somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাজহাব মানা ওয়াজিব বা ফরজ।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি আমাকে এই ব্যাপারে কিছু লেখার তৌফিক দান করেছেন।
সূরা আনআম-১২৫> আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করতে চান, দ্বীনের জন্য তার হৃদয়কে প্রশস্ত করে দেন।

-
-
-
-
-
-
-
উপরের হেডিং এ একটা শব্দ এ্যাড করিনি সেটা হলো, ""বেশ কিছু মানুষ বলে"" মাজহাব মানা ওয়াজিব বা ফরজ। । যাক মূল কথায় যাই।

ভাই আমাদের জ্ঞান খুবই সামান্য। তবে যেটা জানব সেটা যেন ভাল মতো জানি সেটাই উচিত। যেমন আপনি যদি একটা হাদিস জানেন তো সেটা ভালো করে জানা দরকার।

=> প্রথমতঃ- আল্লাহর রাসুল এর সাথে সব সময় সব সাহাবী থাকতেন না। কেউ নবীর থেকে একটা হাদিসের বাণী শুনলে সেটা পৌছে দিতেন অন্যের নিকট। যেমন আবু হুরাইরা রাঃ নবীজি সাঃ এর অনেক বাণী পৌছে দিয়েছেন অন্যান্য সাহাবীদের নিকট। যেমন বিদায় হজ্বের সময় ১ লাখেরও বেশী সাহাবী ভাষন শ্রবণ করেছেন। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে গিয়েছেন।

এখানে মূল পয়েন্ট হলো, নবীর সাহাবারা সবাই সব হাদিস জানতেন না।
=============================================

=> দ্বিতীয়তঃ- আল্লাহর রাসুল মারা যাবার পর খোলাফায়ে রাশেদীন এর যুগে অসংখ্য সাহাবা বিভিন্ন দেশে দেশে চলে গেছেন ইসলামের দাওয়াত নিয়ে। কেউ সিরিয়া, কেউ ইরাক। তখন যেই সংখ্যক সাহাবা জীবিত ছিলেন তাদের থেকে যারা শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তারা তাবেয়ী। তাবেয়ীরাও সকল সাহাবাদের পান নাই। যেমন ইমাম আবু হানিফা রহঃ উনি খুব কম সংখ্যক সাহাবীকে পেয়েছেন। তবে কতজনকে পেয়েছেন সেটা নিশ্চিত না। উনি ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ১৫০ হিজরীতে মৃত বরণ করেন।

সুতরাং সকল তাবেয়ী সকল সাহাবাদের পান নাই। তাই অন্যান্য স্থানপরিবর্তন কারী সাহাবাদের নিকট রক্ষিত হাদিসগুলো তাদের অজানা ছিল।

এখানে মূল পয়েণ্ট তাবেয়ীরা সকল সাহাবাদের পান নাই।
=============================================

=> তৃতীয়তঃ- মাজহাবের ইমাম গণঃ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) জন্ম গ্রহণ করেছেন ৮০ হিজরীতে। তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পর যতগুলো হাদিস পেয়েছেন এবং সংরক্ষণ করেছেন সেগুলোর উপর ভিত্তি করেই ফতোয়া দিয়েছিলেন। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, উনার সময় তিনিই ছিলেন ইমামে আজম। তবে যেহেতু তিনি সকল সাহাবাদের হাদিস সংগ্রহ করতে পারেন নাই, সকল সাহাবাদের সাক্ষাত পান নাই এবং যেহেতু হাদিস এর ধারক সাহাবারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন তাই তিনি যতগুলো হাদিস পেয়েছেন তার উপরেই ফতোয়া দিয়েছেন।
তবে ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মূল কথা ছিলঃ-

"ইযা সহহাল হাদিসু ফা হুয়া মাজহাবা" অর্থ্যাত বিশুদ্ধ হাদিস পেলে সেটাই আমার মাজহাব বা মতামত। (১/৬৩ ইবনু আবিদীন এর হাশিয়া, পৃঃ ৬২ ছালিহ আল-ফাল্লানীর, ১/৪৬ শামী)

ইমাম আবু হানিফাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল হে শায়খ, যদি এমন সময় আসে যখন আপনার কথা কোন সহীহ হাদিসের বিপরীতে যাবে তখন আমরা কি করব?

তিনি উত্তরে বলেছিলেন, তখন তোমরা সেই সহীহ হাদিসের উপরই আমল করবে এবং আমার কথা প্রাচীরে/দেয়ালে নিক্ষেপ করবে।

এ কথা কে বলেছিলেন, ইমাম আবু হানিফা রহঃ নিজে। লক্ষ করবেন প্লিজ।

--------------------------------------------------------------------

=> ঠিক একই ভাবে ১৩৫ হিজরিতে জন্মগ্রহন কারী ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এর বক্তব্য হলো,

তোমরা যখন আমার কিতাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহ বিরোধী কিছূ পাবে তখন আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত অনুসারে কথা বলবে। আর আমি যা বলেছি তা ছেড়ে দিবে। (৩/৪৭/১ আল হারাবীর, ৮/২ খত্বীব, ১৫/৯/১ ইবনু আসাকির, ২/৩৬৮ ইবনু কাইয়িম, ১০০ পৃঃ ইহসান ইবনু হিব্বান)

