somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থিওরি অব নেগেটিভিটি

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


না, বিজ্ঞান নয়, আলোচনা করছি মনস্তত্ত্ব নিয়ে।

১.
ছেলেবেলায় আমার ইশকুল পালাবার অভ্যাস ছিল না তেমন, তবে ইশকুল অত ভালোও লাগত না, যেতে ইচ্ছ করত না। কিন্তু যেতে হত, যেতাম। বাবা সন্দেহ করত আমি আসলে ইশকুলে যাই-ই না, তিনি কয়েকদিন জিজ্ঞেস করেছেন, ইশকুলের নাম করে বের হয়ে বইয়ের ব্যাগ আসলে কই লুকিয়ে রাখিস?

এই প্রশ্নটায় আমার খুব আত্মসম্মানে লাগত। যে কাজ আমি করিইনি, সেটাই আমাকে শুনতে হত! এবং আরও খারাপ লাগত যে, ইশকুলের নাম করে বের হয়ে ব্যাগ কোথাও লুকিয়ে রেখে বাইরে ঘোরা যায়, এই চালাকিটা বাবাই নিজের অজান্তে শিখিয়ে দিচ্ছেন!

অনেক মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করে, কিংবা কেবল পরিবারের অযথা সন্দেহসূচক অপমানকর কথার কারণেই জেদ করে বখাটে কারও সাথে প্রেম করতে শুরু করে!

উপরে আমি দুইটা উদাহরণ দিলাম, এগুলো একটা মানুষকে পজিটিভ থেকে নেগেটিভ করে ফেলার নমুনা। একটা ভালো মানুষকে আপনি খোঁঁচা মেরে মেরে কথা বলে নেগেটিভ করে তুলতে পারেন। আবার একটা নেগেটিভ মানুষকে আপনি পজিটিভ কথা বলে বলে উৎসাহ দিয়ে পজিটিভ করে ফেলতে পারেন।

পজিটিভ উৎসাহের ক্ষমতা সম্পর্কে একটা উদাহরণ দেই, তখন রেবতী মোহন পাইলট স্কুলে পড়ি, ক্লাস আমার ভালো লাগত না। পাইলট স্কুল, খুব কড়াকড়ি! আমি পড়াশোনায় ভালো ছিলাম, রেজাল্টে ভালো ছিলাম না। সেখানে জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন শিক্ষক ছিলেন, খুবই ভয়ানক। ক্লাসে এলে সবাই কাঁপত, খুব পৈচাশিক আনন্দ নিয়ে পেটাতেন ছাত্রদের।

সেই ভয়ানক স্যার একদিন আমাকে দাঁড় করালেন, আমার প্রস্রাবের উপক্রম হল। স্যার বললেন, সবাই এই ছেলেটাকে দেখ! এই ছেলেটার চলাফেরা আচার আচরণে এমন কিছু আছে যা তোমাদের কারও নেই! তোমরা এই ছেলেটাকে ফলো করবা এখন থেকে, আমি একে তোমাদের ক্যাপ্টেন বানালাম!

সবাই আকাশ থেকে পড়ল, আমাকে কেউ তেমন চেনেও না। নিজেও অবাক হলাম, আমার রোল তখন ৮৬! রোল এক থেকে পাঁচের মধ্যে না হলে তো ক্যাপ্টেন হওয়া যায় না। আমি ওই স্যারের ক্লাসের সময়গুলোতে ক্যাপ্টেন হয়েছিলাম কিনা মনে নেই, কিন্তু সেই থেকে আমি পাল্টে গেলাম, প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস এলো, পরের বছর ফার্স্ট হলাম!
এরপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

সেই আমি একই আমি ছিলাম, শুধু একটু উৎসাহই আমাকে আমূল পাল্টে দিল!

