somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~মেয়েরা নাকি মায়ের জাত! ছেলেরা তবে বাবার জাত? নাকি চিরশিশু?~

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা মেয়েকে বলা হয়, মেয়ে হয়ে জন্মেছ যখন বিয়ে করতেই হবে, একটা ছেলেকে কেন বলা হয় না তোমাকে বিয়ে করতেই হবে?

একটা মেয়েকে বলা হয়, মেয়ে হয়ে জন্মেছ মা হতে না পারলে তোমার জীবন বৃথা। একটা ছেলেকে কেন বলা হয় না বাবা হতে না পারলে তোমার জীবন বৃথা?

বিয়ে তো মেয়েদের একার হয় না, একটা ছেলেরও হয়। তাহলে কেন একটা মেয়েকেই শুধু বিয়ের জন্য পরিবার থেকে সমাজ থেকে চাপ দিয়ে তার শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলার অবস্থা হয়? কেন একই বয়সের একটা ছেলেকে বিয়ে না করে আরও পড়াশোনা করার জন্য, আরও বড় হবার জন্য তাগিদ দেয়া হয় আর মেয়ের জন্য ঠিক উল্টো ব্যবহার করা হয়?

একটি মেয়ের শিক্ষা, প্রতিভা, পেশা, উপার্জন যত গুন আছে সবকিছুর সর্বশেষ লক্ষ্য একটি ভাল বিয়ে হওয়া!! বিয়ে "হওয়া", বিয়ে "করা" না কিন্তু। কেন? বিয়ের মাধ্যমে একটা মেয়েকে উদ্ধার করা হয় কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতার কাছ থেকে। শত সহস্র গুন থাকার পরও একটি মেয়ে তার পিতামাতার জন্য একটি "দায়"। এই দায় থেকে তাদের মুক্ত হতে হয়। পুত্রদায়গ্রস্ত কোন পিতা মাতা নেই কিনা তাই তারা উদ্ধারও হয়না, তারা বরং উদ্ধার করে, ছেলের বিয়ে করায় বা করে, আর মেয়েদের উদ্ধার হয়, বিয়ে হয়।

একটা মেয়ের কোটি কোটি টাকা থাকলেও যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে কোন ছেলের সাথে জোড়া না লাগানো যায়, সমাজের শান্তি হয়না, খচখচ করতে থাকে কাটার মত সেই মেয়েটি সবার গলায়।
কেন একটা মেয়ের সবার সামনে নিজেকে সুন্দর প্রমান করতে রং মেখে দাঁড়াতে হয়? কেউ কেউ বলতে পারে নিজের কাছে ভাল লাগার জন্য? সত্যি? কেন? আয়নার দাড়িয়ে নিজেকে কোন রং ছাড়া দেখতে ভাল লাগে না? কেন লাগে না? ঠিক কোন বয়স থেকে একটা মেয়ে আয়নায় দাড়িয়ে নিজের চেহারা নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকতে পেরে রং মাখানো শুরু করে? কেন করে? কী ভেবে করে? সে যখন বুঝতে পারে এই সমাজে তার রুপের মূল্যই সবচেয়ে বেশি, তার গুনের নয়, তার মস্তিষ্কের নয় তখনই সে মস্তিষ্কের চর্চা বাদ দিয়ে বা একপাশে সরিয়ে নিজের রুপের চর্চায় মনোনিবেশ করে, কারন মস্তিষ্ক চর্চার চাইতে রুপ চর্চা অনেক সহজ কিনা। সহজে যা চায় তা পাওয়া যায় রুপের বিনিময়ে। এটাই বোঝানো হয় তাকে। তখনই কি করে?

একই কাজ তো একটা ছেলেও করতে পারত, কেন করেনা? একটা ছেলেও আয়নায় সামনে দাঁড়ায়, নিজেকে দেখতে। অনেক ছেলে তো আয়নার সামনে দাঁড়ায়ও না। আর যে দাঁড়ায়ও বা তার তো নিজেকে আলাদা রং মেখে সুন্দর করতে হয় না। কেন হয়না? তার যা আছে যেমন আছে সেটাই পরিপাটি করে নিতে পারলেই যথেষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কেন একটা মেয়ের নিজের যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না? সে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না নাকি তাকে সন্তুষ্ট থাকতে দেয়া হয় না? কেন দেয়া হয়না? কেন কেউ বা কারা সুযোগ পায় তার অস্তিত্বকে এতটা অপমান করতে যে রং না মেখে একটা মেয়ে নিজেকে নিজের কাছেই সুন্দর ভাবতে পারে না? নিজের ভিতরটা ফাঁকা বলে? অন্তসারশুন্য বলে? ভিতরে যতটা শুন্য সেটা বাইরে তত চকচকে করে যেন দেখানো যায় সে কারনে? এই একই ইচ্ছা একটা ছেলের মধ্যে কেন জন্ম নেয় না? কারন তাকে আলতো প্রলেপ মেখে সুন্দর সেজে দাঁড়াবার দরকার নেই?

