রাত ৩টা বাজে। শুতে যাব । কালকে স্কুলআছে । বিছানা করাই আছে । মশারি টানানো। আজও বুঝি না, মা সবসময়- এটা নিজে করতে হবে, ওটা করিস না কেন, কিন্তু কোনোদিন মশারি টানাতে দেন নি। আপি কে জিজ্ঞেস করতে হবে। ও নিশ্চয়ই জানে।।
হঠাৎ রিমার ফোন। ভুল হয়ে গেছে "হঠাৎ"শব্দটা হবে না, সাধারনত সে রাতের বেলায় ফোন করে, কিন্তু গত ছয়মাসে কোন ফোন করে নি । বিশেষ বিশেষ দিনে দুই একটা মেসেজ করেছে এই যা।
-কুত্তি, কেমন আছিস? ওপাশে মৃদু কান্নার আওয়াজ। চোখে পানির ঝাপটা দিয়ে, কাপড় দিয়ে নাক মুছে যেমন শোনায় সেভাবে বলল,
- পিয়াস-জয়ীর ব্রেকআপ হইছে।
আমার অবাক হওয়ার কথা , অবাক না হয়ে বললাম, তুই কাদছিস ক্যান ? এর সাথে তোরকাদার সম্পর্ক কোথায়?
-love you.
-love you too.
-Seriously.
-আমিও সিরিয়াসলি ।
-কালকে দেখা করতে পারবি ।
-না।
-পরশুদিন।
আবারও বললাম, না ।
ফোন কেটেদিলাম। জানতাম সে কেন দেখা করতে চাইছে। কিন্তু জানতাম না, আমি কেন না বললাম।
খুবই সিম্পল, সবার জানা একটা গল্প।
জয়ী আমার এক্স-গার্লফ্রেন ্ড। জয়ীর বেস্ট ফ্রেন্ড রিমা। জয়ী যখন ছেড়ে চলে যায়, পেট ব্যথার নাম করে রাতে মেয়ের মতো বিছানা ভাসাতাম, তখন রিমার আগমন। রিমাও মন ভাঙ্গাদের তালিকায়। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সবুজ। জোর গলায় বলত, দেখ, রিমার মতো মেয়েকে পাত্তা দেই না। তার বোকামি দেখে কাঁদবো না, থাপ্পর মারব, বুঝে উঠতে পারতাম না। মনে মনে বলতাম, যেই খালে রিমা পরে তোর জন্য কাদছে, তুইও একদিন সেই খালে পড়বি।
সবুজের সাথে শেষ কথা কবে হয়েছে, মনে পড়ে না। মানুষের নাকি ভালো দিকটা দেখতে হয়, সে হিসেবে নিশসন্দেহে সবুজঅত্যন্ত ভালো ছেলে।
হঠাৎ রিমা আর আমি আবিষ্কার করলাম, আমরা একে অন্যের অত্যন্ত চলে এসেছি, কিন্তু দুজনকেই আবিষ্কারের কথা বলতে পারছিলাম না। বলার জন্য মুখ লাগে, যা আমাদের ছিল না।
ঘটনার মধ্যে টুইস্ট আসে, মোড় ঘুরে যায়। সবাই আন্দাজা করতে পারছেন। জয়ী আবার ফিরে আসতে চায়। সবুজ রিমারজন্য চোখ ভিজাতে থাকে।
আবার যথাসময়ে জয়ী আমার কাছ থেকে বিদায় নেয়। জয়ী কে ইয়া বড় বড় চিঠি লিখতাম। প্রত্যুত্তরে, দুই তিন পাতায় অতি-সুন্দর গুছিয়ে লিখত। সব চিঠি ছিড়ে ফেলেছি। শেষ চিঠিটা আছে,
R,
আমাকে ভুলে যাও প্লিজ। মনে করো জয়ী বলতে কেউ ছিল না এবং এখনও নাই।আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালবাস। আমাকে ভুলে যেয়ে তুমি অন্য কাউকে ভালবাস। মনে করো, তুমি আমাকে ভালবাসতে না। রাতুল তুমি অনেক অনেক ভাল। আমি চাই না,আমার কারনে তোমার জীবন ধ্বংস হোক। আমাকে ভুলে গেলে তুমি অনেক শান্তি পাবে।
আর লিখতে পারছি না। চোখ ভরে আসছে। ছেলে মানুষের নাকি কাদতে নেই। সবুজও রিমাকে ছেড়ে চলে যায়। আবার আমাদের কাছে আসার পালা। জয়ী বলেছিল, তোমার আসেপাশে কেউ একজন আছে যে তোমাকে অনেক ভালবাসে।
বুঝতে সমস্যা হয় নি, জয়ী রিমার কথা বলছে।
হা হা। সরি হেসে ফেললা! শেষ একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম, চলে যখন যাচ্ছো যাও, রিমার দোহাই দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল!
নাহ, আজকে আর ঘুমানো হবে না। বারান্দায় বেশ বাতাস। আজ জয়ী নেই, রিমাও নেই। সবুজ থেকেও নেই। ভেবেছিলাম, এদের ছাড়া জীবন চলবে না, থেমে থাকবে। কি আশ্চর্য, জীবন তার মতই চলছে। আমাকে ছুটতে হচ্ছে। প্রতিদিন ওদের সাথে দেখা হয়, চোখে চোখ মেলানোর চেষ্টা করি। মনে হয়, দৌড়ে গিয়ে জয়ীর ঠোটে ঠোট চেপে ধরি, বলি, তুমি বলেছিলে কাউকে একবার অবিশ্বাস করলে তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না, কিন্তু কিন্তু......... বলা হয়ে ওঠে না।
পিছনে কে যেন ঘাড়ে হাত রাখল।
-রাতুল আজকেও ঘুমাবি না।
হাত সরানোর চেষ্টা করলাম না...চোখে অপূর্ব মাদকতা এসে গেছে...ঘুম ও বাস্তবতার মাঝে আপি'র সাথে বসে আছি........