somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনার তীব্র সংক্রমণ, ঈদ-শপিং, ধর্মচর্চা, সামাজিকতা ও মধ্যবিত্তায়ন

২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের এই মুহূর্তে কয়েকটা জিনিস পরিস্কার করে বুঝতে হবেঃ-

যাদের কাপড়ের বা কিছু না কিছুর দোকান আছে (মার্কেটে বা যেকোন কোথাও), তারা নিজেদের জীবিকার তাগিদে দোকান খুলে বসবে। এটা তাদের অধিকার। তারা এটাকে তাদের উপযুক্ত আয়ের পথ ভেবে এই পেশায়/ব্যবসায় এসেছে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত (যেটা সঠিক নাকি ভুল সেটা ভাবার এখন সময় নয়)।
তারা কাস্টোমারের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকবে। ক্রেতাদের ফোন করবে। ফেসবুকে পোস্ট দিবে। রাস্তা থেকে ডাক দিবে। বেশি এক্সট্রিম হলে গায়ে হাত দিয়ে টেনে দোকানে ঢুকাবে।

কিন্তু সাধারণ মানুষের অর্থাৎ ক্রেতাদের কি বিবেকবুদ্ধি, আক্কেলজ্ঞান, এসব কিচ্ছু নাই? আস্তিক বা নাস্তিক, কেয়ামত/গজব/দূর্যোগ ইত্যাদি বুঝার মস্তিষ্ক তাদের নাই??

১) ঈদে নতুন কাপড়, নতুন জুতা যারা পড়ে, তারা কয়জন সারা বছর ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পরে?
২) ঈদে যারা নিজের বা অন্যের ঘরে নানারকম খাবার খাওয়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে, তারা কয়জন এতিম-নিঃস্ব মানুষকে বছরে এক বেলা খাবার খাওয়ায়?
৩) ঈদে যারা সামাজিকতার নাম বিক্রি করে, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়স্বজন, পরিবার পরিজনদের অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবেই নানান জিনিস গিফট করে, তারা কয়জন সঠিকভাবে ছোট-বড়, ধনী-গরিব সবাইকে "আসসালামুয়ালাইকুম" বলে?

ঈদ/রমজান কি এদের জন্য ধর্মপালন, নাকি ধান্ধাবাজির ও লোকদেখানো অসুস্থ প্রতিযোগিতা??

শপিং না করলে এদেরকে কি উলঙ্গ বা ছেড়াফাটা কাপড় পরে ঈদ পালন করতে হবে? মহামারী ঠেকানোর মূল পন্থাটাই কেন তারা বুঝতে পারছে না? কিভাবে বুঝালে এদেরকে বিশ্বাস করানো যাবে? কিরকম ভয়াবহ পরিস্থিতি হলে এরা আসলেই ভয় পাবে?

এবার ঈদে এরকম পরিস্থিতিতে সবাইকে তো নিজ ঘরে নিজ পরিবারের সদস্যদের নিয়েই ঈদ পালন করতে হবে! অন্যদের দেখিয়ে বাহাদুরি করার জন্য অন্যদের বাসায় যাওয়াটাও তো নিজেদের ও অন্যদের জন্য ঘাতক হতে পারে!

ভিড় এড়িয়ে চলা, ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ আপাতত বাদ দেওয়া- এসব তো এরা মানতেই চাইছে না। হাত ধোয়া তো জাতিগতভাবেই মানে না। মাস্কটা যে কয়জনে পরে- সেটাও পরা না পরা একই কথা! এরকম বেপরোয়া চলে, কারো না কারো ঘরে জান ও মালের ক্ষতি সৃষ্টি করে, কিভাবে তারা "উৎসব" পালনের কথা ভাবে?
-----------------------------
আমি আমার পয়েন্ট অব ভিউ ও পারসোনাল এক্সপেরিয়েন্স থেকে কিছু কথা বলিঃ

আমার ধারণা, আমরা মধ্যবিত্ত। আমরা "আপাতত" অর্থ-সংকটে নেই। খাদ্যসংকটে থাকা তো দূরের কথা (আল্লাহর রহমতে)। আমরা আমাদের পরিবারের ৪ জন সদস্য নিয়ে, করোনার তুমুল এই সংকটাপন্ন সময়ে, অতীব প্রয়োজনীয় সব জিনিসের পিছনে খরচ করে, নিজেরা নিজেদের মত ভালো আছি।

