টেড বান্ডি____ একজন ল্য স্টুডেন্ট, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিডন্যাপার, রেপিস্ট, নেক্রোফাইল, সিরিয়াল কিলার। ফিকশনাল কিছুনা একেবারে জ্বলৎজ্যান্ত হেঁটে-চলা ব্যক্তি হিসেবেই উনার অস্তিত্ব ছিল। সময়কাল ৭০-এর দশক, আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমা প্যাসিফিক অঞ্চল ওয়াশিংটন, উটাহ, অরেগন, কলোরাডো, ফ্লোরিডা তে একের পর এক রক্তের চিহ্ন রেখে যাছে কেউ একজন। যুবতী মেয়ে সহ কিশোরীদের নিখোঁজ, গুম-হত্যাতে বিভিন্ন মহলে আতংকের স্রোত বইছে। কে এই খুনি? বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, সে টেড যাকে বর্ণনা করতে গিয়ে লেখকেরা শান্ত-সৌম্য, ধীর-স্থির, সৌন্দর্য্যবান কিন্তু ঠাণ্ডা মাথার পিশাচ হিসেবেই উল্লেখ করেন। সিরিয়াল কিলারদের একটা বড় অংশ কিলিং এর আস্বাদ নেই শিকারের উপর নিজস্ব কন্ট্রোলের মধ্য দিয়ে, সেই একই ক্ষেত্রে টেড ছিল ওয়ান এন্ড অনলি। উনার সাইকোলজি বলতে গিয়ে এমনটাই চিহ্নিত করেন সমসাময়িক চিকিৎসকেরা। সিরিয়াল কিলার ট্যাগ পাওয়া, মতবিরোধে, প্রথম ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয় টেড।
মুভির গল্প এই টেডকে নিয়ে, টাইমলাইন শুরু হয় ৭৪-থেকে। ওয়াশিংটনের সিয়াটলে টেডের প্রথম শিকার হিসেবে দেখানো হয়। মুভির প্লট হিসেবে টেড এর এই সময় থেকে শুরু করে জীবনের শেষ অবস্থা পর্যন্ত ফলো করা হয়। এই দীর্ঘ্য ব্যপ্তিতে ফোকাস করা হয় আসলে ওর লাইম লাইটে আসা প্রধান সংখ্যক খুনগুলোকে।
চরিত্র চিত্রায়নে টেডের ভূমিকায় থাকা মাইকেল রেইলি বার্ক শৈল্পিক এই মনস্টারের ছায়া ধরে রাখার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছে। টেডের প্রেমিকা হিসেবে ব্যোটি ব্লিস সাদামাটা যে অবয়ব ফুটে উঠবার কথা তা যথার্থভাবে করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে আর কোন চরিত্র নেই মুভিতে আলোচনা করবার মত।
সত্য ঘটনা ও মুভির সাথে তুলনা দিতে গেলে, যতটুকু দেখানোর চেষ্টা করেছে বেশ ভাল হয়েছে। কিন্তু এই সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে যে সময়ের ব্যপ্তি তাতে এটা যৎসামান্য কাজ বৈ আর কিছু না। প্লটের মধ্যে কিছু ছিদ্র আছে, সত্য ঘটনা অবলম্বন করলেও পরিবর্তন আনা যাবেনা এর পক্ষপাতি আমি না তবে তা যদি মুভির ইমেজ নষ্ট করে দেই তাহলে দ্বিমত আছে। এখানে একাধিক দৃশ্যে এমনটা করা হয়েছে। খোলামেলা জায়গায়, রাস্তাভর্তি মানুষের সামনে দিয়ে টেড তার শিকারকে একটা কাপড়ে মুড়ে নিয়ে যাবে এটা মানানসই না, কেননা বাস্তবের টেড তার প্রায় প্রতিটা সাক্ষাৎকারে বলেছে সে প্রত্যক্ষদর্শীদের ব্যাপারে সবসময় সজাগ ছিল। কখনও কোন রিস্ক নেই নি তার কোন এটেপ্টে। খোলামেলা রাস্তায় বা পার্কে বা বীচেই সে তার শিকার চ্যুজ করলেও এটেম্পট ছিল সাধারণ উইম্যানাইজারদের মত। বাস্তবিক টেডের গাড়ি ছিল ট্যান দেওয়া তামাটে রঙ্গের, মুভিতে সেটাকে কটকটে হলুদ কেন চ্যুজ করা হল বুঝলাম না। গল্পের কোন প্রয়োজনে উনার পড়াশোনার ব্যাপারে পরিবর্তন আনা হল বুঝতে পারিনি। এমন কয়েকটা মেজর চোখে লাগার মতন দৃশ্য দেখা যাবে তবে স্পয়লার ফ্রি রাখবার চেষ্টার কারনে তা নিয়ে আলোচনা করতেছিনা।
মুভি শুরু হবার প্রথম মিনিট থেকেই যে আবহ সংগীত ব্যবহার করা হয় আমার কাছে তা ভাল লেগেছে। মোটেও কোন সাসপেন্স মিশ্রিত ট্যাক না কিন্তু টেডের উপস্থাপনের সাথে যথেষ্ট মানানসই এবং এখান থেকেই মুভিতে মনোযোগ আকর্ষণের শুরু। ডাইরেকশন নিয়ে তেমন কিছু বলবার নেই যেহেতু বুঝতেই পারতেছি তা ভুলে মিশ্রিত কিন্তু আমার মতে সবাই টেড এর ব্যাপারে আগে থেকেই জানত এমনটা ভাববার কোন কারন নেই। মুভিটার মধ্য দিয়ে উনাকে বেশ ভালভাবে তুলে আনা হয়েছে এবং সেটা আমার মতে দর্শনীয়। শুরুতেই ওর নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী চুরি করা দেখানো হয়, মজা পেয়েছি তা দেখে।
সবমিলিয়ে মুভিটা জানবার জন্য একটা মাধ্যম হিসেবে বেশ ভাল কাজ করেছে বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। তবে মুভি দেখবার পরে সম্পূর্ন ব্যাপারটা নিয়ে গভীর চিত্র জানলে বা আগে থেকে টেড এর ব্যাপারে ভাল ধারণা থাকলে হয়ত খুঁতখুঁতে নজরে মুভিটা ভাল নাও লাগতে পারে। আমার ভাল লাগছে যদিও।
ডাউনলোড লিঙ্ক =>
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫৭