথা বলল না রওনিতা।সে তার ইজি চেয়ারে দোল খেতে খেতে মোবাইলে অনেক মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখছে।মোবাইলটা প্যান্টের পকেটে বারবার ভাইব্রেট করছে কৌশিকের।পকেট থেকে বের করতেই দেখতে পেল আটটা মিসড কল উঠে আছে আর একটা মেসেজ।কলগুলো দিয়েছে অথৈ,কৌশিকের পঞ্চম এবং রিসেন্ট ব্রেক হওয়া গার্লফ্রেন্ড।কল ধরার জন্য একটা আকুতি করে মেসেজ ও পাঠিয়েছে অথৈ।কৌশিক মনে মনে বলে উঠল শালি বিচ।তোর মত মেয়ে এখন আর আমার দরকার নেই।এখন তো শুধু রওনিতা কেই চাই।ওকে পেলে সারাজীবন আরামেই কেটে যাবে।আবার কল আসতেই কৌশিক মোবাইলটা বন্ধ করে দিল।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর মোবাইলটা টেবিলের উপর রেখে রওনিতা আবার কথা শুরু করল।আপনি ত একজন আর্কিটেক্ট,কি কি স্পেশাল কাজ আছে আপনার করা?
এখন পর্যন্ত আমি চারটি ডিজাইন করেছি।আর যদি স্পেশাল জানতে চান,তাহলে বসুন্ধরায় একটি নতুন মার্কেট হবে তার ডিজাইন করছি।
গুড,তা গার্লফ্রেন্ড কয়টা ছিল লাইফে?জিজ্ঞেস করে রওনিতা একটু হেঁসে উঠল,জাস্ট এমনি আস্ক করছি।
কৌশিক এবার একটু নড়েচড়ে বসল।আসলে প্রেম করার কখন সময় পাইনি।জানেন ই তো,আর্কিটেক্টদের কত পরিশ্রম করতে হয়।
ওহ,আই সী।তাহলে তারিন,নীলিমা,অথৈ এরা কি ছিল?জিজ্ঞেস করে রওনিতা কৌশিকের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাঁসি হাসল।
কৌশিকের মনে হল ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে।ওর হাত কেঁপে চায়ের কাপটা পড়ে যেতে লাগল।তার আগেই রওনিতা এসে কৌশিকের হাত ধরে ফেলল।পড়ে যাবে তো চা টা, তার চেয়ে ও বড় কথা আপনার জামা আর প্যান্টটা নষ্ট হবে।এই সময়টা রওনিতার মুখ কৌশিকের মুখের অনেক কাছে ছিল।রওনিতা কৌশিককে কাছ থেকে একবার দেখে নিল।কিন্তু কৌশিক মুখ তুলে একবার তাকানো তো দূরের কথা,উল্টো তার ভয় হতে লাগল।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