somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ভদ্রতা কি শুধু এক্সকিউজ মি –তেই সীমাবদ্ধ?

০৯ ই মে, ২০১১ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের ভদ্রতা কি শুধু এক্সকিউজ মি –তেই সীমাবদ্ধ?

আপনি কি খুব স্টাইল করে এক্সকিউজ মি বলতে পারেন? ব্যস, এতেই হবে, আর কিছু লাগবে না। আপনি এখন ভদ্র সমাজের মানুষ। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন পাগলের প্রলাপ বকছি? না, কারন আমাদের সমাজে রিকশাওয়ালাকে তুই বলা এখন ফ্যাশন। রেস্টুরেন্টে গিয়ে বয়-বেয়ারা কে তুই না বললে আপনি স্মাটই না। দুই/চার টা টোকাইকে চড় থাপ্পড় না মারলে আপনি কিসের পুরুষ মানুষ? মানুষের সাথে ভালো আচরণ করলে আপনি অতি শীঘ্রই আঁতেল আক্ষ্যায়িত হবেন। আর গালি-গালাজ, থাক সে প্রসংগে না হয় নাই গেলাম।

প্রসঙ্গত বিগত বি.ন.পি সরকারের আমলে ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
“অপরিচিত জনকে আপনি বলুন”
কাযক্রমটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। সেই সাথে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইদ এবং উনার সংগঠনের বেশ কিছু কাজও প্রশংসনীয় ছিল। ভেবেছিলাম, যাক কিছু একটা দিয়ে শুরু তো হল। ধীরে ধীরে বাকিগুলোও হবে। কিন্তু না, কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না, এই প্রবাদ বাক্যটির যথাথতা প্রমানের জন্য শীঘ্রই এইসব কাযক্রম মুখ থুবড়ে পড়ল।

ঘটনা-১
আমাদের কোম্পানীতে অনেক ক্লীনারনের সাথে শিহাব নামে একটি ছেলে আছে। প্রথম যেদিন আমি তাকে দেখি, সেদিন একটা ধাক্কার মত খেয়েছিলাম। টকটকে ফরসা, চশমা পরা রাজপুত্রের মত ছেলেটা কিনা দৈনিক আট ঘন্টা বাথরুম পরিষ্কার করে! টেনেটুনে এস.এস.সি. পাশ করা এত সুন্দর ভদ্র ছেলেটা আজ ভাগ্যের নিমমতায় বাথরুম ক্লীনার। অহরহ তাকে মানুষের দুঃব্যবহারের শিকার হতে হয়। আমরা বাঙ্গালীরাই খারাপ ব্যবহারটা বেশি করি। গরীব ঘরে জন্মেছে, এটাই কি তার দোষ? আমরা কি পারি না তাদের সাথে একটু ভালো ব্যবহার করতে?

ঘটনা-২
আমার সামনের বাসায় এক বড় ভাই ছিল, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর উচ্চ পদস্থ অফিসার। স্মাট, ভদ্র আর আধুনিক, আমি তাকে বেশ শ্রদ্ধার চোখেই দেখতাম। সচরাচর প্রাইভেট কারেই চলাফেরা করতেন। এক রাতে বাসায় ফিরার পথে দেখি, সেই বড় ভাই রিকশায় করে কোত্থেকে জানি ফিরেছেন। রিকশাওয়ালা দুটো টাকা বেশি চাওয়াতে, রিকশাওয়ালাকে গালি গালাজ করে থাপ্পর মেরে বাসায় চলে যান। এর পর থেকে ওই বড় ভাইকে দেখলেই সেই রাতের ঘটনাটা মনে পড়ে যায় আর উনাকে দেখলে আমার ভেতর কোন শ্রদ্ধাবোধ জাগে না। উনার তো অনেক টাকা, কি এমন হতো রিকশাচালককে দুটো টাকা বেশি দিলে?

