ঈদটাতো এসেই গেল....প্রায় দোড়গোড়ায়। আগে ছোটবেলায় দিন গুনতাম ।এখন আর দিন গোনা হয় না। আমার ঈদ (শুধু আমার নাকি আরো অনেকেরই!) এখন মাঝখান থেকে চির ধরে দুই ভাগ হয়ে গেছে ! একভাগের নাম দিয়েছি সেকাল আর একভাগ একাল।
..............
সেকালের কথা দিয়েই শুরু করি। তখন সাল টা ৯৬ থেকে ৯৯ এর মধ্যে। সবচেয়ে আনন্দের সময় ছিল তখন । পয়লা রোজা থেকেই শুরু হত দিন গোনা ।গুনতে গুনতে ঈদের আগের সন্ধ্যা আসত । শুরু হত ঈদ কার্ড চালাচালি ।ক্লাস সিক্স পর্যন্ত ঈদের আগের দিন বিকেলে চালাচালি হত । সেভেন থেকে ইন্টার পর্যন্ত যেদিন মাদরাসায় ঈদের বন্ধ দিত সেদিন চালাচালি করতাম। তারপরে চাঁদ দেখা । আমাদের তো মাঠ নেই । তাই হয় ছাদ নয়ত রাস্তা। আমি ইফতারী খেতে খেতে রাস্তার উপরে চলে যেতাম সবার সাথে মজা করে চাঁদ দেখতে । চাঁদ মামার ( ও বলাই হয় নি .....চাঁদ কিন্তু সত্যিই আমার মামা....আমার মেজো মামা ) হাসিমুখটা দেখে বাসায় এসে মজা করতাম। আবার সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়তাম ...খুব ভোরে উঠতে হবে যে ! ঘুম থেকে না উঠতেই আম্মুর রান্নার ঘ্রাণ এসে নাকে লাগত । হুড়মুড় করে বিছানা থেকে উঠে দিতাম রান্নাঘরে দৌড়...কিন্তু তখন খাওয়া নিষেধ ( হাত-মুখ না ধুয়ে খাওয়া যাবে না ! ) এরপর গোসলের পালা ........নতুন ড্রেস.....আম্মুর হাতে বানানো.....তার নিজের আবিস্কৃত স্টাইলে ! আম্মু প্রত্যেকবার নিজে নতুন নতুন স্টাইল বের করে ড্রেস বানিয়ে দিত ...পরের বারে দেখতাম, আমাদের এলাকার অনেক মেয়ে ঐ স্টাইলে ড্রেস বানিয়েছে ( আমার স্টাইল নকল করে!) !!আব্বুর সাথে ঈদগাহে যেতাম ( ৯৮ এর পরে অবশ্য কয়েকবার নামাজ শেষে কবরস্থানেও গেছি নানাভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে) । এরপর সেখান থেকে বান্ধবীদের সাথে ঘুরাঘুরি.....এরপর বাসায় ফিরেই মেজো ফুফুর বাসায় যেতাম। ফুফুর বাসার সামনে কিসের যেন মেলা বসত । আব্বু ওখান থেকে আমাকে বেলুন কিনে দিত । বেলুন হাতে করে রিক্সা দিয়ে বাসায় ফিরতাম । বাসায় একটু খেয়ে আবার দৌড় দাদুর বাসায় । ঘুরে টুরে রাতে বাসায় ফিরে কান্না-কাটি করতাম ....ঈদ শেষ হয়ে গেল, ঈদ শেষ হয়ে গেল !!!
ছোটবেলায় চালাচালি হওয়া কয়েকটা ঈদকার্ড এখনো আমার কাছে আছে :
১..
২..
৩...
৪...
..............
....................
এবার আমার ঈদের একাল......
একালের ঝুলিতে আর কিছুই নেই...ঝুলি পুরা ফাঁকা । কেউ আর আমারে ঈদকার্ড দেয় না। ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরি আধা মাস আগেই । তাই ফ্রেন্ডদের কাছে পাইনা । সবাই যায় গ্রামের বাড়ি....তাই ডিজিটাল পদ্ধতিও খাটে না ঘুরাঘুরিও আর হয় না .......কই ঘুরব থাকি আমি চারদেয়ালে ঘেরা এক বাড়িতে ......সবার ভাবখানা এমন, যা করবা সব বাড়িতেই কর ........তাই খালি বাড়ির মধ্যেই পায়চারি করি .......( ভাগ্যিস এটা নানুবাড়ি ! নিজেদের বাড়ি হইলে খবর ছিল !)
কেন যে বড় হলাম ! ছোট হতে খুব ইচ্ছে করে !কিন্তু যে পারি না !এবার তাহলে ছোট টা হয়েই যাই ! আলাদিনের প্রদীপটা আমারে ছোটবেলায় ফিরিয়ে দিবে......তারপরে আবার সবার সাথে বেলুন হাতে নিয়ে ঘুরব আর মজা করব !!
এই যাহ ...! আমার ভাঙ্গা ঈদের দুই ভাগের প্যাচাল পাড়তে পাড়তে আসল কাজই যে এখনও হলো না!!!
সবাইকে আগাম ঈদ মোবারক !