২.
গান্ধীজী বলেছেন, খারাপ শুনো না, খারাপ দেখো না, খারাপ বলো না, খারাপ ভেবোও না। কোথায় বলেছেন জানি না, মাঝেমাঝে সিনেমায় শুনতে পাই, কথাটা ভালো লাগে। প্রবাদেও আছে, নিয়্যত গুণে বরকত! আপনার মনে যদি প্রথমেই কু-ডাক আসে তবে তার ফল ভালো হবেই না। দোষটা ওই জিনিসের না, দোষটা আপনার নেগেটিভিটির। ধরুন, একটা টেবিলে চারজন খেতে বসেছেন, একই খাবার খাচ্ছেন, কেবল তার মধ্যে আপনার মনে খাবারটা নিয়ে অভক্তি কাজ করছিল এবং শেষে কেবল আপনারই পেট খারাপ হল আর কারোই কিছু হল না। এরকম প্রমাণ আপনারা অনেকবারই পেয়েছেন।

আপনি শুভ চিন্তা করলে শুভটাই ঘটবে, কেউ আপনাকে হিংসে করলে বা আক্রমণ করলেও আপনার তরফ থেকে যদি সে বাঁকা আচরণের বদলে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ পায় সে তখন পাল্টাতে বাধ্য।

৩.
ভালোবাসার মানুষকে আমরা মায়া উথলে ওঠার জন্য বলি, আমি মরে গেলে কী করবা?
কিংবা ভয় দেখাতে বলি, এমন করলে হারিয়ে যাব কিন্তু!
কিংবা অভিমান করে বলি, তোমাকে আর ভালোবাসি না!

এই সবগুলো কথাই নেগেটিভ এবং এগুলো দিয়ে আপনি সম্পর্কের ক্ষতিটা ছাড়া ভালো কিছু করছেন না। প্রিয়জনের মৃত্যু অনেক বড় একটা ধাক্কার নাম, আপনি সেই সিরিয়াস বিষয়টাকে রোজ রোজ বলে বলে এমন স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন যে তারও সয়ে যাবে এবং আপনি মরলেও তখন আর তার অতটা কষ্ট হবে না! ওই হারিয়ে যাওয়া, ওই ভালো না বাসা এই সবগুলোই একই পর্যায়ের প্রভাব ফেলে চেতনায়!

"অফিসে নিশ্চয়ই আরেক কলিগের সাথে খাতির করছ, না?"
কিংবা "আমি যদি এতই খারাপ হই তবে কার কাছে যাবি যা!"
তামাশা করেও এমন কথা স্বামী বা স্ত্রীকে বলা উচিত না সে আপনাদের মাঝে যতই বিশ্বাস থাকুক! এমন কথাটা বলে মজা করা মানেই বিষয়টা তখন ইজি হয়ে গেল, তখন ওটা ভাবতেও আর সঙ্কোচ লাগবে না, করতেও সঙ্কোচ লাগবে না।

সঙ্গীকে কেবল সন্দেহের বশে এমন কিছু চার্জ করাও উচিত না। জিনিসটা যদি সত্য না হয়, আপনাদের মধ্যকার বিশ্বাসের বন্ধনটায় ফাটল ধরে যাবে!

আপনি যদি রাজা হন, অতিরিক্ত কমান্ড বা সতর্কতার নামে আপনি আপনার একনিষ্ঠ সেবককেও বৈরী করে তুলতে পারেন। যে সৈনিক আপনার জন্য জান দিতে প্রস্তুত, তাকে যদি বলে বসেন যে, আমি কাউকেই বিশ্বাস করি না! তখন ওই একনিষ্ঠ সেবকই আপনাকে ঘৃণা করতে শুরু করবে, দেখা গেল যে সে-ই আপনার জানের জন্য হুমকী হয়ে উঠেছে!

অপ্রিয় অসুন্দর জিনিসগুলোকে ঢেকে রাখতে হয়, এগুলোকে কখনও সামনে আনতে নেই। মানসিকতা পজিটিভ হলে দানবের সঙ্গেও সৌহার্দ্য করা যায়, আর নেগেটিভ হলে আপন ভাইও দূরে সরে যাবে। সিম্পল!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:২৩
১০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×