আমি মোবাইলে এয়ারটেল এবং ল্যাপটপে সিটিসেল ইন্টারনেট ব্যবহার করি। এ বছরের বাজেটে ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর অতিরিক্ত করারোপ হয়েছে জানতাম। আরো জানতাম এর ফলে মোবাইল অপারেটরদের সব রকমের সেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু কতটুকু বাড়বে, তার সম্পর্কে ধারনা ছিল না। এ বাজেটের আগে মোটামুটি সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। কিন্তু সেই মূল্যও এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় (এয়ারটেল ও টেলিনরের প্যাকেজগুলো তুলনার সাপেক্ষে) অনেক অনেক বেশি ছিল!
শুনেছিলাম, সরকার নাকি ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করছে; খুব আশ্চর্য লেগেছিল। কারণ, কোন পণ্যের মূল্য বেশি থাকে, যদি তার যোগান সীমিত থাকে। এখন, যদি সেই একই পণ্য দেশে থেকে বাইরে বিক্রি করা হয়, তার মানে দেশে তার স্টক অনেক। এই ক্ষেত্রে পণ্যটি হল "ইন্টারনেট সেবা"। যদি, বাইরে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করতেই হয়, তবে দেশে কেন ইন্টারনেটের মূল্য কমানো হচ্ছে না?
কিন্তু, ২০১৫-১৬ এর বাজেটে ব্যাপারটি আরো ভয়াবহ হল। ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পেশাজীবিদের সংগঠন প্রেস ব্রিফিং-গোলটেবিল বৈঠক করে দাম কমানোর, ভ্যাট তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আসুন, এবার আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি।
এয়ারটেলের *১২১# এ গিয়ে ৩জি ইন্টারনেটের মাসিক ১ জিবি প্যাকেজ কিনতে মনস্থ করলাম। দামটা একটু বেশিই, অন্য অপারেটরদের চেয়ে। তারপরেও স্বল্প সময়ের জন্য মোবাইলে এই প্যাকেজটাই লাগবে। হঠাত দেখি, এই প্যাকেজে ১ জিবির সাথে আরো ১ জিবি ফ্রি; মূল্য আগেরটাই- ১৯৯ টাকা! ভাবলাম, ভালোই তো ২০০ টাকায় ২ জিবি; খুশি মনে কিনে ফেললাম।
এক্টিভেট করার পর দেখি ২৪৫ টাকা কেটে রেখেছে! তার উপর দিয়েছে শুধু ১ জিবি! প্রায় ২৫% ভ্যাট দিয়ে যে সেবা কিনলাম, তাতেও ধোঁকা! সরকার ও অপারেটর- দুয়ে মিলে নেমেছে পাবলিকের টাকা লুটতে! একজনের হিসাবটা আপনার কাছে হয়তো বেশি মনে হচ্ছে না। কোটি কোটি গ্রাহকের বিভিন্ন সেবার বিভিন্ন মেয়াদী বিলে যখন এরকম হেরফের হয়, তখন তাদের পকেটে কত লক্ষ-কোটি টাকা যায়, তা হিসাব করতেই তো ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যাবে!
সিটিসেলে আমি গত বেশ কয়েক মাস ধরে ইউপি ৪ প্যাকেজটা ব্যবহার করি। এই প্যাকেজে ৩০০ কেবিপিএস গতিতে ১ মাসে ৩ জিবি ডাটা দেওয়া হয় ৩৯০ টাকায়; সাথে গত ২ মাস ধরে ৩ জিবি ফ্রি দেওয়া হচ্ছে, যদিও আমি কখনো ৩ জিবির বেশি ব্যবহারের সুযোগ পাইনি। এটাই স্বাভাবিক, যতটুকু কাজে প্রয়োজন ততটুকুই ব্যবহার করব। ৩৯০ টাকার অফার-টি ভ্যাটসহ আগে মনে হয় ৪১০ টাকার কিছু কম নিত। এবার ৪৫০ টাকা ভরলাম; প্যাকেজ এক্টিভেট করার পরে ব্যালেন্স চেক করে দেখি ৩ টাকা আছে! তার মানে, ৩৯০ এর সেবা কিনতে আমাকে ৪৪৭ টাকার মত খরচ করতে হচ্ছে; যা ৩০% ভ্যাটের চেয়েও বেশি; অথচ সিটিসেলের এই ইন্টারনেট ৩জিও না!
আরো ভয়াবহ কিছু মেসেজ পেলাম অপারেটরদের কাছ থেকে। একটা উদ্ধৃত করি- "Please, do not shock seeing the bill..."! কেন, এরকম বলছে? কোন প্যাকেজের ডাটা শেষ হয়ে গেলে মেয়াদ থাকাকালীন অবস্থায় প্রতি ১০ কেবি-র জন্য 0.0115 টাকা কাটা হবে। আর মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে প্রতি ১ কেবির জন্য ঐ একই টাকা কাটা হবে। এই দুটো পরিমাণই বাজেটের পরিমাণের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।
সারকথা হলঃ- সরকার জনগণকে ইন্টারনেটের মূলা ঝুলিয়ে আনুষঙ্গিক ইলেক্ট্রনিক পণ্যতে শুল্কারোপ করে আগে যেরকম একশ্রেণীর ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে, ঠিক তেমনি এইবার ইন্টারনেটে আসক্ত বা আবদ্ধ জনগণকে অতি-অপরিহার্য এই সেবার দাম বাড়িয়ে নিজেদের কোষাগার ভর্তির পাশাপাশি আরেক শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের বিলিয়ন টাকার ব্যবসার দুয়ার খুলে দিয়েছে!
এ কি আসলেই "ডিজিটাল বাংলাদেশ"-বান্দব সিদ্ধান্ত?!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:১০