somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ট্রানজিট ফি" ও শিয়াল আর বোকা কুমিরের সাত বাচ্চার গল্প

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১০ রাত ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পটা সবার জানা।তবুও আরেকবার শোনা যাক।

এক কুমিরের সাতটা পোনা ছিলো।পাশের গ্রামের বাস করতো এক শিয়াল পন্ডিত।কুমিরের খুব শখ সে তার ছানাপোনাকেও শিয়ালের মত পন্ডিত বানাবে।তো এক সকালে সে তার সাত ছানাকে নিয়ে শিয়ালের বৈঠক খানায় হাজির।শিয়াল কুমিরকে আস্বস্ত করে ,রেখে যান;ওরা একদিন ঠিক পন্ডিত হবে, হয়তোবা আমার চেয়েও বড় পন্ডিত।

কুমির আনন্দে খুশিতে বাগবাগুম করতে করতে বাড়ি ফেরে।

পরেরদিন ভোরেই শিয়াল এক কুমিরছানাকে’কে দিয়ে প্রাতঃরাশ সারলো।

বেলা বাড়তেই কুমির ঠিক তার সন্তানদের দেখতে এলো।

ধুর্ত পন্ডিত এক বাচ্চাকে দুইবার দেখিয়ে ঠিক সাতটা বাচ্চা কুমিরকে বুঝিয়ে দিলো।কুমির তার সন্তানদের দেখে, শিয়ালের তদারকিতে তারা বেশ বিদ্যালাভ করছে ভেবে মনে তৃপ্তি নিয়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে।

একটা করে দিন যায় আর শিয়াল একটা করে কুমিরছানাকে উদরস্ত করে।

এইভাবে ষষ্ঠ দিনেও কুমির তার একমাত্র বাচ্চাকে সাতবার দেখেও খুশি মনে বাড়িফেরে।

সপ্তম দিনে শেষেরটি ভক্ষন করার পরে আর যখন কিছুই থাকলো না, তখন শিয়ালপন্ডিত তার পাঠশালা ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলো।

সপ্তমদিন এসে বোকা কুমির শিয়ালের খালি গৃহ দেখে সব বুঝে ফেললো।

................................................................................................................................................

অদ্যবছরের শুভশীঘ্রম জানুয়ারি মাসেই গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অতি অবশ্যই “তাঁর সুবিশাল সংগী বহর” ভুগোলকের "সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র" ভারত সফরে যান।সফর শেষে উনি অনেক কিছুই বগলদাবা করে এই পোড়ার দেশে, এই মিসকিনের দেশে নিয়ে আসেন।তবে উনার সর্ববৃহৎ অর্জন “ট্রানজিট ফি” নামক এক কুমিরের বাচচা সাথে করে নিয়ে আসা।বিজয়ের প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই অদ্ভুদ অনেক কিছু করে বসে। তবে উনি অনেক ভালো কাজ করেছেন; উনি আবৃত্তি করেছেন,

"সুখ আমি চাইনি কো মহারাজ

জয় আমি চেয়েছিনু, ভয় আমি পেয়েছি

জয়ী আমি আজ তাই।"

তবে সুখের কথা শুধু উনি নন, বাংলাদেশের এই “উইন-উইন” বিজয়ের আনন্দে অনেক দেশপ্রেমিকই উদ্বেলিত হয়ে যান।

বাংলাদেশের “সব ভালো”র ধারনকারি মুলধারার দ্যা ডেইলি স্টারের আনাম সাহেব সম্পাদকীয় হাগেন Bilateralismমতো শব্দ কইরা ।

মাহফুজ এডিটর সফরের অর্জনের গুরুত্ব বুঝাইতে উপযুক্ত শব্দই ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে প্রথমআলোতে মতি ভাই "রহমতউল্লাহ" নাকি "বরকতউল্লাহ" নামের কোন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞের সাক্ষাতকার ছাপেন। বিশেষজ্ঞ রহমত বলেন “বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামাবে” । আবার ইউনুস সাবও বলেন ভারত ও চিনের যে বিশাল প্রবৃদ্ধি যেখান থেকে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে......[খবরগুলোর লিংক পাইতেছি না]

আর জনগন "কুটি কুটি" ডলারের স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে যায় ।

আর আমরা যারা মন্দ লোক, ভারতকে দেখতে পারিনা তারা গিট্টু লাগাতে খালি প্রশ্ন করি

কেউ প্রশ্ন করে,

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ রাস্তাঘাটের অবস্থা কাহিল।আমাদের বাস-ট্রাক-লরীই ঠিকমত চলতে পারেনা, সেখানে ভারতীয় ওজনদার ট্রাক চললে তো অবস্থা কেরোসিন হয়ে যাবে? তাছাড়া রক্ষনাবেক্ষনের খরচা কে দিবে?

