somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু সচেতনতাই পারে চারপাশ বদলে দিতে-১ঃ জলাধার

০৫ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা দিন দিন আমাদের উপজেলা/গ্রাম, জেলা/শহর, দেশ, তথা পুরো পৃথিবীটাকে বসবাসের অযোগ্য বানিয়ে ফেলছি। কোন কিছুতে কারো দায়িত্বশীলতা, বিবেকবোধ, সহমর্মিতা নাই; সবাই সবকিছু করছি শুধু স্বার্থের জন্য, লাভের জন্য, লোভের বশবর্তী হয়ে। চিন্তা করছি না যে, আমরা তো একসময় কবরেই যাবো। কিন্তু যাওয়ার আগে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কেমন সমাজ, কেমন পরিবেশ রেখে যাচ্ছি। সেই চিন্তা না করেই একের পর এক সন্তানও জন্ম দিয়ে যাচ্ছি।
আমাদের সবকিছুই সাংঘর্ষিক। আমাদের নেতারা দিনে বলেন এক, রাতে করেন আরেক। আমাদের বড় বড় অফিসারেরা নিজের সন্তানদের পাঠান উন্নত দেশে, আর দেশে নিজেরা এমন কাজ করেন যাতে দেশে থেকে যাওয়া অন্যের সন্তানেরা কলুষিত ও দূষিত পরিবেশে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়।

জেনারেল কথাবার্তা বাদ দিয়ে আজকে একটি বিশেষ ব্যাপারে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

পরবর্তী বিশ্বযুদ্ধ বা সবচেয়ে বড় বিশ্বজনীন সমস্যার কারণ হবে "মিঠাপানি" বা ফ্রেশ ওয়াটার; সহজ বাংলায় খাবার উপযুক্ত পানি। বিশ্বের ৪ ভাগের ৩ ভাগ জল হলেও সেই পুরো জলভাগের প্রায় ৯৭ ভাগই হচ্ছে লবণাক্ত পানি, যা খাওয়ার অনুপযুক্ত। এবং এই লবণাক্ত পানি থেকে লবণ সরিয়ে নিয়ে পানযোগ্য পানিতে পরিণত করার প্রক্রিয়াটি ব্যায়সাপেক্ষ এবং অনেক বিদ্যুত/জ্বালানি লাগে। বাকি ৩ ভাগ পানির মধ্যে বেশির ভাগই দুই মেরুতে বরফ হিসেবে জমাট ছিল/আছে, যা গলতে শুরু করেছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে, এবং এর অনেক ভয়াবহ ফলাফল আছে, যা এখন আলোচনা করছি না।
মোট কথা হলো- মেরুর বরফ ও সাগরের পানি ছাড়া ভূমির অভ্যন্তরে থাকা পানির পরিমাণ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার তুলনায় খুবই নগণ্য। আর এদিকে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, অন্যদিকে জলাশয়গুলো-ও কমছে, দূষিত হচ্ছে, মরছে প্রতিনিয়ত। নিজেদের লাভ-লোভের কারণে মানুষ নদী, বিল, হাওড়, হ্রদ, পুকুর, ডোবা- এসব ভরাট করছে, ময়লা ফেলছে, বালু উঠিয়ে শেষ করে দিচ্ছে, শিল্পবর্জ্য ও মানববর্জ্য ফেলছে।
এখানে একটু বলে রাখি, বিশ্বের অনেক স্বাদুপানির মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে- মাত্রাতিরিক্ত/অপরিকল্পিতভাবে মাছ ধরার কারণে, ও দূষণের কারণে। আর ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের সব সাগরে মাছের চাইতে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি হয়ে যাবে। অর্থাৎ, মিঠাপানির মাছ আর লোনাজলের মাছের গুষ্ঠিকে ধ্বংস করে যাচ্ছে মানবজাতি। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত নিজেরাই ধ্বংস করছি।

এখন, মাটির উপরে থাকা পানির আধারগুলোকে নষ্ট করে মানুষ অনেক আগেই চোখ দিয়েছে মাটির নিচে থাকা পানির দিকে। কিন্তু সাম্প্রতিক বিশ্বজনীন বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গিয়েছে। বাংলাদেশে তা ভয়ানকভাবে নিচে নেমে গিয়েছে; এবং সেটা মানুষ নিজের চোখেই দেখে আসছে। আগে যতটুকু নিচে নল খুঁড়লে নলকূপের পানি পাওয়া যেতো, এখন ৩গুণ গভীরে খুঁড়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে কম।

