শামুকে নিয়ে খুব ভোরেই চলে গেলো তিশাদের বাসায়। বেগমসাহেব, অবস্থা আঁচ করতে পেরে আগে কিছু ওদের খেতে দিলেন।
অফিসে যাবার আগেই ফোন করলেন সামনের বিল্ডিং এর নীলার মাকে। উনি একটা এন জি ওর সাথে জড়িত। বস্তির দুরবস্থার কথা শুনে , কিছু একটা অবশ্যই করবেন বলে আশ্বস্ত করলেন।
বিশেষ এক সাহায্য টিম নিয়ে, অনেক পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করলো নীলার মা'র এন,জি,ওটি। আরও অনেকে আসলো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।
এ যাত্রায় কোনরকম সব ঠিকঠাক হলো। আবার জীবন শুরু হলো ঐ বস্তিতে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কোন ভাষা নেই জানে, তবুও নিজের হাতে তৈরী করা ভাঁপা পিঠা নিয়ে যায় সখিনা, নীলাদের বাসায়।
কলিংবেল টিপতেই দরজা খুললো, বুয়া।
" খালাম্মা নাই ? ওনাগোর লাইগ্যা কয়ডা ফিডা আনছিলাম।"
"উনি অখন বাসায় নাইক্কা।" বলে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো।
কি আর করা, মনটা একটু খারাপ হয়ে গেলো । সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে, এমন সময় দেখলো, নীলা একটা ছেলের সাথে লিফ্ট থেকে বের হচ্ছে।
এগিয়ে গিয়ে পিঠার বাটিটা দিলো নীলাকে।
"থ্যাংক ইউ, মাকে অবশ্যই দিবো," বলে চলে গেলো সে।
খুশী মনে ফিরে এলো সখিনা।
কোন একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করছে নীলা। দেখতে বেশ মার্জিত এবং সুন্দর। একনজরে পছন্দ হবার মতো।
বাবা মার একমাত্র মেয়ে বলে, বিয়ের অনেক প্রস্তাব আসা সত্ত্বেও এখনই বিয়ে দিবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
বড় ভাই আমেরিকাতেই সেটেল করেছে, পড়াশুনা শেষ করে।
এই হাউজিং কমপ্লেক্সেরই কোন এক ফ্ল্যাটে থাকে, সজল নামের ছেলেটা যার সাথে নীলার আজ প্রায় দুই বছর যাবৎ পরিচয়।প্রায় বিকেলেই ওদের একসাথে দেখা যায়। বয়সে খুব সম্ভবত ছোট হবে নীলার চেয়ে। তাই বাসায় ব্যাপারটা ওভাবে কেউ দেখছেনা।
মাস ছয়েক আগের কথা, একদিন নীলার বাবা-মার বেশ রাত হলো বাড়ী ফিরতে। অফিসের কোন পার্টি ছিল বোধহয়।মেয়ে ঘুমিয়ে গেছে ভেবে প্রতিদিনের মতো সেদিনও ঘরের লাইট নেভাতে গিয়ে দেখলেন, একটা ছেলে বসে আছে তার ঘরে।
অল্প বয়স। কতই বা হবে ? উনিশ বিশ।
ওর বাবা শুধু এটুকুই জিজ্ঞেস করলেন, " ব্যাটা, ছেলেটা কে ?"
উত্তরে নীলা বলেছিলো, " বাবা ও আমার কাছে একটু পড়া বুঝতে এসেছে। কাল ওর এক্জ্যাম। তাই আমি..."
