প্রিয়া সাহার ইস্যুতে কিছু হিন্দু ভাই তার ব্যপারে সাফাই গাইছে এই বলে, “ হিন্দু হওয়ার অপরাধে কোন একসময় প্রিয়া সাহার ঘরে নাকি অগ্নিসংযোগ করেছিলো। এই ক্ষোভেই তিনি নাকি ট্রাম্পের সামনে বাংলাদেশকে ডুবিয়েছেন।“ মানে প্রিয়া সাহার কাজকে কিছুটা হালাল করার এবং একটু সহমর্মিতা পাওয়ার চেস্টা ।
সেই ভাইদের বলি, যেই মহিলার স্বামী দুদকের সহকারী পরিচালক, দুই মেয়ে আমেরিকায়, যেই মহিলা স্বামীর বিলাশবহুল সরকারি গাড়িতে চড়েন, তার টিনের ঘর পোড়ানোর গল্পটা আমার কাছে উপরে বর্ণিত ঘটনার মতোই উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মনে হয় । হয়তো এই টিনের ঘর পোড়ানোর গল্পকে পুজি করেই দুই মেয়ে আমেরিকায়, স্বামী দুদকের পরিচালক, নিজে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বড় পদে আর সবশেষে ট্রাম্প পর্যন্ত চলে গেছেন। কি? ভুল বললাম?
যাইহোক,এই ইস্যুতে অনেকেই অনেক প্রশ্ন করছেন। তেমনই কিছু কিছু প্রশ্ন আমার মাথাতেও ঘুরপাক খায়ঃ
# এই মেয়ে ট্রাম্পের কাছে কিভাবে পৌছালো? কে তাকে ট্রাম্পের কাছ পর্যন্ত নিয়ে গেলো? সেতো একা একাই যেতে পারেনি। নিশ্চয়ই একটা মাস্টারপ্ল্যান এবং টিম ওয়ার্ক এর মাধ্যমেই সে ওই পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছে । বাংলাদেশ সরকারের উচিত ওই সবকটাকে খুজে বের করে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা ।
# হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কাজটা কি? তাদের উদ্দ্যেশ্য কি ভালো? যদি ভালো উদ্দেশ্যই হতো তাহলেতো “হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান” ঐক্য পরিষদই করতো । শুধুমাত্র মুসলমানদের বাদ দিয়ে অন্যদের নিয়ে ঐক্য কেনো করলো? তার মানেকি মুসলমানদের ভালো চোখে দেখেনা?
# কোন দেশের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টির সর্বোত্তম ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়া আর ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানা। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অনেকেই মিডিয়ার সামনে মাঝেমধ্যে এমন কিছু কথা বলে তাতে কেনো যেনো এই কথাটাই মনে পড়ে যায় ।
# বাংলাদেশে অনেককে দেখা যায়, ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচেও কিছু লোক ভারতকে সাপোর্ট করে । এটা মোটেও দোষের কিছুনা। যে যার মতামত প্রকাশ করতেই পারে কিন্তু একজন বাংলাদেশী হিসেবে আমার কাছে ব্যপারটা সামান্য বেখাপ্পাই লাগে। ভারতের সাথে সম্পর্ক আজ যথেস্ট ভালো। কিন্তু সারাজীবন এরকমই থাকবে এর গ্যারান্টি কেওই দিতে পারেনা । রাজনৈতিক মারপ্যাচে কোনদিন যদি ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে, তখন এসব মানুষেরা মাতৃভূমির হয়ে অস্ত্র ধরা বাদ দিয়ে রাস্তায় আনন্দ মিছিল করবেনা সেটার গ্যারান্টি কি?
যাইহোক, আমার মুখে এসব কথা শুনে কিছু হিন্দু ভাইয়েরাই মন খারাপ করতে পারে। তাদের জ্ঞাতার্থে কিছু জিনিস শেয়ার করিঃ আমি মুসলমান, আমার মা বাবাও মুসলমান। তবে আমার ঢাকার বাসায় আমার মা-বাবা যতদিন না ঘুমিয়েছে, একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ তার চাইতেও বেশি ঘুমায় । এমনকি একটা খাটের মধ্যেই একজন কুরআনের হাফেজ, একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ আর আমি শেয়ার করে ঘুমানোর নজির আছে । যার মা প্রতি বছর আমার জন্য দুর্গা পুজার নাড়ু পাঠায়, আবার রমজানে সে আমার ইফতারের জন্য মুড়ি মাখায়। আজানের সময় সে আমাকে কথা বলতে নিষেধ করে, মসজিদের বাহিরে তাকে দাড় করিয়ে রেখে আমি নামাজ পড়ে আসি। যেমনটা সে মন্দিরে প্রার্থনার সময় আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকি। এমনকি আমার বাড়িতে গরু রান্না হয় জন্য আমার বউ তার জন্য আলাদা করে বাসনপত্র, গ্লাস রেডি রাখে । শুধু আমি নই, বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মধ্যে পরস্পরের ধর্মের প্রতি সম্মান এতটাই। অতএব একজন প্রকৃত মুসলমানের চোখের সামনে একজন হিন্দুকে কেও নির্যাতন করবে সেটা ভাবারও কোন সুযোগ নাই। আর আমি কোনদিনই চাইবোনা, প্রিয়া সাহার মতো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তি কিংবা কোন সংগঠনের কারনে আমাদের এই সম্প্রীতি নষ্ট হোক। ভারত আমাদের বন্ধু, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার ব্যপারে আমরা কখনোই ভারতের মতো হতে চাইনা ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৬