এ যেন ওদের জীবনের একটি অংশ।
কোথাও শুনতে পাওয়া যাচ্ছে গুম্রে গুম্রে কেউ কাঁদছে। মানুষ প্রথম প্রথম এসে ভিড় জমাতো ঐ ছাপড়াটার সামনে, কি হয়েছে দেখবার জন্য। কিন্তু এখন এতো রোজকার ব্যাপার। প্রতিদিনের মতো আজও হয়তো গিলে এসেছে বদ্মাশটা। মাতালটা বউ পিটিয়ে যখন মরার মতো ঘুমায়, তখন ঐ ফাঁকে পাশের ঘর থেকে রিনার মা এসে বোঝায়।
ছোট ছেলেটা ওসব দৃশ্য দেখে এতটাই অভ্যস্ত যে সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ রগড়াতে রগড়াতে বলে,
"মা আব্বায় তোমারে আজকাও মারসে ?"
মা ফেল্ ফেল্ করে চেয়ে থাকে।
পান্তা ভাতটুকু পাতিলে ঢাকনা দিয়ে রেখে যায়। স্বামীতে উঠলে ভাতটুকু খেয়ে রিক্সা নিয়ে বেরতে পারবে। চলতে শুরু করে ছেলেটার হাত ধরে। মাঝে মাঝে তাড়া দেয় ছেলেকে এই বলে,
" শামু, বাবা পা টা একটু চালায় হাট, নইলে নাস্তা বানাইতে দেরী হইলে আপামণির ইস্কুলে দেরী হইয়া যাইবো।"
শামু মার কথায় দৌড়ে দৌড়ে হাটে।
গিট দেয়া ছেড়া শাড়ি দিয়ে কোন রকমে আব্রু রক্ষা করার চেষ্টা করে। পাছে, গলির মুখে দাড়িয়ে থাকা বখাটে ছেলেগুলো কোনো মন্তব্য করে ফেলে।
ধূলো কাঁদা পার হয়ে যাওবা পৌছা গেলো ঠিকা কাজে; শুনতে পেলো বেগম সাহেব আর সাহেবের মধ্যে তুমুল চেচামিচি। কে তাদের একমাত্র মেয়েকে স্কুলে পৌছাবে। দুজনই চাকরী করে আর নিজ নিজ স্হান থেকে এতটুকু ছাড় নিজের সন্তানের জন্য কেউ দিতে রাজী নয়।
ঘরে ঢুকে তড়িঘড়ি করে নাস্তা তৈরী করে সখিনা। আপামণিকে নাস্তা করিয়ে রোজকার মতো আজও তাকে স্কুলে নিয়ে যায় সে। পথে যেতে যেতে বলে,
"আপামণি, আফনে ঝগড়া দেইখা ভয় পান? আরে, ঝগড়া না করলে কি জীবন চলে? আব্বা আম্মাতো কাইজ্জা করবোই। আফনে মন খারাপ না কইরা পড়াশুনা করেন।"
ছোট্ট তিশা মন দিয়ে সখিনার কথা শুনতে শুনতে স্কুলে পৌছে যায়। ফেরার পথে সখিনা কাঁচা বাজার করে বাসার দিকে রওনা হয়।শামু মাকে একটা চকলেট কিনে দেবার আবদার করলে, সখিনা তাকে বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। এপার্টমেন্টের দাড়োয়ানটা গেট খুলবেনা বলে রং ঢং করে সখিনাকে দেখলেই। শামু মার হয়ে প্রতিবাদ করলে, অসভ্য দাড়োয়ানটা নোংরা নোংরা ইংগিত করে।
সামনের চৌরাস্তাটাতে রিক্সার এক জট লেগেই থাকে। এমন একটা দিন যায়না যেদিন তিশাকে স্কুল থেকে আনতে বের হলে আধাঘন্টা রাস্তায় আটকা পরতে হয়না। মাঝে মাঝে ভাড়া নিয়ে রিক্সাওয়ালা আর পেসেন্জারের বাক বিতন্ডার ঘটনা মারামারিতে পৌছায় আর তারপর রাস্তার জানজট বিরাট আকার ধারন করে।
বাড়ি পৌছেই তিশাকে গোশল করিয়েভাত খাইয়ে শামুর সাথে রেখে বাকী কাজ করতে চলে যায় সখিনা। বারান্দায় বসে লুডু খেলতে খেলতে হঠাৎ করেই তিশার মনে হয়ে যায়, শামুকে বর্ণমালা শেখানোর কথা। বাস্ যেমনি ভাবা ওমনি কাজ। স্লেট আর চক নিয়ে শুরু হয়ে যায় টিচার টিচার খেলা। এতে অবশ্য শামুর পড়াও হয় খেলাও হয়। বিকেলে তিশাকে নিয়ে যায় কমপ্লেক্সের খেলার মাঠে হাটবার জন্য।
সামনের বিল্ডিং এর গাড়ি পার্কিং এর পাশে একটা নির্জন জায়গা আছে। প্রায়ই তিনতলার নীলা আপুকে দেখা যায় সেখানে। একটা ভাইয়াও থাকে সাথে। কিন্তু নীলা আপু ওদের দেখেই আড়াল হয়ে যায় কেনো এই প্রশ্নের কোনো উত্তর সখিনাকে জিগ্যেস করে পায় না।
গেটের ভেতর একটা আইসক্রীমওয়ালা বিকেল হলে রোজ আসে। খেলা শেষ হলে অনেকেই আইসক্রীম হাতে বাড়ি ফেরে। টন্সিলের সমস্যা আছে বলে তিশার ঐ জিনিষের দিকে তাকানোও হারাম। মাস দুয়েক আগে মার কড়া নিষেধ উপেক্ষা করে পুরো দু সপ্তাহ জ্বরে ভুগেছিলো। তাই সন্ধ্যা হবার আগেই বাড়ি ফিরে আসে ওরা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



