somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশে গ্রন্থ মেলার বিড়ি চত্ত্বর, বাংলা সাহিত্য কার দখলে এবং কালো তালিকাভূক্ত সামহোয়্যার ইন ব্লগ!

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বই মেলায় বেশ কিছু চত্ত্বর রয়েছে! শিশু চত্ত্বর, সালাম চত্ত্বর ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সকল চত্ত্বরের মধ্যে বেশ গুরুত্বপূর্ন একটা নামহীন চত্ত্বর রয়েছে, মেট্রো বেকার্সের পাশে যেটি কিনা অনেকের ভাষায় বিড়ি চত্ত্বর নামেই পরিচিত। বিড়ি চত্ত্বরটা মূলত নিত্য বই মেলায় আসা শত শত লেখক, কবি, সাহিত্যিক, প্রকাশক আর প্রচ্ছকারেদের মিলন মেলা। বই বিক্রি কিংবা নিয়ম করে বইয়ে অটোগ্রাফ দেবার ফাঁকে সুযোগ বুঝে এসব লেখক, প্রকাশক কিংবা প্রচ্ছদকারগন হুট করে স্টল হতে হারিয়ে গিয়ে চলে আসেন এই বিড়ি চত্ত্বরটায়। এটা একটা মিলনমেলার ভেতরে যেন আরেকটা মিলনমেলা।

প্রশাসনিক তুমুল কড়াকড়ির ভেতরে বই মেলার ভেতরে কোন বিড়ি-সিগারেট কিংবা পানের দোকান তো নেই-ই এমনকি মেলায় প্রবেশের সময়ও ব্যাক্তির সাথে থাকা বিড়ি সিগারেটগুলোও পুলিশ ভাইগন নির্দ্বিধায় নিষিদ্ধ ঘোষনা করলেও বিড়ি চত্ত্বরে অনবরত বিড়ির ধোয়া ওঠে চলে। বিড়ি চত্ত্বরে তিনটা কফির দোকান রয়েছে যেখানে বেশ সস্তায় এক কাপ কফি আপনি খেয়ে নিতে পারেন কিন্তু সমস্যাটা বাঁধে তখনই যখন আপনি দেখেন আপনার কাছে কোন সিগারেট নেই এমনকি কেউ সিগারেট বিক্রিও করছেনা। দু একজনকে আপনি হয়তো জিজ্ঞেসও করে বসেছেন, ভাই সিগারেটের দোকানটা কোথায় এখানে? কিন্তু তার উত্তরে ভীষন হতাশ হতে খুব একটা সময় লাগেনা আপনার, তখন কফির কাপ হাতে করে আপনার মধ্যে তীব্র একটা অপরাধবোধ কাজ করা শুরু করে এই ভেবে যে, কেনো আপনি পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে অন্তত একটা সিগারেট সাথে করে নিয়ে আসলেন না! আপনি সামান্য ইদিক-উদিক তাকান, পরিচিত কাউকে পাওয়া যায় কিনা! যদি পেয়ে যান তবে আপনার ভাগ্য নেহায়েত মন্দ নয়! আপনি তার কাছে গিয়ে দেখেন একটা মাত্র বিড়ি জ্বলছে তার হাতে আর সেই বিড়ির দিকে বিড়ির জ্বলজ্বল আগুনের মত চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আরো জনা ছয়েক পিপাসার্ত মানুষ!

যাই হোক, প্রথম দিন বই মেলায় সিগারেট নিয়ে ঢুকতে আমি না পারলেও পরবর্তীতে এই ভুল আমার একবারো হয় নাই। মানিব্যাগের চিপায়-চাপায়, ব্যাগের ভেতরে, প্রতি পকেটে একটা করে সিগারেট লুকিয়ে এভাবে ৫/৭ টা সিগারেট নিয়ে আমি রোজ-ই ঢুকি। আর কতক্ষন পর পর হুট করে হারিয়ে গিয়ে বিড়ি চত্ত্বরে হাজিরা দিয়ে আসি। তবে আমার আজকের কথন বিড়ি চত্ত্বরকে ঘিরে নয়, বরং কিছু কড়া কথা বলতে এসেছি।

