একপাশে তার পদ্মা......আরেক পাশে যমুনা । দুই নদী-বিধৌত এলাকা ঘাস-ফড়িং আর ঢোল-কলমীর দেশ পাবনা। কবি ওমর আলী তাঁর এক কবিতায় যাকে নিয়ে বলেছিলেন :
".......আবদুল হামিদ মর্জিনা খাতুনকে বলল,আমি যাবো......
আব্দুল গফুরও আনোয়ারা খাতুনকে বলল, আমি যাব.....
ঢোল কলীর ফুটেছে লাল আভা ফুল তারাও তাকালো
..............কি যেন বলছে খুব ছোটো পাখি পথের পাশে
শরবনের ওপরে কিংবা বাবলার শাখায়.....
আব্দুল হামিদ মর্জিনা খাতুনকে বলল মটর ফুলের দেশে
শীতকালে গান গাইতে যাচ্ছি........"(আমি যাবো; ওমর আলী)
এই সেই জনপদ যার সোঁদা মাটির গন্ধে, আঞ্চলিকতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে ভাল লাগা, ভালবাসার পরশ, অনুভূতি । যেসব অনুভূতি শুধু কবি বন্দে আলী মিয়া, আবু হেনা মুস্তফা কামাল কিংবা ওমর আলীর কবিতাতেই নয়, মিশে আছে এ এলাকার গহীন জনপদের নারীদের হৃদয়-উৎসারিত মেয়েলী গীতেও ।
প্রাচীনকালের এসব গীতে প্রকাশ পেয়েছে প্রেম-ভালবাসা, এমনকি বিয়ের পরে ঘরনীর ঘরকন্নাও ।
প্রেমময় গ্রামীণ জীবনে যেমন দেখতে পাওয়া যায়:
"গোসল করিবের গিছিলাম মারে
জোগের সানো বাঁধা ঘাটে রে
পাগল হোলেম আমি জোগেক দেখেরে..."
"......যে না ঘাটে ধুপার মিয়েরেও যো
কাপড় ভালো খাচে
সেই না ঘাটে বল্লোপ রাজারে যো
গোসল ভালো করে
ঐ দিক সোরে গোসলিও করোরে বল্লোপ রাজা.....
পরুক পরুক বোলের ও ছিটেরে
মাথা প্যাতে লেবো ।"
আবার বিয়ের সময় আগেকার দিনে এ এলাকার মা-দাদীরা গীত গাইত......অজ পাড়া গাঁয়ে এখনো যেগুলো দেখতে পাওয়া যায়:
" আ-লো পুতল্যা কাঁদিস ক্যা
গামছা মুড়ি দিয়া-
তোর না জামাই আসতেছে
দুইটা কতুর নিয়া।
দুইটা কতুর রাধেক গা
হজের গুড়া দিয়া
হজের গুড়ার ঘেরান পাইব
নাক মৌ মৌ দিয়া।"
"আম গাছ তলায় ঝামুর ঝুমুর কলাগাছ তলায় বিয়া
ঐ যে জামাই আসতেছে বিয়ার জ্বালা নিয়া
জামাই আসে খোশে
মাগো মা কাঁদিস না
শ্যামের গলা ভাঙ্গিস না
মাইয়া দিমু সাজাইয়া
টাকা লিমু বাজাইয়া।"
এলাকার ছেলে-পুলে আবার ফুর্তি করত:
" আলুর পাতা থালু থালু ব্যান্নার পাতা দই
সকল জামাই খায়া গেল, মাইঝা জামাই কই?
খড়ম থুইল ভাঙ্গা গরে খড়ম নিল চোরে
শালা-শালীরা ফুর্তি করে গাব গাছের গোরে ।"
এছাড়াও আরো যেসব গীত এককালে মুখে মুখে প্রচলিত ছিল :
"সাল ধান নিই বানিবো
দুধের খিরস্যে রাধিব
আমার এ খির খাবি
পাঠানজাদার বেটি নারে
আমার এ খির খাবি
সৈয়দজাদার বেটি নারে ।"
"দামাদের বাপ আয়েছে বাড়ীত রে
কি দিয়ে দেবো গুটাদুই ভাত রে
আজ বুঝি আমার শাহী খানারে
বেজী মারিবো গর্তে গর্তে
গোস্ত রাধ্যে দেবো পাতে রে
শিয়াল মারিবো ঝোড়ে ঝোড়ে
কাল্লা ভ্যাজে দেবো পাতে রে
আজ বুঝি আমার বাদশাহী খানারে ।"
........................................................................................
...................সৌজন্যে :
"পাবনা দিবস স্মারক সংখ্যা'৯৩" ও "পদ্মা-যমুনার পলিমাটি"।