মানুষের কাজের মধ্যে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যে, কোনটা ভুল কোনটা সঠিক যাচাই করা একধরণের দূরহ কাজ। একটা নির্দিষ্ট পরিস্থিতে, নির্দিষ্ট সময়ে যে কাজ সহজ স্বাভাবিক সঠিক তাইই প্রকারান্তে ভুল কাজ বলে প্রমাণ হতেই পারে। স্লিং ব্লেড মুভিটার গল্প থেকে এমন কিছুই নুতন করে উপলব্ধি হল আমার।
কার্ল, মানসিক সমস্যাগ্রস্থ ছেলেটার জীবন বলতে ঐ বাসার সাথে শেডের মধ্যেকার চারদেয়ালের জীবন। যেখানে আলো-অন্ধকারের অন্যরকম নিজস্ব রূপ দেখে সে। এমন কোন আহামরি পরিবারের ছেলে না সে, বাবা কোনরকমে দিন আনে দিন খায় ধরনের রোজগার করে। মা খুবই ভালোবাসে তাঁকে, যতটুকু সম্ভব যত্ন করে। কার্ল ও তার মাকে অনেক ভালোবাসে, বাইবেল পড়তে শেখায় তার মা তাঁকে এজন্যও অনেক পছন্দ করে মাকে। সেই আদরের, ভালোবাসার মাকেই খুন করে কার্ল। কেন? তার মানসিক সমস্যার কোন হাত আছে কি এখানে? নাকি স্বাভাবিক যেকোন মানুষই এমন কাজ করবে কার্লের মতো পরিস্থিতে? ____ ফলাফল হিসেবে মানসিক হাসপাতালের তত্বাবধানে রাখা হয় কার্ল কে। বছর গড়িয়ে সেই ছেলেটা এখন মধ্যবয়সীতে পরিণত হয়েছে, মেয়াদ ফুরিয়েছে তার হাসপাতালে থাকবার। বাইরের দুনিয়াতে তাঁকে স্বাধীন মানুষ হিসেবে বের হয়ে আসতে হবে এখন, সামাজিক জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে তাঁকে এখন। পারবে কি কার্ল? ____ বাইরের ব্যস্ত দুনিয়ায় বন্ধুত্ব হল কিশোর ফ্রাঙ্কের সাথে, বয়সের বাঁধা যেখানে তুচ্ছ হয়ে গেছে। পিতৃহীন নিঃসঙ্গ ফ্রাঙ্ক খুঁজতেছে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বকে, এদিকে কার্ল পেয়ে গেছে তার নিজের কিশোর স্বত্বাকে। ____ বন্ধুত্বের এই বন্ধন কি দীর্ঘস্থায়ী হবে? মানসিক সমস্যাগ্রস্থ এই কার্ল কি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে সভ্য সমাজের সাথে? বিতর্কিত, সংশপূর্ন জায়গা থেকে উঠে আসা কার্ল কীভাবে সমাজের চোখে একজন নায়ক? সবশেষে প্রশ্ন ____ মানবিক দিক থেকে সঠিক কাজ করবার জন্য কি মানসিক রোগী হওয়াটাই জরুরী এই সমাজ ব্যবস্থাতে ? ____ আমার নিজস্ব কোন উত্তর নেই।
একাধারে মুভিটার গল্প, পরিচালনা ও কার্লের চরিত্রে আছেন বিলি বব থর্নটন। মানসিক রোগী ধরনের থর্নটনের আরেকটা চরিত্র দেখেছি এ সিম্পল প্ল্যান নামের মুভিতেও। দুই জায়গাতেই সমানভাবে নিজের সর্বোচ্চ দেবার চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়েছে আমার কাছে তবে তুলনা দিতে গেলে কার্ল চরিত্রটা আমার কাছে অনেক বেশী গভীর মনে হয়েছে, থর্নটনের চূড়ান্ত অবদান এটা। মুভিতে কোন আলাদা করে বলবার মতন বা শৈল্পিক, সাহিত্যিক ধরনের কোন সংলাপ নেই। একেবারেই কথ্য ভাষার এই সংলাপেও যেন অন্যরকমের আবেদন পেয়েছি মনে হয়েছে, দাগ কেটে গেছে থর্নটনের সংলাপগুলো। আবহসঙ্গীতেও নজরকাড়া ছাপ, ভালো লেগেছে খুবই। পার্শ্বচরিত্রের মধ্যে আলাদা করে বলবার মতন শুধু ফ্র্যাঙ্কের চরিত্রে থাকা লুকাস ব্ল্যাকের কথাই মনে হচ্ছে বারেবার। শূন্যতা, একাকীত্ব, নিজের বদ্ধ হৃদয়ের মধ্যে বাস করা কিশোরের এই চিত্রায়ন দারুণ ভালো লেগেছে। কিছুটা খেই হারানো ব্যাপার মনে হয়েছে যেটা তাহলো কার্লের একটা বিশেষ গুণকে একেবারেই পর্দায় দেখানো হয় না। কার্লের বিশেষ গুণটা কি? ___ সে ছোট ছোট যন্ত্র, ইঞ্জিন একেবারে যাদুকরের মতন সারাই করতে পারে এমনই বলা হয়েছে মূল গল্পে, কয়েকজনের সংলাপেও তা উঠে এসেছে। কিন্তু এটার চিত্রায়ন দেখিনি এক জায়গাতেও, হাসপাতাল থেকে বের হবার পরে কার্ল চাকরি নেই একটা সারাইখানাতে কিন্তু এখানে তাঁকে সত্যিকার অর্থে কাজ করতে একবারও দেখিনি। জানিনা কেন থর্নটন এগুলো দেখানোর প্রয়োজন বোধ করেননি কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে যে এগুলোর জন্য অন্তত একটা সিকোয়েন্স হলেও দেখানো দরকার ছিল।
সামগ্রিক দিক থেকে, মুভিটা আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে, থর্নটনের দূর্দান্ত অভিনয়ে আমি মুগ্ধ।
ডাউনলোড লিংক ____
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৭