somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

~কাঠের মোমবাতি~

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল একদিন। সে বিয়ে করতে চায়। কেমন পাত্রী চাই তা নিয়েই কথা হচ্ছিল।
-বিয়ে করব, মেয়ে খোঁজ। পরীর মত সুন্দরী।
-অশিক্ষিত অতি রূপবতী একটা পাত্রী আছে আমার গ্রামে, করবি? শুধু পরী না একেবারে হুরপরী!
-কি বলিস! গণ্ডমূর্খ মেয়ে বিয়ে করা যায় নাকি, আমার মান সম্মান সব যাবে তো। হোক হুরপরী!
-তাহলে ৫ পাস?
-না না, ৫ পাশ, ১০ পাশ দিয়ে চলবে না। সমাজে মুখ দেখাবো কি করে। আমি মাস্টার্স করলাম, আমার বউ এর অন্তত অনার্স তো লাগে।
-একটা মেয়ে আছে, মাস্টার্স শেষ করেছে। ম্যাথমেটিক্স এ। খুব ট্যালেন্ট।
-ট্যালেন্ট ধুইয়া পানি খাব। দেখতে কেমন? ফর্সা?
-হ্যাঁ ফর্সাই।
-ঘর সংসারের কাজ কেমন পারে? সংসারী?
-তা তো বলতে পারিনা। সারাজীবন পড়াশোনা নিয়ে থেকেছে। এখন আবার স্কলারশিপ পেয়েছে আমেরিকায় যাবে পি এইচ ডি করতে। দেখবি?

আমেরিকার কথা শুনে আমার বন্ধুটি একটু নড়ে চড়ে বসে।
-কবে যাবে?
-এইতো যাবে হয়ত ৪ মাস কি ৫ মাস পর। প্রসেসিং চলছে। মেয়ের বাবা মায়ের ইচ্ছা বিয়ে করিয়েই মেয়েকে আমেরিকা পাঠাবে।
-তা তো বটেই। বিয়ে ছাড়া বিদেশে আবার মেয়েদের পাঠানো যায় নাকি!! কীসব করে বেড়াবে। একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু ঐ মেয়ে নাহয় পি এইচ ডি করবে ঐ খানে, আমি কি করব? আমি তো এমবিএ করেছি শুধু। ব্যাঙ্ক থেকে ছুটি নিলাম নাহয়। কিন্তু কয়দিনই বা পাব।
-আরাম করবি, সাদা সুন্দরী দেখবি।
-তা করা যায়। কিন্তু পি এইচ ডি করা শেষ হলে দেশেই ফিরব।
-সেটা বিয়ে হলে দুজন মিলে না হয় ঠিক করিস পরে কি করবি।
- না না, দুজন ঠিক করার কিছু নাই, পি এইচ ডি করে দেশেই ফিরব। দেশে আমার বুড়া বাপ মা আছে। বুড়া বয়সে বউ এর সেবা না পেলে ওদের মনে কষ্ট হবে না।
-তা যা বলেছিস। মেয়েটার বাপ মা তো আর ততদিন বাঁচবে না।
-আরে বাচলেও কি মরলেই বা কি। বিয়ে হয়ে গেল মানেই তো আমার সম্পত্তি। আমি যা বলব তাই হবে।

কথাটা শুনে আমি মনে মনে একটু অবক হলেও মুখে কিছু বললাম না। কারন আমার বন্ধুটি ভদ্রতা করে এই কথাটিকে ঘুরিয়ে বলেনি। সবাই যা মনে মনে ভাবে সে মুখেই তা বলেছে। বললাম,
-তুই তো ভালই দেখি, শিক্ষিত বউও চাই, আমেরিকার নাগরিক ও হতে চাই, দেশে বাবা মা কে বউ এর সেবাও দিতে চাই। বাহ!!
-চাইতে দোষ কি, চাইতেই পারি। অন্যায় তো কিছু আর চাইনি।
-তা চাসনি। তাহলে কথা বলব মেয়ের বাড়িতে?
-বল।

সম্মতি দেয় ছেলেটি। পরবর্তী ঘটনা গুলো খুব দ্রুত ঘটে যায়। বিয়েও হয়ে যায়। মেয়েটি পি এইচ ডি করতে আমেরিকা যায়। ছেলেটিকে নিয়েও যায়। ছেলেটি ব্যাংক থেকে ছুটি নিয়ে বউ এর সাথে এক বছর ওখানে থেকে দেশে ফেরত চলে আসে। দেশে আসার পর সবার এত এত কথা শুরু হয়,
"পি এইচ ডি করা মাইয়া বিয়া করছ, লাগাম তো হাতে থাকব না জানা কথাই।"
"একটা নাতি নাতনির মুখ দেখতে চাইলাম, তা কবে হইব কে জানে। বউই তো ঘরে নাই।"
"কত শখ কইরা বিয়া দিলাম পোলার বউ এর হাতে সংসারটা ছাড়মু, কপালে নাই।"