" ঠিক আছে ঠিক আছে । ওকে কিছু খেতে দিয়েছো ?"- বলে বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
প্রথম প্রথম সজল পড়া বুঝবার জন্যই আসতো, কারণ ওরা একই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তো।
পড়াশুনার ফাঁকে প্রায় ওরা ওদের ফ্রেন্ডদের মজার মজার সব গল্প করতো। হাসতে হাসতে কখন যে সজলের কাঁধের উপর নীলার মাথাটা এলিয়ে দিতো, সেটা সে নিজেও বুঝতে পারতো না।
বুঝতেই পারেনি, কখন যে একজন আর একজনের প্রতি দূর্বল হয়ে পরছে।
নীলা যেন টের পাচ্ছিলো। নিজেকে সজলের কাছ থেকে সরিয়ে রাখা সম্ভব না বুঝেই , সেই বৃথা চেষ্টাটাও করলোনা সে।
ধীরে ধীরে সজলের অস্থিরতা ক্রমশঃই বাড়তে থাকে। ফোনের পর ফোন। কথা যেন ফুরোয়না ওদের।
একদিন, রাত তখন তিনটা। হঠাৎ করেই সজল বলে উঠলো, " নীলা আমি এক্ষুনি তোমার সাথে দেখা করবো। একটু ছুঁয়ে দেখবো তোমাকে। আমি আসবো না তুমি আসবে ?"
"পাগল হলে নাকি তুমি ? এখন, এতো রাতে? আচ্ছা, আমাদের তো রোজই দেখা হচ্ছে। কেউ দেখে ফেললে কেলেংকারী হয়ে যাবে।"
"তুমি আমাকে ভালোবাসো ? চুপ করে আছো কেন , নীলা ?" অস্থির শোনাচ্ছে সজলকে।
"জানোনা ?" খুব শান্তভাবেই উত্তরটা দেয় নীলা।
হয়তো নীলার জন্য সজলের ভালোবাসার অভিব্যাক্তিটুকু ঐ মুহূর্তে এড়িয়ে
যাওয়া মোটেও সম্ভব ছিলোনা।
ভেতরের আকুলতাকে কেনই বা আর আটকে রাখা।
খুব সহজভাবেই বললো," তুমি আসো। কিন্তু ভয় হয়, কেউ যদি দেখে ফেলে আর তোমাকে কেউ কিছু বলে, তখন আমি কিন্তু সহ্য করতে পারবোনা।"
নিজেদের বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে মাঝের বাগানটা পার হয়ে যেইনা সামনের বিল্ডিং এর লিফ্টের কাছে গেলো, অমনি ফরহাদ আংকেলের এলসিশিয়ান কুকুরটা কোথ্থেকে এসে সামনে দাড়িয়ে গেলো।
চেনা মুখ বলে, আওয়াজ করলোনা ঠিকই কিন্তু লেজ নেড়ে বুঝিয়ে দিলো , "আমি কিন্তু এখানেই আছি।"
দরজার সামনে যেয়ে মিস কল দিতেই, নীলা এসে দরজা খুলে দেয়।
খুব সাবধানে ঘরে চলে যায় দুজনে।
সজলের বুকে মাথা এলিয়ে দেয়, নীলা। নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে একে অপরকে।
হঠাৎ করেই নীলা সোজা হয়ে বসে, সজলের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে, " কথা দাও, আমাকে কখনও কষ্ট দেবেনা।"
এই কথাটার জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলোনা সজল, কিন্তু কোনরকম সংশয় না করেই বলে ফেলে, "কথা দিলাম।"
"এতো শান্তি লাগে, যখন তোমার বুকে মাথা রাখি। ঘুম এসে যায়, জানো ?"- কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে দুজন একে অপরকে ধরে।
বাইরে তখনও অন্ধকার। সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছেনা।
নীলার ঘুম ভেংগে যায়, বুয়ার রান্না ঘরের টুংটাং আওয়াজ শুনে।
" সর্বনাশ ! এই উঠো ! তাড়াতাড়ি বাসায় যাও।" বলে ঐ আগের মতো করেই বিদায় দেয় সজলকে।
স্মরণীয় হয়ে থাকবে ঐ রাতের কথা, দুজনের ব্যাকুলতার কথা।
অবশ্য এভাবে প্রায়ই ওদের দেখা হয়।
বলেনা, ভালোবাসা মানেনা কোন বাঁধা।
ভালোবাসা আগেও ছিলো, এখনও আছে, আর থাকবেও চিরকাল।
শুধু প্রকাশভংগী পাল্টে গেছে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