ঘটনা-৩
আবু-ধাবীর নাজদা স্ট্রীটে একটি বাঙ্গালী রেস্টুরেন্টে আমি প্রায়ই যাই। মূলতঃ বাঙ্গালীরাই বেশি আসে এখানে। আরো অনেক বেয়ারার সাথে বেলাল নামে একজন বেয়ারা কাজ করেন সেখানে। বয়স আনুমানিক ৩৬/৩৭। এইচ.এস.সি. পযন্ত পড়ালেখা করেছিলেন। তারপর বিদেশ আসলেন। দালাল বলেছিল অফিস বয়ের কাজ। এসে দেখেন শুধু বয় তাও আবার রেস্টুরেন্টে। যাই হোক, মুল ঘটনায় আসি। রেস্টুরেন্টে হরেক রকম মানুষ আসে যায়। ২০/২২ বছরের কাস্টমার অবলীলায় বলে, ওই বেলাল চা দে। আমি দেখি সদা হাসসোজ্জল, ভদ্র আর নিতান্তই নিরীহ মানুষটার মুখ অপমানে অবনমিত হয়। কি করবে? সে যে বেয়ারা, তাকে তো তুই-ই বলবে। তার আর কি সম্মান?

আমি জানি, আপনারা বলবেন, এ আর নতুন কি? এই রকম অসংখ্য ঘটনা আমাদের চারপাশে প্রতিদিনই ঘটে। কিন্তু আমরা কি পারি না একটু ভদ্র ব্যবহার করতে। শুধু একটু সংযত আচরনই তো, এর জন্যে তো আর পকেটের টাকা খরচ করতে হচ্ছে না। অনেকে হয়তো বলবেন, রিকশাওয়ালা গুলো আসলেই বেয়াদপ। যারা এমন বলেন তারা কি কখনো একজন রিকশাওয়ালার সাথে ভালো ব্যবহার করে তাকে দুটো টাকা বকশিশ দিয়ে দেখেছেন সেই ঘাড়ত্যাড়া রিকশাচালক কেমন অমায়িক হয়ে যায়। একজন রিকশাচালক কিন্তু জন্ম থেকে ঘাড়ত্যাড়া থাকে না, মানুষের খারাপ ব্যবহার গোবেচারা থেকে তাকে ঘাড়ত্যাড়া হতে বাধ্য করে।

ঘটনা-৪
আমার দেশে দেখেছি, একজন বৃ্দধ লোক, মহিলা অথবা শিশু হয়তো রাস্তা পার হবে। কিন্তু কোন গাড়ী থামছে না, সবারই অনেক তাড়া। অথচ দেশের বাইরে এসে দেখি ভিন্ন চিত্র। আপনি রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাড়িয়েছেন? চলন্ত গাড়ী থেমে গিয়ে আপনাকে রাস্তা পার হতে ইশারা করবে। হয়তো আপনি গাড়ী ড্রাইভ করছেন, একটু থেমে অন্য গাড়ীকে সাইড দিলেন। সে চালক যাওয়ার সময় নিশ্চিত হাত তুলে আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে। এই রকম আরো কত ছোটখাট ঘটনা (অবশ্যই ভদ্রতা সংস্লিষ্ট) প্রতিদিন চলতি পথে মুগ্ধ করে। কয়টাই বা বলব।

মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি নাকি মানুষের আগ্রহটা বেশি থাকে। মানুষের সাথে খারাপ আচরন করাটা কি নিষিদ্ধ কাজের অংশ? তা না হলে আমরা কেন খারাপটা অনুকরণ করি? কেন আমাদের সহ্য ক্ষমতা এত কম? কেন এত অল্পতেই ধৈয্যচ্যুত হই? কেন কেউ একজন ভালো কাজ করলে তার ভূল ধরি? মানুষের বিনয়কে কেন আমরা তার দুবলতা মনে করি?

তারপরেও আমি স্বপ্ন দেখি। কারণ আমি যে আশাবাদী মানুষ। একদিন হয়তো আমরা আসলেই ভদ্রতা শিখবো। সংযম আর নমনীয়তা দিয়ে আমাদের সমাজটাকে সুন্দর করে তুলব।

[বিঃদ্রঃ হয়তো আমার এই লেখা কেউ পড়বে না। প্রথম পাতায় লিখা যাবে না। কারণ সামহয়্যারইনব্লগে একাউন্ট খোলার প্রায় এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও আমি এখনও মডারেটরদের ওয়াচে আছি। তারপরেও যারা সময় করে পড়েছেন তাদেরকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ]
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×