ওদিকে মেয়েটা সকাল সন্ধ্যা রাত কষ্ট করে বাবা মা ভাই বোন স্বামী আত্মীয় স্বজন সবাইকে ফেলে বিদেশে পড়াশোনা আর কাজ করে যায়। একদম একা একা। স্বামীর সাথে কথা বলতে গেলেই শুধু নালিশ শুনতে হয়। সবাই নাকি তার প্রতি অখুশি। কি করবে ভেবে পায়না। সারাজীবনের স্বপ্নকে ছাড়তেও পারেনা, স্বামীকে প্রচণ্ড ভালবাসে কিন্তু তাকে বোঝাতেও পারেনা। ধুকে ধুকে এগিয়ে যায় এর মধ্যে। বলে একটু অপেক্ষা করতে। পি এইচ ডি শেষ হলেই ও দেশে ফিরে যাবে। এখানে এত ভাল চাকরির অফার সব ফিরিয়ে দেবে, মনে মনে ভাবে। স্বামীকেও তাই বলে, কিন্তু তারপরেও কেউ বোঝেনা। একটাই শুধু নালিশ সবার। এ বউ তো বউ এর মত বউ নয়।
"এ কেমন মেয়ে বিয়ে করালাম!! এতো বউ না, বউ এর কোন কাজও করে না, ছেলের সাথেই থাকতে পারছে না। কবে না কবে ফিরবে, ততদিন তাদের ছেলে কীভাবে থাকবে!!
"সবাই বউ কই জানতে চায়, কয়দিন পিএইচডির কথা বলবে! আর কেউ সংসার করে না নাকি!"
"বিয়ের পর স্বামী, শশুরবাড়িই না একটা মেয়ের সব, দূর বিদেশে অংকের মত ছাইপাঁশ নিয়ে কেমন করে এই মেয়ে পড়ে আছে!! মেয়ে মানুষের বিয়ের পর সংসারই তো সব!!" ইত্যাদি ইত্যাদি।
অথচ এই একই ঘটনা যদি তার স্বামীর সাথে হত, অর্থাৎ ছেলেটি বছরের পর বছর বিদেশে পরে থাকত, কাজে বা অকাজে, কেউ ভ্রূক্ষেপও করত না। আর যদি ছেলে পি এইচ ডিই করত তবে তো ছেলের আত্মীয় স্বজনের মাটিতে পা পড়ত না, ৩ ফিট উঁচু দিয়ে হাঁটত। তাদের এমন ছেলের সাথে এই মেয়ের বিয়ে হয়েছে এটাই সেই মেয়ের সাত জন্মের সৌভাগ্য এটাই দিনের মধ্যে ৭০০ বার বোঝাত। তবে এই একই ঘটনা এই মেয়েটির জন্য সম্পূর্ণ উল্টো ফলাফল কেন বয়ে আনল?

তার অর্থ কি এই যে মেয়েদের আসলেই স্বপ্ন দেখতে নেই? তাই যদি হয় তবে তো ১৬, ১৮ তেই তাদের ধরে ধরে বিয়ে দিয়ে দেয়া উচিৎ। না, আসলে জন্মাবার পরেই বিয়ে দিয়ে দেয়া উচিৎ। মায়ের বুকের দুধ খাওয়া শেষ হলেই শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়া উচিৎ। আমাদের নানি দাদিরা তাদের স্বামীর সংসার ছাড়া কিছু বুঝত না কারন তাদের বিয়ে হত ৭ বছর ৮ বছর বয়সে। স্বামীকেই সারাজীবন চিনত, যাই করত নাই করত, মাথা পেতে নিত। আর কোন অবলম্বন ছিল না তাদের। এখনও সেটাই করা উচিৎ। কারন স্বপ্ন দেখতে দিলে তা মুক্ত আকাশে উড়তে উড়তে কোন সীমায় ঠেকবে তার যেমন নির্দিষ্ট সীমা নেই তাই এরচেয়ে এদের স্বপ্ন দেখার আগেই চোখ নষ্ট করে দেয়া উচিৎ। স্বপ্ন দেখে ভাঙ্গার চেয়ে না দেখা ভাল।

এদেশের মেয়েরা কাঠের মোমবাতির মত। আলোকিত করার জন্য নিজেকে জ্বালিয়ে দেয়। গলে গলে পরে না। পুড়ে চাই হয়ে যায়। কেউ সেই ছাই চোখে দেখে না। শুধু আলোটাই দেখে। যন্ত্রণা কেমন হয় তা কেউ দেখে না। আর যদি কোন মেয়ে স্বপ্ন দেখে, নিজেকে রঙ মাখা সং সাজা পুতুল না ভেবে মানুষ ভাবতে চায়, নিজের যোগ্যতা দিয়ে বিশ্বজয় করতে চায় তবে তাদেরই আছে সেই অধিকার, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার, ভেঙ্গে দেয়ার এই নষ্ট সমাজকে, অমানুষদের অমানবিক রীতিনীতিকে।

(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)
-ডাঃ নাজিয়া হক অনি
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৪
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×