somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুর্ঘটনা আজ শুধুই ঘটনা

০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের মানুষের সামগ্রিক স্বভাব-চরিত্রের কারণে অনেক পেশা-প্যাশন এখানে টিকতে পারে না।

একটা নির্দিষ্ট উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। কালকেই নেত্রকোণার হাওড়ে যাত্রীবাহী "ট্রলার" ডুবে গিয়ে ১৭+ জন মারা গিয়েছে; যেই ট্রলারের ৪৮ জন যাত্রীই ছিল ময়মনসিংহের এক মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ঈদের পরে আনন্দভ্রমণে এসে যাদের অভিজ্ঞতা করতে হলো মৃত্যুর বিভীষিকা।

এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো, যদি জাতি হিসেবে আমরা বাঙ্গালরা কয়েকটি পেশাকে সামাজিক ও আর্থিক মর্যাদা দিতাম।

শুরু করি সাঁতার প্রশিক্ষক দিয়ে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, বন্যার দেশ, এবং বঙ্গোপসাগরের দেশ হলেও এই দেশের অধিকাংশ মানুষ সুযোগ ও পরিবেশের অভাবে সাঁতার জানে না। অনেকে সাঁতার জেনেও চর্চার অভাবে শারীরিক কার্যকারিতা ধরে রাখতে পারে না। কারণ, সাঁতার ও অন্য যেকোন শরীরচর্চা বাংলাদেশের মত দেশে বিলাসিতা ও অপ্রয়োজনীয়তা হিসেবে গণ্য হয়।
শহর কিংবা গ্রামে পুকুর বা দিঘীর মত বদ্ধ ও ছোট জলাশয়গুলিকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়, মলমূত্রের ভাগাড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গ্রামের মানুষেরা এখনো সাঁতারের সীমিত সুযোগ পেলেও শহরের মানুষদের (বিশেষত মধ্যবিত্তদের) সেই সুযোগ একেবারেই নেই।
নদীভাঙ্গন, নদীভরাট, কিংবা নদীর বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণে নদীতেও সাঁতার শেখার সুযোগ হয় না। পানি দূষণের কারণে বাংলাদেশের কয়টা নদীর পানি মানুষের চামড়ার জন্য এখনো উপযোগী আছে, সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।
বাকি রইল, শহর কিংবা সেনানিবাসের সুইমিং পুল ও সাঁতারের জন্য নির্দিষ্ট জলাশয়গুলি। খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষের এসব স্থানে যাওয়ার সুযোগ হয়। সময় কিংবা অর্থের কারণে অনেকে এসব এফোর্ড করতে পারে না। শহরাঞ্চলে নতুন সুইমিং পুল বানানোর পেছনে অনীহা বা বিরোধিতা তো আছেই, সাথে আগের সুইমিং পুল-গুলির পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনাতে যথেষ্ট ঘাটতি আছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে সাঁতারুদের অর্জনে পিছিয়ে থাকার ক্ষেত্রে জাতীয় পৃষ্ঠপোষকতার ঘাটতি যেমন আছে, তেমনি পেশা হিসেবে সাঁতার প্রশিক্ষক বা ডুবুরী বা ইমার্জেন্সি রেসকিউয়ার এসবের সুযোগ-সুবিধা ও সম্মান-সম্মানীও অনেক কম।

উন্নত দেশে দেখেছি, পর্যটনের স্থানগুলিতে "সাঁতার-না জানা" পর্যটকদের পানির ধারে কাছে যেতে দেওয়া হয় না, এমনকি লাইফ জ্যাকেট পরিহিত অবস্থাতেও। যদি কেউ কোন কারণে নিষেধ অমান্য করে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে, কিংবা জানা সত্ত্বেও কেউ কোন আকস্মিক বিপদে পরে, সেই জন্য সবসময় এরকম ট্যুরিস্ট স্পটগুলিতে "জরুরি রক্ষাকারী" হিসেবে এক বা একাধিক দক্ষ সাঁতারু উপস্থিত থাকে। আগ্রহবশত এরকম একজনের বেতন জেনে নিয়ে, তুলনা করেছিলাম। তাদের বেতনের সাথে, ঐ একই রিসোর্টের ম্যানেজারের বেতনের পার্থক্য খুবই কম। অন্য এক স্থানে দেখেছিলাম, সুইমিং পুলের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীই সাঁতারু এবং তাদের সবার সম্মান-সম্মানী সমান। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল-ব্যাংকারদের চেয়ে তাদের আয়-উপার্জন বা সামাজিক মর্যাদা কোন অংশে কম না।

আমাদের দেশে এইচএসসি পাশ করা কেউ সাঁতার প্রশিক্ষক হতে চাইলে বাস্তবতা তাকে কষে থাপ্পড় লাগাবে। ডিটেইলসে যেতে হবে না আশা করি।

এই দেশের মানুষ ভালো কোন কিছুতে খরচ কিংবা বিনিয়োগ করতে চায় না। সবকিছু সস্তা বা বিনামূল্যে পেতে চায়। এফোর্ড করতে পারবে কি পারবে না, সেটা পরের ব্যাপার। নেত্রকোণার সেই হাওড়কে "লিটল কক্সবাজার" বলা হয়, সম্ভবত হাওড়ের এই অঞ্চলটা বঙ্গোপসাগরের মতই বিশাল ও উত্তাল- এই কারণেই। শুধুমাত্র প্রকৃতির দেওয়া ঐশ্বর্যের উপর ভিত্তি করেই মানুষ ঐ স্থানটাকে পর্যটনের স্থান বানিয়ে ফেলেছে হয়তো বা। সস্তা ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রলার কিনে এনে বা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে কতিপয় সুযোগ-সন্ধানী। অনেকেই এদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে বাহবা দিবেন। শহরাঞ্চলের সব গণপরিবহনের মালিকেরাও এরকম "খুনী উদ্যোক্তা"-র কাতারে পরেন।

পর্যটকেরা যেরকম খরচ করার সামর্থ্য বা মানসিকতা রাখেন না, তেমনি সেই খাতে ভালো বিনিয়োগকারীও সামনে আসে না। নামসর্বস্ব যে কেউ এসে, পানিতে একটা ট্রলার নামের বস্তু নামিয়েই, যাত্রী ডাকা শুরু করে দিতে পারে। ফিটনেসবিহীন এবং উপযুক্ত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম/ব্যক্তিবিহীন এসব জলযানই এতগুলি প্রাণের সলিল সমাধির অন্যতম কারণ।

প্রতিবছর বর্ষায় উত্তরাঞ্চলের বন্যা কিংবা সরকারি যেকোন খাতে দুর্নীতি যেমন নিত্যনৈমিত্তিক স্বাভাবিক ও সহনীয় ঘটনায় পরিণত হয়েছে, তেমনি ট্রলার/স্টিমারের দুর্ঘটনাগুলিও এখন শুধুই ঘটনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:৪৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×