............কুচ পরোয়া নেহি, ভারত আমাদের অনেক অনেক টাকা “ট্রানজিট ফি” দেবে।।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, উত্তরপুর্ব ভারত বাংলাদেশের জন্য অনেক সম্ভবনাময় বাজার।ট্রানজিট দিলে তো আমাদের পণ্য প্রতিযোগীতায় টিকতে পারবে না?

.....................রপ্তানী কমে গেলেও সমস্যা নাই, ভারত আমাদের অনেক অনেক ডলার “ট্রানজিট ফি” দিবে।

মাননীয় সরকার, উত্তরপুর্ব ভারতে দীর্ঘদিন ধরে স্বাধিনতাকামি আন্দোলন চলছে। ট্রানজিট দিলে ভারত যে বাংলাদেশের উপর দিয়া মিলিটারি লজিস্টিকস বহন করবে না, তার নিশ্চয়তা কি?

.....................ভারত আমাদের অনেক অনেক টাকা “ট্রানজিট ফি” দিবে।


মাননীয়, ভারত তো নেপাল-ভুটানে আমাদের ট্রানজিটের ব্যাপার স্পষ্ট করে কিছু বলে না; আমাদের ট্রানজিটের ফয়সালা কবে হবে...।

..................নেপাল ও ভুটানে আমাদের ট্রানজিট আপাতত না হলেও চলবে; ভারত আমাদের অনেক অনেক টাকা “ট্রানজিট ফি”দিবে ।

মাননীয় সরকারপ্রধান, আপনি কি বলতে পারবেন ট্রানজিট থেকে আমাদের কি পরিমান অর্থ আয় হবে?আপনার হাতে কোন পরিসংখ্যান আছে?

.........সেটা জানিনা পরিসংখ্যানও নাই, তবে নিশ্চিতভাবেই অনেক অনেক কোটি ডলার।

তবে কুমিরের এই বাচ্চাটিও শেষমেষ শেয়াল ভারতের পেটেই যাবে।

ফি না দেওয়ার কারণে দুটো ভারতীয় জাহাজকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে এনবিআর অস্বীকৃতি জানানোর পর বিষয়টি নিয়ে দুদেশের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়

এবং

নৌপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রশ্নে ভারতের আপত্তির মুখে আপাতত তা আদায় স্থগিত রেখেছে বাংলাদেশ৻

উৎসাহীদের জন্য লিংক :নৌ ট্রানজিট ফি আদায় স্থগিত

ছোট্ট অশ্লীল নোটঃ

বাংলাদেশ এখন যেন এক বিগতযৌবনা পতিতা আর ভারত তার বাধা খদ্দের।যৌবন শেষ হয়ে গেলে নাকি খদ্দের সচরাচর পাওয়া যায়না, তাই একটা/দুটা বাধা খদ্দের রাখতে হয়, তাইলেই না অন্যরা আসবে
...........................................................................................।
পুনশ্চ: ব্যাপারটা কৌতুহলোদ্দীপক।ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হবে কি হবেনা এই প্রশ্ন নিয়ে জনগণ যেখানে আশ্বস্ত নয়, সেখানে ব্যাপারটা এখন দাঁড়িয়েছে ট্রানজিট দিলেও
ট্রানজিট ফি পাওয়া যাবে কিনা।

হোয়াট এ জোক!

একধরনের আশংকা থেকে খোমাখাতায় চিরকুটে লিখেছিলাম।এখন দেখি আশংকা অনেকটাই সত্য।মাশুল না নিলে ট্রানজিটে লাভ নেই বাংলাদেশের এই সংবাদ তো তাই বলে।
১৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×