মেয়েরা নাকি মায়ের জাত!! ছেলেদের বাবার জাত তো বলা হয় না। কেন বলা হয় না? বাবার দরকার পরে না একটা বাচ্চা জন্ম নিতে? একটা বাচ্চা বড় করতে? তাহলে কেন এই সমাজে একটা মেয়েকে যেভাবে মা হও মা হও মা না হতে পারলে তোমার জন্ম বৃথা এই গান গেয়ে শোনানো হয় সেরকম একটা ছেলেকে কেন শোনানো হয় না বাবা হও বাবা হও বাবা না হতে পারলে তোমার জন্ম বৃথা? একটা মেয়ে হয় নিজের বাচ্চার মা হবে নাহলে জাতির মা হবে যেমন মাদার টেরেসা হয়েছিল। কিন্তু কারো মা না হয়ে শুধু মানুষ হয়ে বাঁচার কোন অধিকার তার নেই?

আর যদি কোন মেয়ে বলে সে মা হতে চায় না? তার বাচ্চা দেখলেই আদর করার জন্য কোন আহ্লাদী মনে আসে না, তার বাচ্চা লালন পালন করার মত দায়িত্ব নিতে সে ইচ্ছুক না, আগ্রহী না তবে তাকে ধরে নেয়া হয় সে অস্বাভাবিক। কিন্তু এই একই আচরণ একটা ছেলের কাছ থেকে আশা করা হয় না। আশা করা হয় না কোন ছেলে বাচ্চা দেখলেই আই কুতুকুতু বলে লাফিয়ে উঠবে বরং এমন আচরণ কে তার পৌরুষের অপমান বলে ধরা হয় অনেক ক্ষেত্রে। তার কারন কি?? মেয়েরা যদি জন্ম দেয় বলে মা হয় বলে স্বভাবতই শিশুদের প্রতি দুর্বলতা থাকতে পারে তবে ছেলেদেরও তো থাকার কথা তাই না?
মাতৃত্বই যদি একটা মেয়ের পরিপূর্ণতা হয় তবে পিতৃত্ব কি একটা ছেলের পরিপূর্ণতা হওয়ার কথা বা? কিন্তু হয় না কেন?

অনেকগুলো প্রশ্ন করলাম। এবার উত্তর দেই।

এই সমাজে এখনও মেয়েরা শুধুই মেয়ে র‍্য়ে গিয়েছে, মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। নিজের মন, নিজের দেহ, নিজের আত্মা তাদের নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই, নিজের অধিকারে নেই এবং সেই অধিকার অর্জন করতে যা করা দরকার তা অর্জন করার প্রচেষ্টাও নেই। যতই পড়াশোনা করুক, যতই উপার্জন করুক, যতই দেশের মানুষের কল্যাণ করুক যতক্ষণ পর্যন্ত একটা মেয়ে নিজেকে সক্ষম স্বাধীন মানুষ হিসাবে ভাবতে না, কল্পনা করতেও না, বিশ্বাস করতে না পারবে এবং না জানবে এটাই তার প্রথম ও সবচেয়ে বড় পরিচয় ততক্ষণ পর্যন্ত রং মাখা আর স্ং সাজা অন্তঃসারশুন্য পুতুলের মত তাদেরও মুল্য নির্ধারণ করে কেনাবেচা করা হবে, তাই হচ্ছে, তাই হবে।

তুমি যে অমুল্য, তোমার মুল্য তোমাকেই আগে বুঝতে হবে। নাহলে অন্য কারো দায় পড়েনি তুমি নিজেকে সস্তা থেকে আরও সস্তা বানাবে আর অন্যরা তোমাকে উচ্চমুল্যে সম্মান করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৪৫
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×