সব মধ্যবিত্ত পরিবার আমাদের মত চললে- "সাধারণ ক্ষেত্রে" কোনরকম সংকটে পরার কথা না।

মধ্যবিত্তের মূল সম্পদ হচ্ছে- সম্মান। সম্মান শেষ, তো সব শেষ। কিন্তু সেই সম্মানের সংজ্ঞাও সব মধ্যবিত্ত সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারে না। অনেকের কাছে সম্মানের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায় কিছু অযৌক্তিক, অতিরঞ্জিত, অমানবিক, অনৈসলামিক সামাজিক রীতিনীতি; আর এগুলোই মধ্যবিত্তের জীবনে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিষফোঁড়া হয়ে উঠার জন্য যথেষ্ঠ।

আমাদের চেয়ে যারা দরিদ্র, ওদের ধারণা আমরা ধনী। তাই তারা এই রোজা/ঈদের মৌসুমে, করোনার উছিলায়, বা স্বাভাবিকভাবেই- আমাদের বদান্যতা দেখতে চায়। কিন্তু তারা বুঝে না, আমরা নিজেরাই শুধুমাত্র আমাদের অত্যাধিক জরুরি খরচগুলো করেই বেঁচে আছি। আমাদের অতি দানশীলতা আমাদেরকে ওদের কাতারে নিয়েই ফেলতে পারে!

যারা আমাদের কাছাকাছি সামাজিক/আর্থিক স্তরের, অথবা আমাদের চেয়ে ধনী, তাদের কাছে আমাদেরকে সবসময় প্রচলিত (হোক তা ভ্রান্ত) সামাজিকতা পালন করে প্রমাণ করতে হয়- "দেখুন, আমরা এখনও ভালো আছি। মধ্যবিত্ত আছি।" মহামারীর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো যখন সামাজিকতার বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন তথাকথিত সমাজ এই মধ্যবিত্তকে করোনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সামাজিকতা পালন করতে বাধ্য করে। এবং কেবলমাত্র তখনই, মধ্যবিত্তের জীবন, সম্পদ ও সম্মান নিয়ে টানাটানি পরে যায়!

করোনার এই উচ্চপ্রকোপ বেশি দিন আল্লাহর রহমতে থাকবে না। একসময় কমবে। একসময় ভ্যাক্সিন কাজ করা শুরু করবে। একসময় এন্টিবডি কাজ করা শুরু করবে। একসময় আল্লাহর গজব ও পরীক্ষা শেষ হবে আপাতত। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত, জীবিত থাকার জন্য, ও জীবিত রাখার জন্য- কৃচ্ছতাসাধন ও সংযমের বিকল্প নেই; যা যা থেকে বিরত থাকলে সম্ভাব্য জান-মালের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব, তা তা থেকে বিরত অবশ্যই থাকতেই হবে।

একটা বছর মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে কাপড়চোপড় না দিলে, ছেলেকে আরেক বছর পরে বিয়ে করালে, পরের ঈদে বাসায় মেহমানদারী করলে, এই এক ঈদে ১০০% নতুন পোশাক না পরলে, এই এক রোজায় স্বচ্ছল প্রতিবেশীদের সাথে ইফতার আদানপ্রদান না করলে- মধ্যবিত্তের মানসম্মান চলে যায় না!

আমাদের মত অনেক মধ্যবিত্তের ঘরেই ক্যান্সার, ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ সহ নানাবিধ রোগ ও আরও অনেক চলমান সমস্যা আছে, যেগুলোর সাথে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো মানিয়ে নিয়েছে, টিকে থাকতে শিখেছে। সমাজের কাছে নিজেকে যোগ্য ও সম্মানিত প্রমাণ করতে গিয়েই মধ্যবিত্ত করোনা আক্রান্ত হচ্ছে, এবং বিপদগ্রস্ত হচ্ছে। কোভিড ধনীদের রোগ। যাকে ধরে, জানে না মারলেও, ব্যাংকব্যালেন্স খালি করে দিয়ে যেতে পারে। মধ্যবিত্তের সবার আগে উচিত এইটা খেয়াল রাখা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৪৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×