=> ৯৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ কারী ইমাম মালেক রহঃ এর বক্তব্যও হলো একই,
ইমাম মালেক বিন আনাস (রহঃ) বলেছেন, আমি নিছক একজন মানুষ। ভূলও করি শুদ্ধও বলি। তাই তোমরা লক্ষ্য করো আমার অভিমত/মতামত/মাজহাব এর প্রতি। এগুলোর যতটুকু কোরআন ও সুন্নাহ এর সাথে মিলে যায় তা গ্রহণ করো আর যতটুকু এতদুভয়ের সাথে গরমিল হয় তা পরিত্যাগ করো। (ইবনু আবদিল বর গ্রন্থ (২/৩২)

=> ১৬৪ হিজরীতে জন্মগ্রহনকারী ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ ছিলেন ১০ লক্ষ হাদিসের সংগ্রহ কারী। সবচেয়ে বেশী হাদিস উনার মুখস্থ ছিল এবং উনার সংগ্রহে ছিল। উনার লিখিত গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদ এ মাত্র ২৩০০০ এর মতো হাদিস লিপিবদ্ধ আছে।

এখানের মূল পয়েন্ট হলো, চার ইমাম সহ সেই সময়ের সকল ইমামই ছিলেন মোটামুটি এক জমানার। তারা সকলেই তাদের সংগৃহিত হাদিস এর উপর ভিত্তি করে ফতোয়া দিয়েছিলেন। তাদের সবার বক্তব্য একই ছিল। তবে পরবর্তীতে অন্যান্য ইমামরা আরো ব্যাপক ভাবে হাদিস সংগ্রহের জন্য এক জনের সাথে অন্য জনের দ্বিমত হয়েছে।

এখানে মূল পয়েন্ট হলো, সকল ইমামই কোরআন ও সহীহ হাদিস মেতে নিতে বলেছেন।

অতএব, এতক্ষণ পর্যন্ত পাওয়া পয়েন্টগুলো হলো
১) নবীর সাহাবারা সবাই সব হাদিস জানতেন না।
২) তাবেয়ীরা সকল সাহাবাদের পান নাই।
৩)সকল ইমামই কোরআন ও সহীহ হাদিস মেতে নিতে বলেছেন।
=============================================

এখন যদি আপনি এবং সারা বিশ্বের মানুষই কোরআন ও সহীহ হাদিস মানি তাহলে আমাদের মধ্যে কোন গড়মিল বা বিভেদ সৃষ্টি হবে না। সবাই একসাথে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো। কিন্তু আপনি যদি বলেন মাজহাব মানতে। তাহলে এই মুসলিম জাতি কখনো এক হতে পারবে না। সকলে দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। যেমন হানাফী, শাফেঈ, হাম্বলী, মালেকী, আহলে হাদিস, আহলে কোরআন, শিয়া, সুন্নী, কুর্দি, দেওবন্দী, বেরলভী ইত্যাদি ইত্যাদি।

উপরের যতগুলো গ্রুপে মুসলিমরা ভাগ হইছে তার একটাই কারণ মাজহাব বা মতামতকে তাকলীদ বা অন্ধ অনুকরণ করা। প্রত্যেক গ্রুপই তাদের ইমামদের, বুজুর্গদের মাজহাব বা মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়েছে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ দল নিয়ে সন্তুষ্ট।

=============>

এখন দেখেন যারা ইমামদের তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করে নিজ নিজ দল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে যেমন হানাফী, শাফেঈ, আহলে হাদিস ইত্যাদি এবং কোরআন ও সহীহ হাদিস ত্যাগ করে, তাদের ব্যাপার আল্লাহ কি বলেছেনঃ-

প্রথম দলিলঃ-
সূরা রুম-৩১-৩২> (হে নবী) আপনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে যায়, যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট।

=> এই আয়াতে আল্লাহ তাদের মুশরিক বলে আখ্যায়িত করেছেন যারা কোরআন ও সহীহ হাদিস ছেড়ে ইমামদের আলেমদের বুজুর্গদের তাকলীদ করে তাদের। যেমন শীয়ারা। তারা তাদের বুজুর্গদের মাজহাব বা মতামতকে কঠোরভাবে মানে। বুঝতে চায় না কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।

দ্বিতীয় দলিলঃ-
সূরা আনআম-১৫৯> যারা দ্বীনকে খন্ড বিখন্ড করে, দলে দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে (হে নবী) আপনার কোন সম্পর্ক নাই।

=> এই আয়াতে যারা দলে দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে নবীর সম্পর্ক না থাকার কথা বলা হইছে। যাদের সাথে নবীজি সাঃ এর সম্পর্ক নাই তাদের সাথে আমাদের মুসলিমদেরও কোন সম্পর্ক নাই।

আপনারাও যদি দলে দলে বিভক্ত হন, ইমামদের তাকলীদ করেন, তাহলে আপনাদের সাথেও নবীজি সাঃ এর সম্পর্ক থাকবে না। আর যার সাথে নবীজি সাঃ এর সম্পর্ক নাই, তার সাথে আমাদের সম্পর্কের তো প্রশ্নই উঠে না। যদি আপনারা কোরআন ও সহীহ হাদিস মেনে নিতে রাজি থাকেন তাহলে আপনারা আমাদের মুসলিমদের দ্বীনি ভাই। আর যদি না মেনে নেন তাহলে এই আয়াতটা আপনাদের জন্য

সূরা নিসা-৪:১১৫> যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ (কোরআন ও হাদিস অমান্যের মাধ্যমে) করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।

আল্লাহ নো দ্যা বেস্ট।
৩৩টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×