বিড়ি চত্ত্বরে একজন বন্ধু প্রতিম মানুষ (প্রকাশক গোত্রীয়) তার স্টলে আমন্ত্রন জানালে আমিও সেই নিমন্ত্রন প্রত্যাখান করতে পারি নাই। গিয়ে দেখি তার স্টলে হু হু করে দেদারসে একজন উঠতি লেখকের বই বিক্রি হচ্ছে! উঠতি লেখক না বলে তাকে একজন অনলাইন সেলিব্রিটি বলাই শ্রেয়। নিজে যেহেতু আমি একজন লেখক, সেহেতু বিষয়টা আমার জন্য বেশ ঈর্ষাজনক হওয়াই উচিত। স্টলের ভেতরে একটা চেয়ারে বসে আমি সেই সেলিব্রিটি লেখকের বইটি হাতে নিয়ে কিয়ৎক্ষন পড়লাম। বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, হোয়াট এ ফাক শিট ইট ইজ! আর সেই ফাক শিট নেবার জন্য তরুন সম্প্রদায় হৈ-হৈ করে রীতিমত লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছে। পহেলা ফাল্গুনের দিনও অন্য একজন রেডিও সেলিব্রেটির বই উঠতি কিশোরীদের লাইনে দাঁড়িয়ে আমি কিনতে দেখেছি, যদিও বইটি পড়বার সৌভাগ্য আমার এখনো হয় নাই তথাপি বইটার নাম আমার কাছে কিছুটা যৌন-উদ্দীপক ঠেকেছে।

বই মেলাতে এবার প্রায় ১২/১৩ হাজার নতুন বই এসেছে। পাঠকের পক্ষে সবগুলো বইয়ের মান যাচাই করা সম্ভব নয় কিন্তু যেসব লেখক ধুনফুন লিখছেন এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়ে বিশাল একটা জনগোষ্ঠিকে সেই বই কেনাচ্ছেন তারা কি তাদের বিবেককে একবারো প্রশ্ন করছেন, আপনার এই বইয়ে সমাজে এবং বাংলা সাহিত্যে কি কন্ট্রিবিউট করছে? এতগুলো মানুষের সাথে আপনি যে বই বিক্রির ব্যবসাটা করছেন, সেটি কতটা যৌক্তিক?

বাংলা সাহিত্যের বারোটা যে শুধু এসব বাল-ছাল লেখকই বাজাচ্ছেন বিষয়টা তেমন নয়! বাংলা সাহিত্যের বারোটা বাজানো হচ্ছে এখন প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে। কিছুদিন আগে হাজারো পর্ন সাইট বন্ধের সাথে সাথে সামহোয়্যার ইন ব্লগ ও বন্ধ করে দেয়া হল এবং এখন পর্যন্ত এর কোন সূরাহা হয় নাই। আমি ধরেই নিচ্ছি এটা বিটিআরসি'র একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল।

পূর্ববর্তী এসব ভূলের কারনেই আমরা আজ একটা ফাকিং হুজুগে ইয়ুথ জেনারেশন পেয়েছি যাদের সাহিত্যের সাথে সেভাবে কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা বই মেলায় আসে, সেলফি খিচে তারপর ফেসবুকে পোস্ট দেয়। এদের মধ্যে যারা বই কেনে তারা ভুল মানুষের ভুল বই নিয়ে ঘরে ফেরে।

আমি এখানে আমার নজরবন্দী'র প্রচার প্রচারনা করতে আসি নাই। শুধু বলতে এসেছি, সামহোয়্যার ইন ব্লগ আমাকে প্রথমে ব্লগার এবং পরবর্তীতে একজন লেখক বানিয়েছে। এবং অবশ্যই আমার লেখাগুলো শুধু বাংলা সাহিত্যে নয় বরং সমাজেও কন্ট্রিবিউট করে। সাহিত্য চর্চার স্বাধীন, মুক্ত এবং চমৎকার এই প্ল্যাটফর্মটাকে কালো তালিকাভুক্ত করবার তীব্র নিন্দা জানিয়ে গেলাম। এবং আশা করছি সরকার বাহাদুর অচিরেই এই সমস্যার আশু প্রতিকার করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:১০
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×