এর কারণ, আমরা সবাই ভূত্বকের উপরিস্থিত পানির উপর নির্ভর না হয়ে, সম্পূর্ণভাবে ভূঅভ্যন্তরস্থ পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছি আজ কয়েক দশক ধরে। এবং একই সাথে আমরা যে মাটির নিচের পানিগুলো শেষ করছি, সেই মাটির নিচের পানির উৎসকে আমরা রিফিল বা পুনরায় ভরাট করার সুযোগ রাখছি খুব কম। মাটির নিচে পানি কিভাবে যায়? বৃষ্টির পানি মাটির ত্বক ভেদ করে মাটির গভীরে যায়। এখন আপনি যদি সবকিছু ইট-সিমেন্ট-কনক্রিট-লোহা-টাইলস দিয়ে বাঁধাই করে ফেলেন, তাহলে পানি মাটি ভেদ করে গভীরে যেতে পারবে না! যেকোন প্রাকৃতিক জলাশয় বা জলাভূমি দিয়েও পানি মাটির নিচে যায়, যেগুলো আমরা শেষ করে ফেলছি। এছাড়া বনজঙ্গল, পাহাড়, আবাদী/ফসলি জমি দিয়েও মাটির নিচে পানি যায়; সেগুলো-ও কি করছি সেটা আমরা নিজেরাই ভালো জানি।
ভূত্বকের নিচের পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধু যে আমরা পানির মহাসংকটে পরবো তা-ই না, মাটির উর্বরতা কমে যাবে, গাছপালা ও ফসলগুলো পানি পাবে না। আরো একটা ভয়ংকর ব্যাপার হবে, ভূমিধ্বস বা ভূমিকম্পের আশংকা বেড়ে যাবে। কারণ, মাটির গভীরের যে নহরগুলো দিয়ে পানি বয়ে যেতো, যে কক্ষগুলো পানি দিয়ে ভর্তি থাকতো, সেগুলো ফাঁকা/ফাঁপা হয়ে যাবে।

তাহলে আমরা কি করতে পারি? কি করতে পারি- তার কিছু কিছু ধারণা আপনারা আমার উপরের লেখাতেই পেয়েছেন। তাই বেশি কিছু আর বলবো না। শেষ করবো একটা অনুরোধ আর পরামর্শ দিয়ে।

আমরা সবাই জানি, আমাদের মৃত্যুর পরে আমরা নিজেদের জন্য আর কোন আমল করতে পারবো না; আর কোনভাবে নিজেদের ভুল সংশোধন করে, ভালো কাজ করে, পুণ্য কামাই করতে পারবো না, পাপমোচন করতে পারবো না। এজন্য বলা হয়, একজন মৃত ব্যক্তির মরার পরেও সওয়াব কামাইয়ের সবচেয়ে ভালো উৎস হলো- তার সচ্চরিত্রবান সন্তান। এর পরেই যা আছে, তা হলো সদকায়ে জারিয়া। অর্থাৎ, জীবিতকালে এমন কিছু করে যাবেন বা বানিয়ে যাবেন, যাতে আপনার মরার পরেও অন্য জীবিত মানুষেরা সেসব থেকে উপকৃত হন। অনেকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে মসজিদ-মাদ্রাসা বানিয়ে যান। আমার মতে বাংলাদেশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মসজিদ-মাদ্রাসা আছে। অনেকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে নলকূপ স্থাপন করে যান। আমার এই পুরো লেখার সারমর্ম হিসেবে, আপনাদের সবার কাছে বিশেষ অনুরোধ থাকবে, আল্লাহর ওয়াস্তে আর কোথাও টিউবওয়েল বসায়েন না। ইহকালের এবং পরকালের- উভয় সময়ের জন্য, সবার জন্য উপকারী হবে, যদি আপনি/আপনারা পুকুরের মত জলাশয় খনন করেন, আর খনন করতে না পারলেও, আল্লাহর ওয়াস্তে গ্রামের এজমালি পুকুরগুলোকে ছেড়ে দিয়েন। পুকুর বা জলাধারগুলোকে এমনভাবে সংরক্ষণ করেন, যাতে এসবের মধ্যে কেউ মলমূত্র-কফথুথু না ফেলে, আবর্জনা না ফেলে। গ্রামে বিশেষ বিশেষভাবে কিছু পুকুর রাখবেন, যেগুলো শুধুমাত্র খাবার পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হবে- আর অন্য কিচ্ছুর জন্য না! বিশ্বের জনবহুল, প্রাচীন এবং বিখ্যাত সব শহরগুলোতে (নিউইয়র্ক, বার্লিন, লন্ডন, মস্কো, টোকিও ইত্যাদি) স্থানীয় শহরবাসীর খাবার পানির উৎস হিসেবে কৃত্রিম হ্রদ বানিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে, আমাদের চট্টগ্রামের ফয়েজ লেইকের মত; এগুলোকে ওয়াটার রিজার্ভার বলে। অথচ, আমাদের দেশের শহরগুলোর কি অবস্থা নিজেরাই দেখেন। পারলে, শহরের আত্মীয়দেরকেও বলবেন- জলাশয় বানিয়ে বা সংরক্ষণ করে, নিজেদের ইহকালীন ও পরকালীন শান্তির ব্যবস্থা করতে। সুন্দর জলাশয় মানেই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ- এটা সব মানুষই বুঝে; কিন্তু তারপরেও লোভে পরে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায়।

এছাড়া বৃক্ষরোপণ-ও একটি খুব ভালো সদকায়ে জারিয়া।

উল্লেখ্য যে, কৃষিকাজে সেচের জন্য আমাদের অবশ্যই মাটির উপরের পানি ব্যবহার করা অতীব জরুরি; এবং পারতপক্ষে ডিজেল/পেট্রোলচালিত পাম্পের পরিবর্তে সোলার ইরিগেশন পাম্প ব্যবহার করা উচিত। এসবের জন্য সরকারের কৃষি অধিদপ্তর, স্থানীয় কৃষি অফিস, পল্লীবিদ্যুৎ অফিসসহ নানারকম সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক/বহুজাতিক সংস্থাগুলো সাহায্য চাইলেই এগিয়ে আসবে। বিনামূল্যেই সাহায্য করতে তারা প্রস্তুত।



বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হলে "Global groundwater: Source, scarcity, sustainability, security, and solutions" বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×