somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে? নাকি দলবাজির দখলে চেইন অব কমান্ড?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুলিশে দলীয় নিয়োগ নতুন কিছু নয়। বিএনপি আমলে ‘ত্যাগী’ ছাত্রদল নেতা বা আওয়ামী লীগ আমলে ‘ত্যাগী’ ছাত্রলীগ নেতাদের পুলিশে নিয়োগ সবারই জানা। প্রমাণ রয়েছে। পরিসংখ্যানও রয়েছে। আর এসব ‘ত্যাগী’ দলবাজ পুলিশ সদস্যরাই অনেক সময় হয়ে উঠছেন বেপরোয়া। স্বেচ্ছাচারী। বিএনপির মিছিলে গুলিতে চারজন নিহত হবার ঘটনায় এমন দলীয় পুলিশ সদস্যদের দুষছেন কেউ কেউ। তবে, অপেক্ষা করতে হবে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ পর্যন্ত। যদিও এসব ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে মিশ্র অনুভূতি সাধারণ মানুষের।

লিখছি পুলিশের কিছু স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে। কয়েকটি ঘটনায় চোখ দিচ্ছি।

ঘটনা-১: পল্লবী থানার একটি প্রতারণা মামলায় ৩ নম্বর আসামি হালিম ওরফে চিটার হালিমকে ধরতে গত ১৭ই ডিসেম্বর অভিযান চালায় পুলিশ। মামলায় আসামির ঠিকানা ছিলো সেকশন ৭ এর পল্লবী প্লাজা। অথচ সে ঠিকানায় না গিয়ে পুলিশ যায় মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের ১ নম্বর রোডের ৪৩৬ নম্বর বাসায়। সে বাড়ির মালিকের নামও আবদুল হালিম। ড্রিমল্যান্ড অ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেড ও রিলায়েন্স আবাসন ডেভলপারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বাসায় গিয়ে হালিমকে গ্রেফতার এর ভয় দেখিয়ে খারাপ ব্যবহার এর পর তার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে আদালতে গত ৩রা জানুয়রি মামলা করেন হালিম।

তবে পুলিশ অস্বীকার করেছে অভিযোগ।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ভুরি ভুরি।

ঘটনা-২: ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট শেখ হাসিনার মহাসমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোঃ আশরাফুল হুদা, খোদা বখস্ চৌধুরী ও শহুদুল হক চৌধুরীকে যেতে হয়েছে কারাগারে। একই অভিযোগে কারাগারে আছেন পুলিশের বিশেষ শাখা ‘সিআইডি’র কর্মকর্তা মুন্সী আতিক এবং রুহুল আমিন।

ঘটনা-৩: কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম মোমিন হত্যার দায়ে প্রধান আসামি সাবেক ওসি রফিকুল ইসলামকে গত ২০শে জুলাই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

ঘটনা-৪: হরতালে হামলা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ৪ঠা অক্টোবর পুলিশের কর্মকর্তা মাজহারুল হক এবং কোহিনূর মিয়াকে সাসপেন্ড করা হয়।

ঘটনা-৫: ২০১১ সাালে রাজশাহীতে চিকিৎসক দম্পত্তিকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার ও দুইজন এসআই’কে।

ঘটনা-৬: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থীদের মদদ দেয়ার অভিযোগে ২০০৫ সালের ফেব্র“য়ারিতে সাসপেন্ড হয়েছিলেন খুলনার সাবেক এডিশনাল এসপি মোফাজ্জল হোসেন।

অভিযোগের শেষ নেই।

নিজেরাও স্বীকার করছেন:

পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন কিছু নয়।

গত ৩রা জানুয়ারি, ২০১২, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে পুলিশের দূর্নীতির কথা বলেন পুলিশ সমন্বয়ক ফণীভূষণ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ মহাপরিদর্শক পদমর্যাদায় পুলিশ সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা ফণীভূষণ চৌধুরী বলেন, পুলিশে দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। পুলিশের সুযোগ সুবিধা বাড়লেও সে অনুযায়ী জনগণ সেবা পাচ্ছে না। দুর্নীতির কারণে পুলিশের চেইন অব কমান্ডও ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, পুলিশের মধ্যে ক্ষমতার নানারকম অপব্যবহার হচ্ছে ।

দূর্নীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন:

দূর্নীতিতেও দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে থাকার কথা বলেছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।

টিআই’র প্রতিবেদনে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ায় সেবা খাতগুলোর মধ্যে পুলিশ বিভাগেই ঘুষ লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয়। গত বছরের ২২শে ডিসেম্বর প্রকাশিত টিআই রিপোর্টে জানানো হয়, তাদের জরিপে অংশ নেওয়া ৭৫ শতাংশই গত এক বছরে পুলিশকে ঘুষ দেওয়ার কথা জানিয়েছে।

কাউন্টার ইন্টালিজেন্স ইউনিট:

পুলিশের কার্যক্রম নজরদারি করার জন্য ‘কাউন্টার ইন্টালিজেন্স ইউনিট’ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও নানা কারণে কাজ আর আগায়নি।

নথি থেকে জানা যায়, ২০০২ সালের ১৪ই মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শৃংখলা বিষয়ক কমিটিতে পুলিশে দূর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব, চাঁদাবজি, ঘুষ এবং পুলিশের সাথে অপরাধীদের সম্পর্কের বিষয়টি নজরদারি করার সিদ্ধান্ত হয়।

এ জন্য ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাব কমিটিও করা হয়। যার আহ্বায়ক করা হয় কেবিনেট ডিভিশনের অডিশনাল সেক্রেটারীকে। এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত রির্প্টো দেয়ার জন্য কমিটিকে বলা হয়।

এছাড়াও পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (Additional Inspector General of Police-Appointment and Training), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (Joint Secretary-Police of the Home Ministry), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল, এস্টাবলিশমেন্ট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিববে এ কমিটিতে রাখা হয়।

এই সাব কমিটি আরেকটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করে। তার প্রধান করা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তখনকার যুগ্ম সচিব আবদুল কুদ্দুসকে। এছাড়াও কমিটিতে মেম্বার সেক্রেটারী হিসেবে রাখা হয় স্বরষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এসিসটেন্ট সেক্রেটারিকে। কমিটির অন্য সদস্য ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পরিচালক এবং একজন অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক।

২০০৩ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে চার সদস্যের এই কমিটি ‘কাউন্টার ইনটেলিজেন্স ইউনিট’ গঠনের বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দেয়।

তবে, নানা কারণে কাজ আর বেশিদূর আগায়নি।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এস এম শাহজাহান বলেন, পুলিশের ওপর খবরদারি নয়, জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য যে নামেই হোক একটি স্বাধীন ইউনিট থাকতে পারে। তাছাড়া নিচের ইউনিটগুলোতে নজরদারি এবং জবাবদিহিতা বাড়ানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এস এম শাহজাহান বলেন, প্রস্তাবিত পুলিশ police complaint authority গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছিলো।

আছে ‘পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট’:

‘পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট’ (Police Internal Oversight--- http://www.pio.gov.bd/) এর মাধ্যমে পুলিশের নানা অনিয়মের ওপর নজরদারি করা হয় বলে এর পুলিশের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে।

পুলিশের ঘুষ, দূর্নীতিসহ নানা অনিয়মের কথা স্বীকার করে এবং তা দূর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে -- এ্ইসব কিছুর জন্যই পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট।

তবে, অনিয়ম দূর্নীতির জন্য কতজনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার পরিসংখ্যান নেই এতে।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×